ডেস্ক রিপোর্টার,২৫জুন।।
রাত পোহালেই রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপভোগের ভোট গণনা রবিবার বেলা ১১টার মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে উপভোটের ফলাফলের চিত্র। কার দখলে থাকবে সেমিফাইনালের শিরোপা।এবং কারাই হবে রানার্সআপ?
সদ্যসমাপ্ত উপভোগ হয়েছে বহুমুখী লড়াই। শাসক বিজেপি, বিরোধী সিপিএম, তিপ্রামথা, কংগ্রেস এবং তৃণমূল ছিলো লড়াইয়ের অলিন্দে।ভোট ফেরত সমীক্ষা বলছে, উপভোগ আশানুরূপ ফল করতে পারবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটের সারণিতে তৃণমূলের স্থান হবে চতুর্থ। কোনভাবেই তারা এর উপরের সারিতে উঠতে পারবে না। অবশ্যই পুরো ও নগর ভোট তৃণমূল ছিল দ্বিতীয় নম্বর স্থান। বিজেপির সন্ত্রাস উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। কিন্তু উপভোটে উল্টো চিত্র ধরা পড়ছে তৃণমূলের ভাগ্য আকাশে। হঠাৎ করে দুই নম্বর স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে আসবে কেন তৃণমূল ? প্রশ্ন উঠছে, ঘাসফুলের অন্দরমহলে। দলের কর্মী সমর্থকরা অবশ্যই তার জন্য দায়ী করছে দলীয় নেতৃত্বকে। পরিষ্কার করে বললে দলের থিংক-ট্যাংককে।
রাজনীতিকরা বলছেন, পুরো ও নগর ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ২৩শতাংশ ভোট পাওয়ার পর তারা অনেক বেশি আত্মতুষ্টিতে ভুগতে শুরু করেছিল তৃণমূল।দলের নেতৃত্ব ভেবেছিল, রাজ্যের পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে বিজেপির সঙ্গে সামনে দাঁড়িয়ে তারাই টক্কর দেবে। তাদের পেছনে থাকবে বামেরা। ধাতব্যের মধ্যে রাখিনি কংগ্রেসকে।কিন্তু আচমকা সুদীপ রায় বর্মন ও আশীষ কুমার সাহা বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিতেই চিত্র অনেকটাই পাল্টে যায়। ধাক্কা লাগে প্রদেশ তৃণমূলের গর্ভগৃহে। পাশাপাশি তৃণমূলের নতুন কমিটি একটা ফ্যাক্টর। অনেক পুরনো নেতাদের স্থান দেওয়া হয়নি নতুন কমিটিতে। এই কারণেই দলের একটা অংশ নিজেদের হাত গুটিয়ে নেয়। এটা অবশ্যই তৃণমূলের জন্য সুখকর ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রদেশ তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ” বঙ্গ নেতৃত্বের গোয়া চলো নীতি ত্রিপুরাতে তৃণমূলকে ঠেলে দিয়েছে ব্যাকফুটে। রাজ্যের পুরো ও নগর ভোটের পরেই আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল নেতৃত্ব গোয়ার বিধানসভা ভোট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন গোয়াতে ভালো ফলাফল করবে। এই কারণেই ত্রিপুরার দিকে নজর না দিয়ে সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সমুদ্র সৈকতে। কিন্তু তৃণমূলকে নিরাশ করে সমুদ্র সৈকতের মানুষ। বলা চলে, গোয়ার বিচের বালির ঝড়ে আটকে যায় তৃণমূলের গতি।গোয়া থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় তৃণমূলকে।
প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এই সময়ের মধ্যে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস হাতে গোনা কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে। সংগঠনকেও করা হয়নি মজবুত।দলীয় কর্মসূচি না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়। মানুষ ধরে নিয়েছিল, পুরভোটে তৃণমূলের আগমন শুধুমাত্র জাতীয় রাজনীতির রণকৌশল। এই কারণেই পুরভোটে ২৩ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরও ত্রিপুরাকে নিয়ে ভাবার সময় পায়নি দলের নেতৃত্ব। স্বাভাবিক কারণেই দলের কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। মানুষ মন্দের ভালো হিসেবে ফের ঝুঁকে পড়ে শাসক দল বিজেপির দিকেই। এবং সুদীপ অনুগামীরা চলে যায় কংগ্রেসে। আলবিদা জানায় তৃণমূলকে। কারন তারাই আগরতলা কর্পোরেশন ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে অতিরিক্ত অক্সিজেন দিয়েছিল।
সদ্য সমাপ্ত উপভোটে তৃণমূল কংগ্রেস চার কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে। লড়াই করেছে দলের সীমিত শক্তি নিয়ে। তার মধ্যে ছিল শাসকদলের চোখ রাঙানো। তবে পুরভোটে শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছিল, উপভোটে সেই চিত্রের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। দাবি,রাজনীতির বিশারদদের।
তাদের কথায়, মানুষ তৃণমূল থেকে সরে গিয়ে বিজেপি এবং কংগ্রেসের পাশেই দাঁড়িয়েছে। তার জন্য অবশ্যই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে হবে দলীয় নেতৃত্বকে। উপভোটের ফলাফল প্রভাব পড়বে ২৩’র বিধানসভা নির্বাচনে। তৃণমূল নেতৃত্ব ২৩- র ভোট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু থাকবেনা তৃণমূলের পাশে। অন্তত উপভোটের ফলাফল এই বার্তা পৌঁছে দেবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্ণকুহরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *