ডেস্ক রিপোর্টার১৮ ফেব্রুয়ারি।
আচমকা পরিবর্তন এসেছে রাজ্য রাজনীতির ক্লাইমেক্সে। এপ্রিল মাসেই রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে উপনির্বাচন। বাড়তে পারে আরো একটি আসনের উপনির্বাচনের নির্ঘন্ট। অর্থাৎ রাজ্যের পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে একই সঙ্গে উপনির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। তবে এই উপনির্বাচনে শাসক দল বিজেপি, বিরোধী সিপিআইএম সহ কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তির মহড়া। পাশাপাশি তিপ্রামথারও।
গত কয়েকমাস আগে ধলাইয়ের সুরমা কেন্দ্রের বিধায়ক আশীষ দাস বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। এরপর খারিজ হয়ে যায় তার বিধায়ক পদ। বিজেপির অপর দুই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন এবং আশীষ সাহা বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ এই দুই বিধায়কের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেন। এরফলে ‘আগরতলা’ বিধানসভা কেন্দ্র ও ‘বড়লেয়ালি” বিধানসভা কেন্দ্র দুটিই বিধায়ক শূন্য হয়ে পড়ে। যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন সিপিআইএম নেতা রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। সম্প্রতি তিনি প্রয়াত হন। এই আসনটিও বিধায়ক শূন্য।
প্রাথমিকভাবে এই চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে হবে নিশ্চিত উপনির্বাচন। সীমনা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা গতবছর তার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু আইপিএফটি এখনো বৃষকেতুর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেনি। স্বাভাবিক ভাবেই বিধানসভার অধ্যক্ষও বৃষকেতুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে রাজনৈতিক মহলের খবর অনুযায়ী মার্চ মাসের মধ্যে বৃষকেতু দেববর্মার বিধায়ক পদ খারিজ হতে পারে।
যদি তাই হয়, তাহলে মোট পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র বিধায়ক শূন্য হবে। সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে হবে উপনির্বাচন। ২০২৩-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাঁচ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের শক্তির মহড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে। আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে উপনির্বাচনে লড়াই করবেন সুদীপ রায় বর্মন এবং বড়দোয়ালি কেন্দ্রে কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন আশীষ সাহা। কংগ্রেস ভবন থেকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি দুই প্রাক্তন বিধায়কের অনুগামীদের। বিজেপি থেকে কে বা কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা এখনো জানা যায়নি। তবে বেশ কয়েকটি নামই ভেসে আসছে। এই দুটি কেন্দ্র বিজেপির জন্যও রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, সুদীপ রায় বর্মন ও আশীষ সাহা উভয়ই বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি চাইবে যে কোনো মূল্যে এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে বড় জয় হাসিল করতে। তারজন্য অবশ্যই হেভিওয়েট প্রার্থী দরকার। হেভিওয়েট প্রার্থীর সন্ধান করছে রাজ্য বিজেপি। একইভাবে সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রেও উপযুক্ত প্রার্থীর খোঁজে রয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই আসন থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করবেন প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ দাস। যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রটিও ছিলো বামেদের দখলে। ২৩-র ভোটের আগে এই আসনটি বিজেপি নিজেদের দখলে আনার চেষ্টা করবে। তাই যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্যও উপযুক্ত প্রার্থীর সন্ধান করাছে বিজেপি শিবির। সীমনার বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা আনুষ্ঠানিকভাবে তিপ্রামথাতে যোগ দিয়েছেন। যদি এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে বৃষকেতুও তিপ্রামথার টিকিটেই লড়াই করবেন। এই আসনটিতে সাংগঠনিক ভাবে অন্যান্য দল থেকে কয়েকশো যোজন এগিয়ে রয়েছে তিপ্রামথা।অন্যকোনো রাজনৈতিক দল সীমনা বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁত বসাতে পারবে না।
রাজনীতিকদের বক্তব্য, তিপ্রামথার টিকিটে বৃষকেতু লড়াই করলে তার জয় নিশ্চিত। তৎসঙ্গে ২৩-র ভোটের আগেই তিপ্রামথাও পেয়ে যাবে একজন বিধায়ক। দলের হয়ে বিধানসভাতে জনজাতিদের স্বার্থে কথা বলতে পারবেন বৃষকেতু দেববর্মা।
পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই ২৩-র যুদ্ধের আগে ২২-এর উপনির্বাচন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যে দল উপভোটে বিধানসভা কেন্দ্রগুলি দখল করতে পারবে তাদের জন্য ২৩-র পথ অনেক বেশি সুগম হবে। একটা ধনাত্মক বার্তা পৌঁছাবে সাধারণ মানুষের কাছে। উপভোটের জয় নিয়েই ভোটারদের কাছে মার্কেটিং করতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলি। এই কারণেই কোনো রাজনৈতিক দলই উপভোটে ছেড়ে কথা বলবে না। তবে উপনির্বাচনে যদি কংগ্রেস-সিপিএম একজোট হয়ে যায়, তাহলে শাসক দল বিজেপিকে প্রচণ্ড হ্যাপা পোহাতে হবে। পাশাপাশি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারাও যদি কংগ্রেস-সিপিএম জোটকে সমর্থন করে তাহলে শাসক দলের পক্ষে উপনির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর হবে। বাস্তব অর্থে এই সমীকরণ হবে কিনা তা নিয়েও ধন্দে আছে রাজনৈতিক বিশারদরা। কেননা, এই উপভোটে প্রতিটি রাজনৈতিক দল পৃথকভাবে নিজেদের শক্তি ঝালাই করে নিতে চাইবে। এই জন্য তারা জোটের পথে হাঁটবে কিনা তা নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক আবহ অনুযায়ী, বামেরা আগের তুলনায় অনেক বেশি সুসংগঠিত। সেই তুলনায় কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস বামেদের ধারেকাছেও নেই। স্বাভাবিক ভাবেই বামেরা অনর্থক কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পথে হাঁটবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু বিজেপিকে আটকানোর জন্য যদি সবক’টি বিরোধী দল একমঞ্চে এসে দাঁড়ায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ রাজনীতির অভিধানে ‘অসম্ভব’ বলে কোনো শব্দ নেই।কালে কালে রাজনীতির এই চিত্র প্রকট হয়েছে।
