রাজ্যের ভয়াল করোনা পরিস্থিতি।রাজধানী সহ বিভিন্ন মহকুমা,জেলা কোনোটাই বাদ যায়নি করোনার ছোঁয়া থেকে।
রাজ্যের করোনার আগমন কাউর জন্য বিপদের হলেও কাউর জন্য অর্থ রোজগারের মেশিন। অবশ্যই রক্ষক নামক একাংশ খাকি উর্ধিধারীদেরই কাছে টাকার কল হয়ে উঠেছে করোনা।অথচ করোনা যুদ্ধেই তারাও প্রথম সারির সৈনিক।কিন্তু সৈনিকদের একাংশ এখন সর্বক্ষণ “জপ” করছে কারোনাকে ।শুধুমাত্র অতিরিক্ত অর্থ রোজগারের ধান্দায়।
‘করোনা পুলিশের টাকার কল’—- এই দৃশ্য দেখতে হলে চোখ রাখতে হবে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল দামছড়াতে। দামছড়ার সঙ্গে রয়েছে অসম ও মিজোরাম বর্ডার। স্বাভাবিক সময়ে দুই রাজ্য থেকে মানুষ নিয়মিত দামছড়া হয়ে রাজ্যে প্রবেশ করে। কাজকর্ম শেষ করে আবার তারা ফিরে যায়।রাজ্যের লোকজনও একই ভাবে কর্ম সূত্রে যায় অসম ও মিজোরামে।কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে চিত্রটা একটু পাল্টে গেছে।লাগু হয়েছে বিধি নিষেধ। তবে টু- পাইসের লোভে করোনার বিধি নিষেধকে পা দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে খোদ দামছড়া থানার পুলিশ। নেতৃত্বে থানার ওসি সাহেব অমল দেববর্মা।সঙ্গে অবশ্যই তার সেকেন্ড অফিসার মি.ডারলং।
নিয়ম অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতিতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ত্রিপুরার সঙ্গে থাকা অসম ও মিজোরাম সীমান্ত উন্মুক্ত থাকে।তারাপর বন্ধ হয়ে যায়।দামছড়া বাজারেই লংগাই নদীর উপর দশরথ সেতু।এই সেতু ভাগ করেছে ত্রিপুরা মিজোরামকে। সেতুর সঙ্গেই পুলিশের ড্রপগেট।তারপরও নির্দিষ্ট সময় পর এই সেতু দিয়ে ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তে আসা-যাওয়া করে সাধারণ মানুষ।তারা গাড়ী নিয়ে মিজোরাম থেকে দামছড়াতে আসে।আবার ত্রিপুরা থেকেও প্রবেশ করে মিজোরামে।নিয়ম অনুযায়ী, এই যাতায়াত অবৈধ। তবে কারা দেয় যান চলাচলের ছাড় পত্র? কেন দেয়?
একই অবস্থা অসম -ত্রিপুরা সীমান্তে।দামছড়াতে রাধপুর গ্রাম এবং অসমে বালি পিপলা গ্রাম।মাঝখানে রয়েছে অস্থায়ী গেট।এই সীমান্ত দিয়েও একই নিয়ম লাগু রয়েছে।প্রতিদিন বিকাল চারটার পর বন্ধ হয়ে যায় গেট।গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে পুলিশ।কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই অসম- ত্রিপুরা সীমান্তেও লাটে উঠে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।পুলিশের আঙ্গুলি হেলনেই গাড়ি দুই রাজ্যেই আসা যাওয়া করে।
সম্প্রতি রাতের আঁধারে ত্রিপুরা- অসম সীমান্তের গেট ভেঙে দেয় দুষ্কৃতীরা। তখন সীমান্তে ছিল না কোনো পুলিশ।অভিযোগ, দামছড়া থানা পুলিশের নির্দেশের দুষ্কৃতীরা সীমান্ত গেট ভেঙে দেয়।কেন না,রাতে গেটের সামনে পুলিশ থাকার কথা।কিন্তু পুলিশ না থাকতেই দুষ্কৃতীরা গেট ভাঙার সাহস পায়।এদিন রাতে কেন রাধাপুর, বালিপিপলা এলাকায় পুলিশ ছিলো না?
দামছড়া থানা সূত্রে খবর,এই ঘটনা সম্পর্কে আগাম জানতেন ওসি অমল দেববর্মা। তার সঙ্গে গোপন রফা হয়েই দুষ্কৃতীরা গেট ভেঙ্গেছে নিজেদের যাতায়াতের সুবিধার্থে।এই সমস্ত রুট মূলত নেশা কারবারের করিডোর। মাদক কারবারী কাছ থেকে মোটা অংকের কাঞ্চনমূল্য পেয়ে থাকে দামছড়া থানার পুলিশ। তাছাড়া রাতে ত্রিপুরা থেকে অসমে যাওয়া প্রতি গাড়ি অঘোষিত “টোল টেক্স” দিয়ে থাকে দেড় হাজার টাকা করে।একই ভাবে অসম থেকে ত্রিপুরাতে আসা গাড়িকেও দিতে হয় সম মূল্যের ভ্যাট।দাম ছাড়া থানার ওসি একই নিয়ম চালু করেছে ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তে।
দামছড়া থানার ওসি অমল দেববর্মার যে করোনাকে তার টাকার কল বানিয়ে নিয়েছেন, এই খবর বিলক্ষণ জানেন এসডিপিও সৌভিক দে।তিনি খবর পেয়ে সোমবার বিকালে আচমকা ছুটে যান ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তে।এস ডি পি ও’র চোখেই ধরা পড়ে পুলিশের সামনেই নির্দিষ্ট সময় পর দুই রাজ্য থেকে গাড়ি আসা-যাওয়া করছে।সেখানে করা হচ্ছে না করোনা টেস্ট।
ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তের দশরথ সেতুর সামনেই রয়েছে সি সি ক্যামেরা। এসডিপিও তথ্য,প্রমাণের জন্য নিয়ে গিয়েছেন সি সি ক্যামেরার ফুটেজ। খবর অনুযায়ী, এই সি সি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে স্পস্ট হয়েছে সীমান্তে গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কিভাবে টাকা নিচ্ছে দুই রাজ্যে আসা যাওয়া করা গাড়ি গুলি থেকে।তবে এসডিপিও শেষ পর্যন্ত ওসি অমল দেববর্মার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা ?প্রশ্ন উঠছে সেটা নিয়েও।নাকি এসডিপিও সৌভিক দেবও করোনার টাকার কলের মোহে আছন্ন হয়ে যান? প্রশ্ন দামছড়া মানুষের জনমনে।