ডেস্ক রিপোর্টার,২১এপ্রিল।।
খুব শীঘ্রই ঘোষণা হবে রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ। উপনির্বাচনকে সামনে রেখে যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের। চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের মধ্যে তিন কেন্দ্রে নিশ্চিত জয় পাবে শাসক দল।বলছেন রাজ্য বিজেপি’র নেতৃত্ব। কিন্তু ধলাইয়ের সুরমা কেন্দ্র নিয়ে স্পস্ট করে কিছু বলতে পারছে না বিজেপি’র থিঙ্কট্যাঙ্ক। এমনই খবর শাসক শিবিরের।
রাজনীতিকরা বলছেন, উপনির্বাচনে সুরমা কেন্দ্রে এবার হবে নতুন সমীকরণ। এই কেন্দ্রে মূলত লড়াই হবে শাসক দল বিজেপি,সিপিআইএম ও তিপ্রামথার মধ্যে। কংগ্রেস থাকবে সাইড লাইনে। ১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের হাত থেকে আসনটি ছিনিয়ে এনেছিল বিজেপি। জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি’র প্রার্থী আশীষ দাস। কিন্তু তিনি বিজেপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রটি বিধায়ক শূন্য হয়ে পড়ে। এবং উপ নির্বাচনের আবশ্যক হয়ে উঠে।
এই কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ দাসের দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবে কিনা,এখন পর্যন্ত কোনো নিশ্চয়তা নেই। বা তৃণমূল কংগ্রেস আশীষ দাসকে প্রার্থী করলেও তিনি কতটা ফাইট দিতে পারবেন বিজেপি, সিপিআইএম এবং তিপ্রামথাকে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে স্থানীয় জনমনে।কারণ বর্তমানে আশীষ দাসের সেই রকম কোনো জনভিত্তি নেই এই আসনে। কারণ তিনি বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই এলাকাতে বেশি দিন অবস্থান করেন নি।দলের সঙ্গে তার শুরু হয়ে যায় সংঘাত।কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস সুরমা কেন্দ্রের লড়াইয়ের অলিন্দে থাকবে না। লড়াইয়ের বৃত্তে থাকবে বিজেপি, তিপ্রামথা ও সিপিআইএম।
রাজনীতিকরা পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪৬৪২১ জন। তার মধ্যে ৩৭ শতাংশ এসটি, ৯শতাংশ ভোটার হিন্দুস্তানী এবং ৪শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। বাদবাকি ভোটার অনুপজাতি অংশের। অর্থাৎ এসটি, হিন্দুস্তানী ও সংখ্যালঘু ভোট মিলিয়ে রয়েছে মোট পঞ্চাশ শতাংশ। বাদবাকি ভোট পঞ্চাশ শতাংশ।
উপভোটের প্রাক লগ্নে বড় ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। সুরমা কেন্দ্রের বিজেপি’র জনজাতি নেতা তথা দুর্গা চৌমুহনী ব্লকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কুমার হালাম পদ্ম শিবিরকে আলবিদা জানিয়ে দিয়েছেন।তিনি যেকোনো সময় অনুগামীদের নিয়ে যোগ দেবেন তিপ্রামথাতে। এই চিত্র প্রায় পরিষ্কার। তিপ্রামথা থেকে কুমার হালাম হতে পারেন প্রার্থী।
স্থানীয়দের বক্তব্য, জনজাতি ভোটের ৩৭শতাংশের সিংহভাগ ভোট পড়বে তিপ্রামথার দিকে। এই কুমার হালাম দলে থাকলে বিজেপি জনজাতি ভোটে দখল নিতে পারতো।কিন্তু এখন তা সম্ভব হবে না। জনজাতি ভোট নিংড়ে নেবে তিপ্রামথা। হিন্দুস্তানী ভোটারদের সঙ্গে তিপ্রামথার নেতৃত্ব সহ কুমার হালামের সুসম্পর্ক।এখানে বিজেপি’র তেমন কোনো নেতা নেই। কালের বিবর্তনে এই অঞ্চলের সংখ্যালঘু ভোটাররাও এখন ঝুঁকে আছে মথার দিকে।একসময় তারা ছিলো বামেদের নিশ্চিত ভোট ব্যাংক। এই পঞ্চাশ শতাংশ ভোটে মথার আধিপত্যই বেশি থাকবে বলে মনে করছে স্থানীয় ভোটারদের একাংশ।
এবার বাকি রইলো বাদবাকি পঞ্চাশ শতাংশের খেলা। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭২ সালে সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রের জন্ম। ৭২-র বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী ক্ষিতিশ দাস। এরপর টানা ৮টি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বামেরা। ২০১৮-তে বিজেপি’র দখলে গিয়েছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই এই কেন্দ্রে বামেদের একটা আধিপত্য রয়েছে। তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। স্থানীয় ভোটাররা ১৮-র নির্বাচনে বিজেপিকে জয়ী করেও তারা বিধায়ককে তেমন ভাবে পাননি।এটা অবশ্যই বিজেপি’র বিপক্ষেই যাবে। এক্ষেত্রে বামেদের দিকে একটা অংশের ভোট ঝুঁকে যেতে পারে।তাহলে মথার সঙ্গে লড়াইয়ের অলিন্দে চলে আসবে বামেরা। এক্ষেত্রে তিপ্রামথা-সিপিআইএম ও বিজেপি’র মধ্যেই হবে লড়াই। সবকিছু বিচার বিবেচনা করে মথার দিকেই সুরমা কেন্দ্রের বাজি ধরে রেখেছে স্থানীয় ভোটারদের বড় অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *