ডেস্ক রিপোর্টার,২৭ নভেম্বর।।
            পুলিশ সাব ইনস্পেক্টর বাদল বিশ্বাস থেকে দূর্গা চন্দ্র রাংখলের হত্যাকাণ্ড। এবং প্রণব সেনগুপ্ত থেকে মেলাঘর থানার কনস্টেবলের উপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার আজও সুবিচার হয় নি।ব্যর্থ রাজ্যের রাষ্ট্রপতি কালার্স পদক প্রাপক পুলিশ। বারবার সহকর্মীদের খুন ও তাদের উপর সংঘটিত হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জামাই আদর করে চলছে রাজ্য পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই দুষ্কৃতীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়েছে বারবার। কোথায় তাদের কোনো সমস্যা হয় নি।কারণ এই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতীরা কালে কালেই ছিলো রাজনৈতিক গড ফাদারদের ছত্র ছায়াতে।সময়ে সময়ে রাজনীতির পালা বদল ঘটলেও দুষ্কৃতী ও রাজনীতিকদের চরিত্র ছিল একই। চরিত্র বদলাতে পারেন নি রাজ্য পুলিশের তাবড় তাবড় পুলিশ কর্তারা। “গঙ্গা জল” বা “সিঙ্গম” মতো হিন্দি সিনেমা গুলিতে দাগ কাটতে পারেনি ত্রিপুরা রাজ্যের তথাকথিত বাঘা বাঘা (!) পুলিশ অফিসারদের মনে। এই জন্যই সহ কর্মীদের খুন বা হামলার ঘটনা গুলি তাদের কাছে নিছক অজ পাড়ার কোনো সাধারন নাগরিকের নৃশংস, ,হৃদয়বিদারক খুনের ঘটনার মতোই। বাদবাকী সাধারণ ঘটনার মতো এই সমস্ত ঘটনা পরিণত হয়ে যায় ক্লোজ চ্যাপ্টারে।


*দূর্গা চরণ রাংখল হত্যাকাণ্ড:
___________________________

         ২১নভেম্বর ২০১৯। এদিন রাতে বক্সনগর থানার কলমচৌড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তায় ডিউটি করছিলেন সাব ইনস্পেক্টর দূর্গা চরণ রাংখল। সামনেই ছিলো বিএসএফ ক্যাম্প। কলমচৌড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তায় পুলিশি নাকার সামনে কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা সাব ইনস্পেক্টর দূর্গা চরণ রাংখলকে মুহূর্তেই পিষে দিয়েছিলো দ্রুত গতিতে আসা একটি গাঁজা বোঝাই গাড়ি।ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল সাব ইনস্পেক্টর দূর্গা চরনের। এই ঘটনার পর গোটা রাজ্যে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব স্পস্ট করে বলেছিলেন, ছাড়া হবে না অভিযুক্তদের।এই ঘটনার পর পুলিশ খুনি গাড়ি সহ ধাপে ধাপে সাত অভিযুক্তকে  গ্রেফতার করেছিলো।

।।প্রয়াত সাব-ইনস্পেক্টর দুর্গা চরণ রাঙ্খল।।

পুলিশ তদন্ত করে আদালতে জমা করেছিলো চার্জশিট। এই চার্জশিটের মধ্যেই বিরাজ করেছিলো ভূত। স্বাভাবিক কারণেই যা,হওয়ার তাই হয়েছে। অনুসন্ধানকারী পুলিশ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে নিজেদের উলঙ্গ করে খুনিদের বাঁচিয়ে দিয়ে আদালতে জমা করেছে দুর্বল চার্জশিট। এই
চার্জশিটের মধ্যে ছিলো অসংখ্য ছিদ্র। তদন্তের চালনি থাকা এই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে বিনা বাধায় বেরিয়ে গিয়েছে অভিযুক্তরা।

সম্প্রতি আদালত সাব ইনস্পেক্টর দূর্গা চরন রাংখল হত্যা মামলার রায় ঘোষনা করে। অভিযুক্তরা আদালত থেকে বেকসুর খালাস হয়ে যায়। আইনের ভাষায় এখন তারা নির্দোষ। আদালত বিচার করেছে তদন্তকারী পুলিশের দেওয়া তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিতে পারে নি।স্বাভাবিক ভাবেই অভিযুক্তদের আদালত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণের অভাবে নির্দোষ বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে খুন হওয়া সাব- ইনস্পেক্টর দূর্গা চরণ রাংখল কি বিচার পেয়েছেন?
বাস্তব অর্থে তদন্তকারী পুলিশ নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারে নি।বিজেপির জামানার পুলিশ তাদের সহকর্মী দূর্গা চরণ রাঙ্খলের সঙ্গেও করেছে বিশ্বাস ঘাতকতা।


*রক্তাক্ত  কনস্টেবল সাবির আহমেদ:
_________________________________
                   ২০১৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর মেলাঘরে আক্রান্ত হয়েছিলেন কর্তব্যরত  পুলিশ কনস্টেবল সাবির আহমেদ মজুমদার। তার পোষ্টিং ছিলো মেলাঘর থানাতেই। স্থানীয় এক সমাজদ্রোহী তথা বিজেপির যুব নেতা রাতের রাজপথে প্রকাশ্যে অবৈধ কার্য্য কলাপ করছিল।তখন কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল সাবির বিজেপি নেতাকে অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন।তখনই বিজেপি নামধারী সমাজদ্রোহী নেতা তার হাতে থাকা রাম দা দিয়ে কনস্টেবল সাবির আহমেদকে আক্রমণ করে।বিজেপি নেতার দায়ের আঘাতে কনস্টেবল সাবিরের হাতে “অস্ত্র” হিসাবে থাকা লাঠিও  দুই টুকরো হয়ে গিয়েছিলো। এরপর বিজেপি নামধারী নেতা দা দিয়ে রক্তাক্ত করেছিলো কনস্টেবল সাবিরকে। তাজা রক্তে কনস্টেবলের গায়ে থাকা খাকি উর্দি লাল হয়ে গিয়েছিল।

প্রতীকী ছবি

পরবর্তী সময়ে পুলিশ থানায় দায়ের করেছিলো মামলা। গ্রেফতার করা হয়েছিল বিজেপি নেতাকে।দুর্ভাগ্যের বিষয় পুলিশ রিমান্ডে নিতে পারে নি। এক দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পায়। তদন্তকারী পুলিশ টুকরো হয়ে যাওয়া লাঠি ও কনস্টেবলের রক্ত মাখা খাকি উর্দি সিজ করেছিলো। আজও থমকে আছে এই মামলা। পুলিশ এখনও জমা করে নি চার্জশিট। তাই প্রকাশ্যে ঘুরছে অভিযুক্ত  বিজেপি নেতা। বরং বর্তমানে  তার রাজনৈতিক পদোন্নতি হয়েছে। বুকের সিনা ফুলে হয়েছে ১৪ ইঞ্চি। কিন্তু পুলিশ নেতা বাবুর রোমে স্পর্শ করতে পারে নি। ছি: ছি:। এক্ষেত্রেও মেলাঘর থানার তদন্তকারী পুলিশ তাদের সহকর্মী রক্তাক্ত কনস্টেবলকে আজও বিচার পাইয়ে দিতে ব্যর্থ।


প্রণব সেনগুপ্ত (অবসর প্রাপ্ত ইনস্পেক্টর)

মাদক মাফিয়ারা টার্গেটে ইন্সপেক্টর:
__________________________________
                পরবর্তী সময়ে পুলিশ থানায় দায়ের করেছিলো মামলা। গ্রেফতার করা হয়েছিল বিজেপি নেতাকে।দুর্ভাগ্যের বিষয় পুলিশ রিমান্ডে নিতে পারে নি। এক দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পায়। তদন্তকারী পুলিশ টুকরো হয়ে যাওয়া লাঠি ও কনস্টেবলের রক্ত মাখা খাকি উর্দি সিজ করেছিলো। আজও থমকে আছে এই মামলা। পুলিশ এখনও জমা করে নি চার্জশিট। তাই প্রকাশ্যে ঘুরছে অভিযুক্ত  বিজেপি নেতা। বরং বর্তমানে  তার রাজনৈতিক পদোন্নতি হয়েছে। বুকের সিনা ফুলে হয়েছে ১৪ ইঞ্চি। কিন্তু পুলিশ নেতা বাবুর রোমে স্পর্শ করতে পারে নি। ছি: ছি:। এক্ষেত্রেও মেলাঘর থানার তদন্তকারী পুলিশ তাদের সহকর্মী রক্তাক্ত কনস্টেবলকে আজও বিচার পাইয়ে দিতে ব্যর্থ। বছরের বাম জামানতেও নানান সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন পুলিশ কর্মীরা। পুলিশ নিধন যজ্ঞে বিজেপি জামানা থেকে কোনো অংশে কম ছিলো বাম শাসন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের স্বর্ণ যুগে মাদক কারবারীরা দূর্গ চরণ রাঙ্খলের মতোই গাড়ি দিয়ে পিষে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো ইন্সপেক্টর প্রণব সেনগুপ্তকে। বর্তমানে তিনি অবসরে চলে গিয়েছেন।

।।এনকাউন্টার।।(প্রতীকী ছবি)

ঘটনা ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর। এই সময় প্রণব সেনগুপ্ত ছিলেন আমতলী থানার ওসি। তিনি রাজ্য পুলিশের একজন ডাক সাইটের পুলিশ অফিসার। প্রণব সেনগুপ্তকে বলা হয়ে থাকে  রাজ্য পুলিশের এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট। রাজ্যের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন এনএলএফটি – এটিটিএফও সমীহ করতো এই জাঁদরেল পুলিশ অফিসারকে। প্রনব নিজের হাতেই ২০ থেকে ২৫ জন জঙ্গিকে বিভিন্ন সময়ে এনকাউন্টার করেছিলেন। অথচ এই সাহসী  পুলিশ অফিসারকেও  মাদক কারবারীদের কাছে হার মানতে হয়েছিলো।কারণ নেপথ্যে ছিলো মাদক কারবারের রাজনৈতিক গড ফাদারদের মস্তিষ্ক।
              ঘটনার দিন প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে আমতলী থানার সামনে পুলিশী নাকের সামনে ব্যারিকেড করে বসেছিলেন ওসি প্রনব সেনগুপ্ত। সঙ্গে ছিলো পুলিশ কর্মীরা। পুলিশের এম্বুশের খবর আগাম পৌঁছে গিয়েছিল মাদক কারবারীদের ডেরায়। তাই কারবারীরাও পাল্টা আক্রমণের ছক কষে। আগ্নেয়াস্ত সমিত গাঁজা বোঝাই গাড়িটি আমতলীর সামনে থাকা পুলিশী নাকার কাছে আসতেই,গাড়িটিকে থামার নির্দেশ দিয়েছিলেন ওসি প্রনব সেনগুপ্ত।

গাঁজা বোঝাই গাড়ি (প্রতীকী ছবি)

কিন্তু মাদক কারবারীরা গাড়ি না থামিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসার প্রনব সেনগুপ্তকে সরাসরি ধাক্কা দেয় । এবং সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ছিটকে পড়েন জাতীয় সড়কে। রক্তে লাল হয়ে যায় গোটা সড়ক।ভেঙ্গে গিয়েছিলো আমতলী থানার তদানীন্তন ওসির প্রণব সেনগুপ্তের হাত, পা, পাজর। বরাত জোরে তিনি প্রাণে বেচেঁ গিয়েছিলেন। খবর সমস্ত পুলিশ নেমে ছিলো মাঠে। শেষ পর্যন্ত ঘটনার জড়িত গাড়িটিকে আমতলী থানার সীমান্তবর্তী গ্রাম
অশ্বিনী মার্কেট এলাকায় চাকাতে গুলি করে আটক করেছিলো।কিন্তু পালিয়ে গিয়েছিলো চালক ও মাদক কারবারীরা । গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল গাজার প্যাকেট ও পিস্তল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের  হলেও সত্যি এই  মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আজও আদালতে হয় নি চার্জ গঠন। শাস্তি তো অনেক দূর। তবে অভিযুক্তদের সনাক্ত করেছিলো পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের দু :সাহস দেখাতে পারেনি। এটা কি রাজ্য পুলিশের লজ্জা না?

রাজনৈতিক গড ফাদার (প্রতীকী ছবি)

*সাব-ইনস্পেক্টর বাদল বিশ্বাস হত্যাকাণ্ড:
____________________________________
           ১৯৮৮- র জোট কংগ্রেস – টিইউজেএস সরকারের জামানায় শহরের আমতলী থানাধীন সিদ্ধিআশ্রম এলাকায় রাতের অন্ধকারে খুন হয়েছিলেন সাব- ইনস্পেক্টর বাদল বিশ্বাস। তিনি ছিলেন আমতলী থানায় কর্মরত।স্কুটার চেপে রাতে ডিউটি সেরে থানা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ।তখন যমদূতরা তাকে সিদ্ধি আশ্রম এলাকার জাতীয় সড়কে আটক করেছিলো। দা দিয়ে টুকরো টুকরো করেছিলো বাদল বিশ্বাসের গোটা শরীর। রক্তে লাল হয়েছিলো সাব- ইনস্পেক্টর বদলের স্কুটার। ঘটনার পর আমতলী থানায় দায়ের করা হয়েছিল খুনের মামলা। নির্দিষ্ট লোকজনের নাম দিয়ে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে নি। বাদল বিশ্বাসের মূল খুনী আজও বহাল তবিয়তে। সিদ্ধি আশ্রম এলাকার গেলেই দেখা যায় তাকে। অবশ্যই এখন এই “খুনি” এখন  বয়সের ভারে ন্যুব্জ।

প্রতীকী ছবি

কংগ্রেস – টিইউজেএস জোট জামানা থেকে বাম জামানা এবং হালের রাম রাজত্বে খুন হওয়া বা  আক্রান্ত হওয়া পুলিশ কর্মীরা কোনো দিনই সুবিচার পায় নি। তার জন্য দায়ী খোদ তাদের সহকর্মীরাই । মূলত উচু তলার দালাল সুবিধাভোগী আইপিএস – টিপিএস- আফিসাররা।কালে কালে এই কদর্য রূপ ফুটে উঠেছে রাজ্য আরক্ষা দপ্তরের অলিন্দে। পুলিশ মহানির্দেশক থেকে শুরু করে গোটা স্বরাষ্ট্র দপ্তর রাজনীতির চক্রবুহ্য থেকে এক জঘন্য সিস্টেমের দাস হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক শক্তির নির্দেশে সাধারন মানুষ হেনস্তা করতে উস্তাদ রাজ্য পুলিশ।

কিন্তু নিজেদের সহ-যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘটিত জঘন্য অপরাধ গুলির কুশীলবদের আইন মেনে শাস্তির যুপকাষ্ঠে নিয়ে যেতে ব্যর্থ বাঘা বাঘা পুলিশ আধিকারিকরা। এই চিত্র আজও জ্বল জ্বল করছে। তার সর্ব শেষ নিদর্শন দূর্গা চরণ রাংখল হত্যা মামলা।
ছি: ছি:। ত্রিপুরা পুলিশের কি একেবারেই লাজ – লজ্জা নেই? নাকি তারা নাম লিখিয়েছে সমাজের নির্লজ্জদের খাতায়? এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিতে পারবেন রাজ্য পুলিশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *