ডেস্ক রিপোর্টার,২৮ফেব্রুয়ারি।।
    শান্তনু ভৌমিক।রাজ্যের তরুণ সাংবাদিক। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিশপ্ত মান্দাইয়ে খুন হয়েছিলেন।
  সুদীপ দত্ত ভৌমিক। রাজ্যে অপরাধ সংক্রান্ত সাংবাদিকতা করতেন তিনি। শান্তনুর মতোই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন খোদ নিরাপত্তা বাহিনীর গর্ভ গৃহে।

         বাম জামানায় পর পর দুই সাংবাদিকের হত্যাকান্ড নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। ১৮- র বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম তিনটি অন্যতম কারণের মধ্যে  একটি ছিল সুদীপ – শান্তনু হত্যাকান্ড।
             তৎকালীন সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপির  সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুদীপ – শান্তনুর লাশ নিয়ে বিচারের জন্য ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন করেছিলো সাংবাদিকদের বড় অংশ। আবার অপর অংশ অর্থাৎ তৎকালীন সময়ে প্রেস ক্লাব পরিচালন কমিটি মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিল। তারা ছিলো পূর্বতন বাম সরকারের পদ লেহনকারী। তখন এই আন্দোলনকে সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সাধুবাত জানিয়েছিলো। বিরোধী শিবিরের পৃষ্ঠ পোশক  সাংবাদিক নেতারাও পৌছে গিয়েছিলেন দিল্লিস্থিত দেশের রাষ্ট্রপতির  দরবারেও।

    ২০১৮ সালের ৯ মার্চ বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে রাজ্যের মসনদে বসে বিজেপি সরকার। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিজেপি সরকার সুদীপ – শান্তনু হত্যাকান্ডের তদন্তের দায়িত্ব তুলে দেয় দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সি বি আইয়ের হাতে।


দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা আজ পর্যন্ত এই দুইটি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে  গ্রেফতার করে নি। গ্রেফতার তো দূরের কথা তদন্তের গতি প্রক্রিয়া একেবারেই শম্ভুক গতিতে। এখনও শেষ হয় নি তদন্ত।জমা পরে নি চার্জশিট। এর আগে রাজ্যের আরো পাঁচটি খুনের মামলার তদন্ত করেছিলো সিবিআই। প্রতিটি মামলা এখন ক্লোজড চাপ্টার। এটাই ধ্রুব সত্য। সুদীপ-শান্তনুর মামলার গন্তব্যও যে হবে সিবিআই’র ডাস্ট বিনে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
             তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক সিবিআই তার গতিতেই কাজ করছে।কিন্তু সিবিআই তদন্তের এই ছিরি দেখে একবারের জন্য রাজ্যের তথাকথিত স্ব – ঘোষিত সাংবাদিক নেতাদের মনুষ্যত্ব এখনো জাগ্রত হয়নি। এটা কেমন করে হয়।সুদীপ – শান্তনুর মৃত্যুর পর তারাই অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে পূর্বতন বাম সরকারের বিরুদ্ধে  আন্দোলনের খাদ্য তৈরি করেছিলেন। মানুষকে শুনিয়েছিলেন নীতি কথা।কিন্তু আজ কোথায় উবে গেল তাদের আন্দোলনের আস্ফালন?সিবিআইয়ের নেংটি তদন্ত প্রক্রিয়া দেখেও রাজ্যের সংবাদ জগতের তথাকথিত স্ব – ঘোষিত দিকপাল সংবাদিকরা কেন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন? কারণ তারাও এখন শাসক শ্রেণীর এজেন্ট। তাই বাম জামানার আঁতেল সাংবাদিকদের মতোই বর্তমানের স্ব ঘোষিত সাংবাদিক নেতারাও আরো বড় আতেলের ভুমিকা পালন করছেন।
      তাই তো ২৩- র ভোটের আবহে সুদীপ- শান্তনুর হত্যা মামলার সিবিআই তদন্ত নিয়ে একটি শব্দও ব্যবহার করেন নি আগরতলা প্রেস ক্লাবের হালের দন্ড মুণ্ডের কর্তারা? এই লক্ষ্ টাকার প্রশ্নের উত্তর কি তারা দিতে পারবেন? সম্প্রতি সাংবাদিক  সুদীপ দত্ত ভৌমিকের খুনের মূল অভিযুক্ত টিএসআর  কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মা জামিনে মুক্ত পেয়েছেন নিম্ন আদালতে থেকে।কিন্তু তার যথার্থ শাস্তি কি হয়েছে?


সুদীপ – শান্তনুর খুনের মধ্য দিয়েই ১৮- র নির্বাচনে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছিলো। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।প্রতিটি রাজনৈতিক দলের চরিত্র একই। প্রতিটি দলের রাজনৈতিক নেতারা লাশের রাজনীতি করতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকেন।।তাই বলে কি গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে নিজেদের জাহির করা তথাকথিত স্ব- ঘোষিত সাংবাদিক নেতৃত্বও নিজের সহকর্মীদের মৃত্যুর উপযুক্ত তদন্তের দাবি করবেন না? ছি: ছি:।
                 রাজ্যের সংবাদ জগতে গুঞ্জন,  সাংবাদিক নেতারা তাদের কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করতেই সুদীপ – শান্তনুর প্রতি অবিচার করছেন। খুন হওয়া দুই সাংবাদিকের বিচারের বাণী কাদঁছে সরবে। তাতে অবশ্যই ব্যবসায়ী কাম স্ব – ঘোষিত সাংবাদিক নেতাদের কিছু আসে যায় না। সুদীপ,শান্তনুর মৃত্যুর সুষ্ঠ তদন্ত চেয়ে আন্দোলনের সূতিকাগার তৈরি করলে টান পড়তে পারে তাদের অর্থের ভাড়ারে।তাই তারা নিশ্চুপ।বলছেন রাজ্যে কর্মরত ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা।
      আগরতলা প্রেস ক্লাবের সর্ব শেষ সাধারণ নির্বাচনে সন্মুখ সমরে ভোটের  লড়াই করেছিলো এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট ও এফডিপিএমসি নামক দুইটি সংগঠন। গ্ল্যামারের দিক দিয়ে এই নির্বাচন কোনো অংশে কম ছিলো না।


এবছর ফের অনুষ্ঠিত হলো আগরতলা প্রেসক্লাবের নির্বাচন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোটদান প্রক্রিয়া, তার আগে অবশ্যই বেশ কয়েকটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কয়েকজন প্রার্থী জয়ী হয়ে গিয়েছেন। এতো ডামাডোলের মধ্যে  সুদীপ – শান্তনুর সিবিআই তদন্তের বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় কোথায় তাদের? ভোট চাইতে গিয়ে স্ব- ঘোষিত সাংবাদিক নেতারা কি জবাব দেবেন ভোটারদের কাছে? অবশ্যই তাদের কাছে কে- ই বা জবাব চাইবেন?ভোটাদের অধিকাংশই যে ৫ থেকে ১০টাকার মাসিক বেতনে বিনিময়ে স্ব- ঘোষিত সাংবাদিক নেতাদের ফরমাইস কাটেন। তাই দুই সহকর্মীর মৃত্যুতে তাদের বুক ফাটলেও মুখ  ফাটে না। তারা পেটের দায়ে কাজ করেন নির্জীব বস্তু হয়ে।এই মওকা বুঝেই ব্যবসায়ী কাম স্ব ঘোষিত সাংবাদিক নেতারা ছড়ি ঘোরান গুণী সাংবাদিকদের উপর। তাই সাধারণ মানুষের কাছে আজকের দিনে রাজ্যের সংবাদ জগতের সন্মান বিশবাও জলে।


“জনতার মশাল ” ওয়েব পোর্টালে এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নিশ্চয় ব্যাবসায়ী কাম স্ব – ঘোষিত সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে রে রে শুরু হবে। অবশ্যই তাদের আদি অন্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল “জনতার মশাল”। অনেকে আবার বর্তমান শাসক শক্তির কানে ভরবেন জনতার মশাল আমাদের লোক নয়। ভিন্ন শিবিরের।  তাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করেই নিশ্চিত ভাবে এটা আগাম বলা যায়।তাতে অবশ্যই জনতার মশালের কিছু আসে যায় না।কারণ জনতার মশাল কোনো রাজনৈতিক শক্তির ব্রোকার হয়ে কাজ করে না। তাই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে উড়তে জানে জনতার মশাল।সাংবাদিকদের মধ্যে কারা কারা কোনো কোন  পলিটিক্যাল পার্টির ব্রোকার? তা ভালো করেই জানে এই রাজ্যের মানুষ।নতুন করে বলার কিছু নেই। কথা বলবে সময় – ই।তার জন্য করতে হবে অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *