* আইনের কুশীলবদের গোপন বৈঠক

* গোপন বৈঠকের আস্তানা সাগর মহল

* মামলার নিষ্পত্তিতে এক কোটি টাকার প্রস্তাব

* মূল অভিযুক্ত কালিকা জুয়েলারির ছেলে সুমিত চৌধুরী, জুয়েলারির মালিকের ভাগ্নে সুমিত বণিক,পুলিশ ইন্সপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস ও ওমর শরীফ।

ডেস্ক রিপোর্টার,১আগস্ট:
বর্তমান সময়ে রাজ্য রাজনীতির পারদ ঊর্ধ্বমুখী। রাজনীতির শতরঞ্জের অলিন্দে চলছে জোয়ার-ভাটার খেলা। রাজনীতির ব্যাপারী থেকে সাধারণ মানুষের চোখ এখন “খেলা হবে” ও “চলো ধরে রাখি” যুযুধান দুই শিবিরের দিকে। মানুষ এক পলকে জন্যও অন্যদিকে নজর দিতে নারাজ।
রাজনীতির বাইরে কোনো বড় “চুক্তি”র জন্য এটাই “প্রাইম টাইম।” কারণ এদিকে কাউর নজর থাকবে না। এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছেন আইনের লোকজন।
এমন গুঞ্জন আগরতলা-থেকে মেলাঘর পর্যন্ত।
তাহলে চুক্তিটা কি? যেহেতু আইনের লোকজন হলেন চুক্তির “মধ্যমনি” তাহলে বুঝতেই হবে হাই-প্রোফাইল কোনো মামলার বিষয় নিয়েই এক্সক্লুসিভ তথ্য তুলে ধরা হবে এই প্রতিবেদনে।
হ্যাঁ, হাই-প্রোফাইল মামলা তো বটেই।চার খুনিকে আইনী মারপ্যাঁচ থেকে বাঁচাতে গোল টেবিলে বৈঠক করেছেন আইনের কুশিলবরা।
অবশ্যই সাইড রোলে ছিলেন আরো কয়েকজন।

সাল-২০১৯
তারিখ— ২রা অগাস্ট
সময়—-রাত ১টা ৩০ মিনিট
স্থান——রাজধানীর জ্যাকসন গেট

এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে কোনো রোমহস্যকর ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছে?তা অবশ্যই পাঠকদের পক্ষে অনুমান করা অসুবিধা হবে না।
ঘটনার দুই বছর পূরণ হবে আগামী ২রা অগাস্ট।অর্থাৎ দুই বছর ধরে আদালতে চলতে থাকা চাঞ্চল্যকর মামলার এখনো কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।তারজন্য অবশ্যই অনেকাংশেই দায়ী ” মহামারী করোনা”।তবে অভিযুক্তরা আছে বিশালগড় সেন্ট্রাল জেলের চার দেওয়ালের ভিতর।তারজন্য অবশ্যই কমেনি তাদের অপরাধের লম্বা হাত।

২০১৯-র ২রা অগাস্ট রাতে শহরের জ্যাকসন গেটে নৃশংস ভাবে বিয়ারের বোতল দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো ব্যাংক ম্যানেজার “বোধিসত্ত্ব দাস”কে। ঘটনাস্থলে বোধিসত্ত্বের মৃত্যু না হলেও সর্বক্ষণ যমদূত তাকে ঘিরে রেখেছিলো আষ্টেপিষ্টে। রক্তাক্ত বোধিসত্ত্বকে জিবি হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কলকাতার একটি বেসরকারী হাসপাতালে।চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে ১৬ অগাস্ট কলকাতার বেসরকারী হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ব্যাংক ম্যানেজার বোধিসত্ত্ব দাস।

বোধিসত্ত্বর মৃত্যুর পর রাজধানীর পশ্চিম থানার পুলিশ খুনের মামলা(১৭২/১৯) রুজু করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২,৩০৭ ৩২৬/৩৪ ধারায় মামলা লিপিবদ্ধ করে অনুসন্ধানকারী পুলিশ।
মূল অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ওঠে আসে শহরের ডাক সাইটের জুয়েলারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান “কালিকা জুয়েলরি”র মালিকের ছেলে ও ভাগ্নের নাম। কালিকা জুয়েলারির মালিক শিশির কুমার চৌধুরী।তার ছেলে সুমিত চৌধুরী ওরফে বাবাই ও ভাগ্নে সুমিত বণিক ওরফে বাপী। তাদের সঙ্গে ছিলো পুলিশ ইন্সপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস ও শহরের দাগি অপরাধী ওমর শরীফ ওরফে শোয়েব। ঘটনাস্থল থেকে তদন্তকারী পুলিশ একটি বিলাস বহুল গাড়ি উদ্ধার করেছিলো।এই গাড়ির মালিকও কালিকা জুয়েলারির কর্ণধার শিশির কুমার চৌধুরী। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।তদানীন্তন পশ্চিম থানার ওসি দেবব্রত রায় ছিলেন মামলার প্রথম তদন্তকারী অফিসার।মামলার সিংহ-ভাগ তদন্ত শেষ করেছিলেন তিনি।এবং চার অভিযুক্তকে কাস্টেডিতে রেখে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু ভাগ্যের বিষয় দেবব্রত রায় মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেননি।তার আগেই প্রাক্তনমন্ত্রী বাদল চৌধুরীকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়াতে দেবব্রত রায়কে “নির্বাসনে” পাঠিয়ে দেয় দপ্তর। তখন ইন্সপেক্টর দেবব্রত রায় তৎকালীন পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুমনউল্লা কাজীকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।এই সময় দেবব্রত্য রায়ের পরিবর্তে পশ্চিম থানার ওসির দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইন্সপেক্টর সুব্রত চক্রবর্তী(রাজ্য পুলিশের স্ব-ঘোষিত সিঙ্গম)। আর তাতেই কেল্লা ফতে কালিকা জুয়েলারির মালিক শিশির কুমার চৌধুরীর।
অভিযোগ, স্বর্ণ ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলো পশ্চিম থানার ওসি সুব্রত চক্রবর্তী দরবারে।টাকার মূল্য নেহাৎ কম নয়।ত্রিশ লক্ষ টাকা। কারণ তার ছেলে সহ বাদবাকি তিন অভিযুক্তের জামিনের জন্য। পশ্চিম থানার প্রতিটি রুমের ওয়ালে কান পাতলে আজও শোনা যায় খুন হওয়া বোধিসত্ত্বের চিৎকার। বোধিসত্ত্ব পশ্চিম থানার তৎকালীন ওসি সুব্রত চক্রবর্তী ও তদন্তকারী অফিসার সুমন উল্লা কাজীকে যেন চিৎকার করে বলছিল, “অফিসার গো, তোমরা টাকা নিয়ো না।আমার খুনিদের উপযুক্ত বিচারের ব্যবস্থা কর।তাহলেই যেন শান্তি পাবে আমার ‘সন্তান হারা’ মায়ের বুক।” কিন্তু কোথায় নির্দয় পুলিশ আধিকারিক সুব্রত চক্রবর্তী ও তার জুনিয়র সুমন উল্লা কাজীর প্রাণ কাঁদলো না।বরং কালিকা জুয়েলারির মালিকের টাকার নোটের গন্ধে আছন্ন হয়ে গিয়েছিলেন খাকি-উর্দিওয়ালা সুব্রত- সুমন।
আদলতের তথ্য অনুযায়ী, অবশেষে মোটা অঙ্কের চুক্তির বিনিময়ে ২০২০-র ১৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম থানার পুলিশ আধিকারিক সুব্রত চক্রবর্তী ও সুমন উল্লা আইনের মারপ্যাঁচ গলে আদালত থেকে চার অভিযুক্তকে জামিন পাইয়ে দেন।অর্থাৎ কালিকা জুয়েলারি মালিক শিশির কুমার চৌধুরী তার ছেলে সুমিতকে বুকে জড়িয়ে ধারার ফুসরুত পেয়ে যান।আর অন্য দিকে বোধিসত্ত্বের অভাগী মা চেয়ে আছেন “দুষ্ট পুলিশের দিকে”।এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে ছেলের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রহর গুনছেন।

বোধিসত্ত্বর চার খুনি স্বর্ণ কারবারী শিশির কুমার চৌধুরীর ছেলে সুমিত চৌধুরী, ভাগ্নে সুমিত বণিক,পুলিশ ইন্সপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস ও দাগি অপরাধী ওমর শরীফ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার ঘটনায় রাজধানীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চাপে পড়ে যায় রাজ্য সরকার ও প্রশাসন।সুব্রত চক্রবর্তী ও সুমন উল্লার জন্য অরক্ষা প্রশাসনের মুখেও চুন-কালি লাগে।গোটা বিষয় অনুধাবন করতে পারে ত্রিপুরা উচ্চ আদালত।ত্রিপুরা হাই-কোর্টের হস্তক্ষেপে বোধিসত্ত্ব হত্যা মামলার চার অভিযুক্তকে ফের পুলিশ গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়।এবং তাদের স্থান হয় বিশালগড় সেন্ট্রাল জেলে।
তাহলে এখন এমন কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, ফের সংবাদ শিরোনামে চলে এসেছে “বোধি সত্ত্ব” হত্যা মামলা? এই কৌতূহল নিশ্চয় থাকবে পাঠকদের। হ্যাঁ, হয়েছে তো বটেই।
কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদালত বসবে পুরোদমে।তখন ফের শুরু হবে বোধিসত্ত্ব হত্যা মামলার শুনানি।আদালতের খবর অনুযায়ী, বোধিসত্ত্ব হত্যা মামলার শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে।আদালতে মামলার জল যে দিকে গড়াচ্ছে,তাতে অভিযুক্তদের শাস্তি প্রায় নিশ্চিত। অভিযুক্তদের শাস্তির যুপকাষ্ঠ থেকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছেন আইনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।যেখানে অর্থই শেষ কথা।
খবর অনুযায়ী, ব্যাংক ম্যানেজার বোধিসত্ত্ব হত্যাকারীদের বাঁচাতে রাজ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এক কাট্টা হয়েছেন। দেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের প্রস্তাবও।গুঞ্জন সংশ্লিষ্ট মহলে।সেই অনুযায়ী আইনের কুশীলবরা নাকি গোপন বৈঠকও করেছে।কোথায় হয়েছে গোপন বৈঠক? তদন্তের আতস কাঁচ বলছে, গোপন বৈঠকের আস্তানা ছিলো রাজধানী থেকে অনেকটা দূরে পর্যটন কেন্দ্র নীরমহলের পর্যটন নিবাস “সাগর মহলে। শোনা যায়,” গত ৩রা জুলাই সন্ধ্যায় পর্যটন নিবাসে গিয়েছিলেন আইনের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি।রাত দশটা পর্যন্ত তারা ছিলেন পর্যটন নিবাস সাগর মহলে।সেখানেই হয়েছে গোপন বৈঠক। ম্যারাথন বৈঠকে বোধিসত্ত্ব হত্যা মামলার চার অভিযুক্তকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে এক কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।তবে মোটা অঙ্কের প্রস্তাব পাওয়ার পরও বৈঠকে কোনো সমাধান সূত্র বের হয়নি।এমনই খবর সাগর মহল চত্বরে।রাতেই বৈঠক শেষে করে আইনের দুই কুশীলব পৃথক পৃথক গাড়িতে করে ফিরে আসেন আগরতলায়।তবে পর্যটন নিবাস সাগর মহলে নিজেদের নামে রুম বুক করেন নি তারা । আইনের কুশীলবদের এই গোপন বৈঠক থেকেই স্পস্ট কোন পথে যাচ্ছে বোধিসত্ত্ব হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া।এখন শুধু দেখার বিষয় মোক্ষম সময়ে বিচারের মানদণ্ড কোন দিকে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *