ডেস্ক রিপোর্টার, আগরতলা।।
         নিরাপত্তাহীন বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগার।কারাগারের নিরাপত্তার চক্রব্যুহ ভেদ করে পালিয়ে গিয়েছে দাগী জঙ্গি স্বর্ণ কুমার ত্রিপুরা।এই নিয়ে মোট তৃতীয় বার কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছে জঙ্গি স্বর্ণ কুমার।জঙ্গি স্বর্ণ কুমার পালিয়ে যাওয়ার
ঘটনার দায় ভার কে নেবেন?সাব – জেলার দেবাশিষ শীল,  আইজি প্রিজন আবুল রমেশ রেড্ডি নাকি খোদ দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা?না, তারা কেউই দায়ভার নেবেন না। শুধু মাত্র কয়েকজন কারারক্ষীকে চাকরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেই দায়িত্ত্ব খালাস।অন্তত বিশালগড় সেন্ট্রাল জেলের
পূর্বের ঘটনাগুলি এটাই ইঙ্গিত করছে।
            বিশালগড় সেন্ট্রাল জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা একজন দাগি অপরাধী।তার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ ও অস্ত্র আইন সহ পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ স্বর্ণকুমারকে গ্রেফতার করেছিলো। স্বর্ণকুমারের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ ছিল, বিদেশি এটিএম হ্যাকার হাকান জাম্বুর খানকে জিবি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা । এই কাজে লিপ্ত ছিলো স্বর্ণকুমারের ভাগ্নেও। তাও আবার তার নির্দেশেই।


দাগী অপরাধী স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা এখন পর্যন্ত মোট তিনবার নিরাপত্তার চক্রব্যূহ ভেদ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

প্রথমবার ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর। এই সময় বিশালগড় সেন্ট্রাল জেল থেকে কারা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে স্বর্ণকুমার পালিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পর কারা দপ্তর সেন্ট্রাল জেলের তৎকালীন সুপার সন্তোষ বাহাদুরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। সঙ্গে ঘটনার সময় জেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কারা রক্ষীকে। পরবর্তী সময়ে স্বর্ণ কুমারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালের জুন মাসে। এই সময় স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা অবস্থান ছিল সাব্রুম সাব জেলে। সেখান থেকে কারা রক্ষীদের বোকা বানিয়ে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা পালিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পর সাব্রুম সাব জেলের জেলার কাজল দেব সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত রক্ষীদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলো। এরপর স্বর্ন কুমারকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছিল।

।।দপ্তরের মন্ত্রী ও সাব – জেলার।।

তৃতীয় বার ২০২৪ সালের ১৩ মে। বিশালগড় সেন্ট্রাল জেলের সমস্ত রক্ষীদের চোখে গোলক ধাঁধা লাগিয়ে কারাগার থেকে চম্পট দেয় স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা। কিন্তু এই ঘটনার পর কারা দপ্তর এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের সাব জেলার দেবাশীষ শীলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। কারণ দেবাশীষ শীলের  উপর নাকি খোদ দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমার আশীর্বাদ রয়েছে। সেন্ট্রাল জেলে কান পাতলেই শোনা যায় এই সংক্রান্ত তথ্য।


কারাগার সূত্রের খবর, গত কয়েকদিন ধরেই স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা অ্যালুমিনিয়ামের ভাঙ্গা জিনিসপত্র দিয়ে একটি চাবি তৈরি করেছিল। এই চাবি ব্যবহার করেই লকআপ খুলে পালিয়ে যায় স্বর্ণ ।সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনার সময় জেলের লকআপের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কারা রক্ষী রাজু দেববর্মা ও তপন রুপিনী। নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যায় এই দুই কারারক্ষী লকআপ চেক করেন। তখন লকাপের ভেতরেই ছিল জঙ্গি স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা। দুই রক্ষী লকআপ চেক করে চলে যাওয়ার পর স্বর্ণকুমার তার হাতে থাকা চাবি দিয়ে লকআপ খুলে নেয় এবং বেরিয়ে যায় লকআপ থেকে। এরপর স্বর্ন জেলের প্রধান কারা প্রহরের রুমের দিকে ছুটে যায়। এবং দেখে আসে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তার পরিবেশ। কিছুক্ষণ পর সে আবার প্রধান কারা প্রহরীর রুমের কাছে যায়। তখন তার হাতে ছিল একটি প্যাকেট। ধারণা করা হচ্ছে এই প্যাকেটেই ছিল পালিয়ে যাওয়ার জন্য দড়ি। এবং এই দড়ি ব্যবহার করেই স্বর্ণকুমার জেল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিছুক্ষণ পর প্রধান কারা প্রহরীর রুমের সামনে বিশ্রাম নিতে আসেন দুই রক্ষী মনোরঞ্জন সরকার ও ভানু দেববর্মা। ততক্ষণে স্বর্ণকুমার সেন্ট্রাল জেলের ওয়াল টপকে পালিয়ে যায় নিরাপদ ডেরায়।এই গোটা চিত্র ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা সিসি ক্যামেরার লেন্সে।


কারা রক্ষীদের দাবি, এই ঘটনার পর সমস্ত দোষ বর্তাবে তাদের উপরেই।কিন্তু কারা প্রশাসনের অন্দর মহল ঘাটলে বেরিয়ে আসবে বুদ বুদ দুর্গন্ধ।অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী, জেলে নিয়মিত লকআপ দেখা শুনা হয় না। মন্ত্রী সান্তনা চাকমার আশীর্বাদ ধন্য সাব-জেলার দেবাশিষ শীল নিজেই থাকেন উদাসীন। জেলে তিনি বেশি সময় থাকেন না। বরং দপ্তরের মন্ত্রীর সরকারী আবাসে গিয়ে ফরমায়েশ খাটতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে দেখাশোনা করার কোন লোকজন থাকে না। অভিভাবকহীন জেলের নিরাপত্তার এই ঢিলে ঢালা অবস্থাকে  কাজে লাগিয়ে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার মতো দাগি অপরাধী নির্দ্বিধায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এখন তার দায় ভার নেবে কে? উত্তর দেবেন কি মন্ত্রী মহোদয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *