
ডেস্ক রিপোর্টার, ৯আগস্ট।।
প্রত্যাশিত ভাবে ঘোষনা হলো রাজ্যের দুই বিধানসভা কেন্দ্র বক্সনগর ও ধনপুরের উপ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর। গণনা ৮ সেপ্টেম্বর। রাজ্যের শাসক দল বিজেপির কাছে উপ ভোট যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।সরকারের অবস্থান আরোও শক্তপুক্ত করতে বক্সনগর ও ধনপুর কেন্দ্রে বড জয় চাইছে বিজেপি। এক্ষেত্রে উভয় কেন্দ্রে প্রার্থী বাছাই করতে হবে খুব সন্তর্পনে।ভুল হলেও বাজবে বিপদের ঘন্টি।বলছেন রাজনীতিকরা।

২০ – বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রটির দিকে বরাবর নজর থাকে রাজনীতির অঙ্গনের লোকজনের। ১৯৮৮ সালের পর এই কেন্দ্র থেকে কোনো অবাম দল জয়ী হতে পারে নি।১৯৯৩ থেকে ২০২৩ – র বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত বক্সনগর কেন্দ্রে বামেরা ছিলো অপ্রতিদ্বন্দ্বী।সম্প্রতি বক্সনগর কেন্দ্রের বাম বিধায়ক শামসুল হক প্রয়াত হয়েছেন।তাই এই কেন্দ্রে অকাল নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।

বক্সনগর কেন্দ্রে ২৩- র অকাল ভোটে বিজেপির প্রার্থীর দৌঁড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন তফাজ্জল হোসেন, জসিম উদ্দিন ও দেবব্রত ভট্টাচার্য্য। তফাজ্জল হোসেন ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনের এই কেন্দ্রের বিজিত প্রার্থী। জসিম উদ্দীন প্রদেশ বিজেপির সম্পাদক ও দেবব্রত ভট্টাচার্য্য বিজেপির সিপাহীজলা জেলার সভাপতি। তিনি ২৩- র নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন সোনামুড়া কেন্দ্র থেকে। কিন্তু পরাজিত হয়েছিলেন। এর বাইরেও আরোও কয়েকটি নাম রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায়। তবে দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের রাডারের প্রথম বৃত্তে রয়েছেন তফাজ্জল,জসিম ও দেবব্রত।বিজেপির নেতৃত্বের বক্তব্য, তাদের মধ্যে থেকেই যে কোনো একজনের ললাটে লাগবে টিকিট।

*তফাজ্জল হোসেন
___________________
বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনীতির অলিন্দের একটি পরিচিত মুখ তফাজ্জল হোসেন। বক্সনগরের স্থায়ী বাসিন্দা।বরাবর তিনি বাম বিরোধী শিবিরের নেতা। দীর্ঘ দিন জড়িত ছিলেন কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে তফাজ্জল বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।১৮- র নির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্রে প্রার্থীর দৌঁড়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু তৎকালীন সময়ে প্রয়াত কৃষি বিজ্ঞানী বাহারুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে দৌঁড়ে হেরে যান তফাজ্জল। ২৩- র নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্ব ভরসা রাখেন তফাজ্জলের উপর। তিনি হয়েছিলেন প্রার্থী।

কিন্তু সিপিআইএম নেতা সামসুল হকের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তবে প্রয়াত হেভীওয়েট কমিউনিস্ট নেতা সামসুলকে কড়া চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তফাজ্জল হোসেন। বিধানসভা নির্বাচনে বাম – কংগ্রেস জোটের সমীকরণ তফাজ্জলের বিজয় আটকে দিয়েছিলো। অকাল ভোটেও দলীয় নেতৃত্বের আতশ কাচের নিচে আছেন বিজিত প্রার্থী তফাজ্জল হোসেন।

*জসিম উদ্দীন
____________
প্রদেশ বিজেপির সংখ্যালঘু নেতৃত্বের মধ্যে অন্যতম জসিম উদ্দিন।এক সময় সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি ছিলেন জসিম।বর্তমানে তিনি প্রদেশ বিজেপির সম্পাদক। বক্সনগর কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে প্রার্থীর দৌঁড়ে রয়েছেন জসিম।দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ফোকাস আছে তার উপর।তিনি আগরতলার বাসিন্দা। কিন্তু বক্সনগর কেন্দ্রের রাজনীতির অলিন্দে তার নেই জামাটি মাটি। নিজের নড়বড়ে ভিত নিয়ে আগরতলা থেকে বক্সনগরে গিয়ে জসিম উদ্দীন আসনটি ছিনিয়ে আনতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন দলীয় নেতৃত্ব।

এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিলেন প্রয়াত কৃষি বিজ্ঞানী বাহারুল ইসলাম মজুমদারও। জসিম উদ্দিন দীর্ঘ সময়ে সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি থাকলেও বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা হিসাবে নিজেকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে স্বজ্জন ভদ্রলোক হিসাবে তার গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে।তাকে নিয়েও ভাবনা রয়েছে নেতৃত্বের।

*দেবব্রত ভট্টাচার্য
________________
ভারতীয় জনতা পার্টির সিপাহীজলা জেলার সভাপতি দেবব্রত ভট্টাচার্য। ২৩- র ভোটে তিনি সোনামুড়া কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য। হেরে যান বাম প্রার্থী শ্যামল চক্রবর্তীর কাছে। বক্সনগর কেন্দ্রের অকাল ভোটের প্রার্থীর দৌঁড়ে রয়েছেন দেবব্রত ভট্টাচার্য।শীর্ষ নেতৃত্বের টর্চ লাইটের নিচে আছেন তিনি। কিন্তু বক্সনগর কেন্দ্রে ২৫হাজারের বেশি সংখ্যালঘু ভোট।১৪ হাজার হিন্দু ভোট।এবং প্রায় তিন হাজার জনজাতি ভোট।বিজেপির কর্মীদের বক্তব্য, দেবব্রত ভট্টাচার্য কপালে তিলক কেটে নিজেকে কট্টর হিন্দুবাদী নেতা হিসাবে জাহির করে থাকেন। তার এই মনোভাব সংখ্যালঘুরা মেনে নেবে কি? এই বিষয়টি ভাবাছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে। বক্সনগরে ৬০ শতাংশের অধিক সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে সোনামুড়া থেকে বক্সনগরে এসে দেবব্রত কি পারবেন বিজেপিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে? জনমনে উঠছে প্রশ্ন।

তফাজ্জল, জসিম উদ্দীন ও দেবব্রত ব্যতীত আরো দুয়েকজন নাম ঘুরাফেরা করছে প্রার্থীর সম্ভাব্য তালিকায়। তবে তারা আছেন রাডারের বৃত্তের দ্বিতীয় সারিতে।রাজ্যের বিজেপি সরকারের অবস্থান মজবুত করতে বক্সনগর জয়ের খুব প্রয়োজন। বামেরাও ছেড়ে কথা বলবে না। আছে কংগ্রেস। সঙ্গে অল্প সংখ্যক জনজাতি ভোট নিয়ে লম্ফ জমফ করবে প্রধান বিরোধী দল তিপ্রামথা। রাজনীতির সমস্ত অঙ্ককে মাথায় রেখে বিজেপিকে দার করতে হবে একজন হেভি ওয়েট প্রার্থী।মাথায় রাখতে হবে সংখ্যালঘু ভোটারদের কথা। সব কিছু বিচার বিবেচনা করেই বিজেপি নেতৃত্ব কার হাতে ধরিয়ে দেবে প্রার্থীর টোকেন? সে দিকেই তাকিয়ে বক্সনগর বিধানসভার ভোটাররা।