শিল্পতালুকে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডেস্ক রিপোর্টার,২১আগষ্ট।।
রাজ্যের শিল্প তালুক বোধজং নগর পরিদর্শনে গিয়ে রাজ্যের শিল্পের রুগ্ন দশা প্রত্যক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। শনিবার শিল্প তালুক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে রাজ্যের শিল্পপতি ও উদ্যোগপতিদের সঙ্গে করেছিলেন বৈঠক। এই বৈঠকেই শিল্পপতিদের মুখ থেকে উঠে আসে রাজ্যের শিল্পের রুগ্ন দশা ও করুন চিত্র। পাশাপাশি গোটা শিল্পতালুকে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। এবং নিশিকুটুম্ব নিয়মিত অত্যাচারে নাভি শ্বাস উঠছে শিল্প উদ্যোগীদের। রাজ্যের শিল্পপতিদের মুখ থেকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সমস্ত সমস্যার কথা শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিরা মুখ্যমন্ত্রীকে পুলিশি অসহযোগিতার কথাও জানিয়েছেন। বোধজংনগর থানায় শিল্পপতিরা মামলা দায়ের করলেও থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থানা কর্তৃপক্ষ রাজী হয়নি মামলা নিতেও।
শিল্পপতিরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য প্রতিদিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। বিদ্যুৎ চপলতা শিল্প-তালুকে নিয়মিত ঘটনা। এই বিদ্যুৎ চপলতার জন্য নষ্ট হচ্ছে তাদের দামি দামি যন্ত্রাংশ। শিল্পতালুকে নেই পর্যাপ্ত গ্যাসের ব্যবস্থা।এই কারণে গ্যাস কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্প গুলি মুখ থুবড়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে ১৮কিউবিক মিটার গ্যাস শিল্পতালুকে রয়েছে। কিন্তু তাদের প্রয়োজন ২৫ থেকে ২০ কিউবিক মিটার গ্যাস।

শিল্প কারখানা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী।

তথ্য অনুযায়ী, বোধজং শিল্প তালুকে মোট কলকারখানা ছিলো ১২০টি।এখন জীবিত আছে মাত্র ৬৯টি। বাদবাকি শিল্প সংস্থার ঝাঁপ নেমে গেছে। বৈঠকে উপস্থিত শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায় বলেন, শিল্প তালুকে নেই নিরাপত্তা। গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য নির্ভর করতে হয় বেসরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর উপর। রাতের আঁধারে চোর চক্রের দল ট্রাক নিয়ে সরাসরি প্রবেশ করে শিল্প তালুকে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা:মানিক সাহা শিল্পপতিদের মুখ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থার কথা শুনে উপস্থিত রাজ্য পুলিশের ডিজিপি অমিতাভ রঞ্জনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ কেন শিল্পপতিদের করা মামলা থানায় রুজু করছে না? তাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ নিগমের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ক্ষেত্রে রাজ্য শিল্প নিগমকে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে কাজ করার কথাও বলেছেন তিনি।
শিল্পপতিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা ও আত্মনির্ভর ভারত গড়তে হলে বাড়াতে হবে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি। আগের তুলনায় বর্তমান সরকারের সময়কালে রাজ্যে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর রপ্তানি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের “ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন স্কিম – ২০২২” এর মাধ্যমে রাজ্য ও বহিঃ রাজ্যের শিল্প উদ্যোগীরা ত্রিপুরায় বিনিয়োগ করতে অধিক পরিমাণে উৎসাহিত হচ্ছে। সরকার বোধজং নগর ও আরকে নগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের উন্নতি সাধনে যথেষ্ট সচেতন রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই কমপ্লেক্স থেকে বাঁশ জাত উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহৃত হয়েছে ভারতের নবনির্মিত পার্লামেন্ট হাউসে। এখানে আগের তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের। শিল্প উদ্যোগীদের এই দুটি সমস্যা নিরশনে সরকার চেষ্টা করছে। ২২.০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পিএম গতিশক্তি’ স্কীমে বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে প্রস্তাব রয়েছে।এই কমপ্লেক্স এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নতি সাধন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার বিষয়ে তাঁদের আস্বস্ত করেন শিল্প উদ্যোগীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *