ডেস্ক রিপোর্টার, ১৮মে।।
       দেশের মহিলাদের ক্ষমতায়ন – স্বশক্তিকরণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। রাহুল গান্ধী থেকে অখিলেশ যাদব। মমতা থেকে সীতারাম ইয়েচুরি সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা – নেত্রীরা মহিলাদেরকে সর্ব স্তরে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।কিন্তু ভোট বাজারে নেতাদের কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল খোঁজে পাওয়া যায় না। তার জ্বলন্ত প্রমাণ সদ্য সমাপ্ত কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন।


আইনসভায় ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যাপারে বারবার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।  ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী ইস্তেহারে কংগ্রেস দাবি করেছিল, ক্ষমতায় এলে তাঁরা মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের আইন চালু করবে। একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো বিজেপিও। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের দেশের সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচনী ইস্তেহারে এই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলো।কিন্তু বাস্তবের তথ্য আলাদা কথা বলছে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের সময় প্রতিটি রাজনৈতিক দল  নিজের দলে মহিলা প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বিলক্ষণ ভুলে যায়। দলের মহিলা নেত্রীদের কথা তাদের মনেই থাকে না। সদ্য সমাপ্ত কর্নাটক বিধানসভা ভোটেও ফুটে উঠেছে এই চিত্র। ব্যতিক্রম নয় ত্রিপুরাও।


সদ্য সমাপ্ত কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে  ১২ জন মহিলা প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিজেপি।কংগ্রেস আরও এক ধাপ পিছিয়ে।কংগ্রেসের মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা  মাত্র ১১ জন।জেডিএস মনোনয়ন দিয়েছে ১৩ জন মহিলা প্রার্থীকে ।তবে লেখচিত্রের উপরে আছে নির্দল।নির্দল থেকে ৬৪জন মহিলা প্রার্থী লড়াই করেছেন ভোটে।


নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটকে জয়ী মহিলা বিধায়িকার সংখ্যা মাত্র ১১জন। এর মধ্যে বিজেপির বিধায়িকা ৫ জন।কংগ্রেসের ৪ জন। জেডিএসের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছেন ১ জন বিধায়িকা। নির্দল হিসাবে একজন মহিলা প্রার্থী
জয়ী হয়েছেন  । অর্থাৎ ২২৪ আসনের কর্ণাটক বিধানসভায় সাকুল্যে ১১ জন মহিলা বিধায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন।  শতাংশের বিচারে মোট আসনের  ৫ শতাংশের কাছাকাছি।
অবাক করার মতো বিষয়, কর্ণাটকে  পুরুষদের তুলনায় মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেশি। আর এই রাজ্যে ভোটের লড়াইয়ে নামা ২৬১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৮৫ জন। মোট প্রার্থীর তুলনায় ১০ শতাংশেরও কম। তার মধ্যে ৬৪ জন নির্দল প্রার্থী। কর্নাটকের রাজধানী হাই-টেক বেঙ্গালুরুতে।  দেশের এমন একটি রাজ্যের   রাজনৈতিক নেতাদের এই রাজনৈতিক “সচেতনতার” নজির দেখে ভ্রু কুঁচকে গেছে গোটা দেশের মানুষের।


উত্তর – পূর্বের বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায় বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি কর্ম ক্ষেত্র সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু ত্রিপুরার সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীর তালিকায় মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়টি মান্যতা দেওয়া হয় নি।


তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম,বর্তমান প্রধান বিরোধী দল তিপ্রামথা, কংগ্রেস,মমতার তৃণমূল কংগ্রেস কোনো রাজনৈতিক দলই ত্রিপুরার ভোটে তাদের প্রার্থীর তালিকায় ৩৩ শতাংশ মহিলাদের স্থান দেয় নি। গোটা দেশেই এখনো যে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দাপাদাপি, তা রাজনীতির অন্দর মহলের পরিসংখ্যান থেকেই স্পস্ট।তবে মুখে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাই নারীর স্বাধীনতা,নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন – স্বশক্তিকরণ নিয়ে রাজনীতির মাঠঘাট গরম করতে যে কোনো রকম কার্পণ্য বোধ করেন না,এটা এই দেশের নারী সমাজ বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের আঁকড়ে ধরে রেখেছে।তবে নিন্দুকেরা অবশ্যই বলবেন, কোথায় পিছিয়ে আছেন নারীরা? দেশের রাষ্ট্রপতি তো একজন নারীই। তাও আবার দলিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *