“নিগোসিয়েশন”—– শব্দটি রাজ্যের অপরাধ জগতের গোপন বাণিজ্যের এক পোশাকি নাম।
১৯৯৩ থেকে ২০১৮।বাম জামানার এই ২৫ বছর নিগোসিয়েশন নামক শব্দটি ধারাবাহিক ভাবে রক্ত শোষণ করেছে নিয়মিত। বহু মা হারিয়েছেন তার আদরের পুত্রকে।স্ত্রী হারিয়েছেন তার স্বামীকে এবং সন্তানরা হারিয়েছে তাদের বাবাকে।অর্থাৎ নিগোসিয়েশন বাণিজ্য শহরের বুকে কেড়ে নিয়েছে একের পর এক তর তাজা যুবককে নিকেশ করেছে নিয়মিত।
স্বপন দাস থেকে সেলিম মিয়া,এবং রতন মিয়া থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষ প্রত্যেকেই নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের বলি।জন রোষে শহর ছাড়তে হয়েছিল শহরের নেতাজি চৌমুহনী স্থিত পূর্ত দপ্তরের নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের মুকুট হীন সম্রাট টিঙ্কু লোধকে।রক্ত ক্ষয়ী ঘটনা ও আগ্নেয়াস্ত্র’র আস্ফালনের কারণেই বন্ধ হয়েছিল শহর দক্ষিনের মধুর ভাণ্ড
ওএনজিসি’র নিগোসিয়েশন বাণিজ্য।
শহরে নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের যুপকাষ্ঠে পড়ে একের পর এক নিধন হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত টনক নরেছিলো তদানীন্তন বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মানিক সরকারের। ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর দিলীপ ঘোষ হত্যাকাণ্ডের পর বাম প্রশাসন রীতিমত নিগোসিয়েশন ব্যবসা বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল।তবে এই উদ্যোগ যথেষ্ঠ ছিল না।তার আগেই নিগোসিয়েশন ব্যবসা কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যের অপরাধ জগতে আবির্ভাব হয়েছিল ‘অর্গানাইজড ক্রাইম।’অর্থাৎ বামেদের হাত ধরেই, যে রাজ্যের অপরাধ জগতে সংঘবদ্ধ অপরাধ নতুন মাত্রা পেয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।নিগোসিয়েশন বাণিজ্য নিয়ে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ক্রাইম অফ হিস্টোরির লেখ চিত্রে নজর রাখলেই ফুটে ওঠে ভয়ানক চিত্র।
২০১৮ সালে রাজ্যের রাজনৈতিক রাজ দণ্ডের
পালা বদল হয়েছে।প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের হাত থেকে রাজদণ্ড গিয়েছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের হাতে।বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী হয়েই বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিগোসিয়েশন বাণিজ্য বন্ধ করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন।তারপরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর শুভ্রবস্ত্র-এ কালির দাগ ফেলতে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে নিগোসিয়েশন কারবারিরা।শুধু কি তাই বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের অফিসের অন্দর মহলের অলিন্দে বসেই নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের চূড়ান্ত রূপ রেখা তৈরি করছে কারবারের মাস্টার মাইন্ডরা।
শহরের অপরাধ জগতের অন্দর মহলের খবর অনুযায়ী, রাজধানীর নেতাজিচৌমুহনীস্থিত পূর্ত দপ্তরের দখল নিয়েছে নব্য কারবারিরা।গোটা কারবার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শহরের বর্ডার গোল চক্কর এলাকার যুবক শাহ আলমকে। এই মুহূর্তে শাহ আলম নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের জটিল অঙ্ক সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে ওয়াকিবহাল নয়।এই সহজ বিষয়টি উপলদ্ধি করেছেন রাম জামানার নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের পিন কিং-রা।তাই তারা নিগোসিয়েশন
বাণিজ্যকে সুনিয়ন্ত্রণ ভাবে পরিচালনা করার জন্য বাম জামানার এলিট ক্লাসের দুই নিগোসিয়েশন কারবারীকে বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা করেছে।যাদের বিরুদ্ধে একাধিক খুন,অপহরণ ও তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়।মূলত অদৃশ্যে থাকা নিগোসিয়েশন কারবারের মাস্টার মাইন্ড শাহ আলম ও বাম জামানার দুই দাগি অপরাধীকে দিয়েই নাড়ছেন সমস্ত কল কাঠি।.
নিগোসিয়েশন কারবারের প্রথম উপদেষ্টা একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবক।যাকে বাম জামানাতে শহরের ভট্টপুকুর এলাকা থেকে বাড়ি ছাড়া করেছিল উত্তেজিত জনতা।দ্বিতীয় জন পশ্চিম প্রতাপগড়ের সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের যুবক।তার বিরুদ্ধেও খুন,অপহরণ ও অস্ত্র কারবারের অভিযোগ রয়েছে।
পূর্ত দপ্তরের খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নিগোসিয়েশন কারবারের নতুন কমিটি দশটি কাজের নিগোসিয়েশন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে।দশটি কাজের মূল্য পাঁচ কোটি টাকার অধিক।অভিযোগ,দুই উপদেষ্টা বাম জামানার মতোই ঠিকাদারদের উপর ভয় ভীতি প্রদর্শন করা শুরু করে দিয়েছে। নির্মাণ কাজের অন লাইন ড্রপিং হলেও নিস্তার পাচ্ছেন না ঠিকাদাররা।সম্প্রতি কাজ বন্টন নিয়ে কয়েক জন ঠিকাদারের সঙ্গে ঝামেলাও হয়েছে কারবারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে।অভিযোগ,কারবারীদের পক্ষ থেকেও ঠিকাদারদের স্পস্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘটনা পুলিশকে জানালে তারা নিশ্চিত ভাব হইবেন নিকেশ ।স্বাভাবিক কারণেই বাম জামানার ২৫বছরের ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে ঠিকাদারের কাছে। প্রাণ ভয়ে ঠিকাদাররাও প্রতিনিয়ত জব করছে ইস্ট নাম।