Site icon জনতার মশাল

সাংবিধানিক সমাধান:
খ্রিস্টান ধর্ম ও হিন্দু ভোট


ডেস্ক রিপোর্টার, ১৬মে।।
      রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তিপ্রামথার দাবি মেনে কেন্দ্রিয় সরকার কি জনজাতি উন্নয়নের স্বার্থে নিয়োগ করবে ইন্টারলোকেটর? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পস্ট নয়। গত ২৭মার্চ তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোরকে ইন্টারলোকেটর নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ইন্টারলোকেটর নিয়ে নিশ্চুপ কেন্দ্রীয় সরকার তথা দেশ ও রাজ্যের শাসক দল বিজেপি। পুরো বিষয় এখন কেন্দ্রীয় সরকারের কোর্টে। এই  মুহুর্তে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোরও।যদিও তিনি অসুস্থ।চিকিৎসাধীন আছেন সিঙ্গাপুরে।


বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার কেন তিপ্রামথার সঙ্গে সাংবিধানিক সমাধানের পথে হাঁটতে চাইছে না?তার প্রধান কারণ দুইটি। বলছেন রাজনীতিকরা।


*প্রথমত: পাহাড়ে ধর্মান্তকরণ
___________________________
         রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, তিপ্রামথার ৮০ শতাংশ নেতা – কর্মী – সমর্থক খ্রিস্টান। বাদবাকি ২০ শতাংশ হিন্দু। দলের সর্বময় কর্তা প্রদ্যুৎ কিশোর নিজেও একজন হিন্দু। তারপরও এই মুহূর্তে পাহাড়ে প্রবল ভাবে বাড়ছে ধর্মান্তকরনের হিড়িক। হিন্দু জনজাতিরা ধারাবাহিক ভাবেই হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মের দিকে।। খ্রিষ্টান মিশনারীর লোকজন নানান প্রলোভন দিয়ে হিন্দু জনজাতিদের খিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। পাহাড়ের গরীব জনজাতিরা সুযোগ সুবিধার জন্য নিজ ধর্ম ত্যাগ করে গ্রহণ করছে খ্রিস্টান ধর্ম। তিপ্রামথাকে দাবি মেনে সাংবিধানিক সমাধানের নামে নানান ভাবে এডিসির ক্ষমতা বৃদ্ধি করলে আক্ষরিক অর্থে পাহাড়ে আরোও শক্তিশালী হয়ে উঠবে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারকরা। তখন এডিসির  প্রশাসকরা বকলমে খ্রিস্টান ধর্মের আরোও বেশি করে প্রচার ও প্রসারের জন্য দুই হাত খুলে কাজ করবে।কারণ তিপ্রামথার সিংহভাগ অংশ খ্রিস্টান ধর্মের পৃষ্ঠ পোশাক। আর ধর্মের ইস্যুতে তারা প্রদ্যুৎ কিশোরের বক্তব্যকেও মান্যতা দেয় না। প্রয়োজনে তারা প্রদ্যুৎ কিশোরের সঙ্গ ছাড়বে, কিন্তু ধর্ম ছাড়বে না। যদি সাংবিধানিক সমাধানের মাধ্যমে এডিসিকে অধিক ক্ষমতা দেয়,তাহলে বিজেপি নিজেদের পায়েই কুড়ুল মারবে। বলেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


পাহাড়ে হিন্দু ধর্মের পরিবর্তে  ডাল পালা মেলবে খ্রিস্টান ধর্ম। এবং মন্দিরের পরিবর্তে গড়ে উঠবে গীর্জা। এই সরকারী অর্থের জোরে পাহাড়ে হিন্দুদের কাজ করা শান্তিকালী আশ্রমও বিপাকে পড়ে যাবে। বিফলে যেতে পারে শান্তিকালী আশ্রমের প্রয়াস। খ্রিষ্টান ধর্ম পাহাড়ে গায়ে বেড়ে উঠুক তা কখনো চাইবে না হিন্দুবাদী দল বিজেপি।আর এখানে তিপ্রামথার সাংবিধানিক সমাধান ইস্যুতে লাগছে বড়সর ধাক্কা।তাই পাহাড়ে আগামী দিনের হিন্দু ধর্মের সংকটের কথা মাথায় রেখে প্রদ্যুৎকে ঝুলিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।


*দ্বিতীয়ত: বাঙালি ভোট ব্যাংক
___________________________
    ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে  বিজেপিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর মূল কারিগর বাঙালি ভোট ব্যাংক।বাঙালিরা বিজেপিকে দিয়েছে ২৬টি আসন। এবং এডিসি থেকে পেয়েছে ৬টি আসন।তবে এই আসনের প্রত্যেকটিতে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বাঙালি ভোটার রয়েছে।ভোটের এই সমীকরণ থেকে স্পস্ট  বাঙালি ভোট যদি বিজেপির দিকে বাক না নিতো, তাহলে
হিসেব অন্য রকম হতে পারতো। তাছাড়া জনজাতি ভোট পুরোপুরি ভাবে মেরুকরণ হয়ে গেছে।আগামী দিনেও জনজাতি ভোটের উপর বিজেপি খুব বেশি ভরসা করতে পারবে না।একই অবস্থা কমিউনিস্টদের।তাদেরও মুখ রক্ষা করেছে বাঙালিরাই। বামেরা ১১টি আসন পেয়েছে বাঙালিদের কারণেই।  স্বাভাবিক ভাবেই এই মুহূর্তে প্রদ্যুৎ কিশোর ও তার দল তিপ্রামথাকে বেশী গুরুত্ব দিলে বেক বসবে বাঙালিরা।তখন বাঙালি ভোট ব্যাংকের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে বামেরা।এই বিষয়টি মাথায় রেখেছে বিজেপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।তাই বাঙালি ভোট ব্যাংক নিয়ে বিজেপি কোনো রকম রিস্ক নিতে চাইছে না।


রাজনীতিকদের যুক্তি, রাজ্যের পাহাড়ে খ্রিস্টান ধর্মের গতি রোধ,অন্যদিকে বাঙালি ভোট ব্যাংক সুরক্ষিত রাখার জন্যই বিজেপি তিপ্রামথার দাবি মেনে ইন্টারলোকেটর নিয়োগ করছে না। এবং সাংবিধানিক সমাধান ইস্যুতে প্রদ্যুৎকে আর বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে  তিপ্রামথার অবস্থান কি হয় এটাই দেখার বিষয়।

Exit mobile version