শিলচর ডেস্ক,২৭ ডিসেম্বর।।
        বরাক পৃথকীকরণের দাবিতে শহর শিলচরের বিভিন্ন জনবহুল স্থানে হোর্ডিং লাগানো হয়েছে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে।  এতে বরাক বঞ্চনা সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি পালনে সরকারি অনীহা, পৃথক বরাকের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বুধবার এই নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে  তাঁদের সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরলেন মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
    এদিন সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, যে বরাক পৃথকীকরণের দাবিতে ইতিমধ্যে তাঁরা কোলকাতা ও দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে পেশ করেছেন তাঁদের স্মারকপত্র, যাতে এই উপত্যাকার প্রতি রাজ্য সরকারের দীর্ঘ অবহেলা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিষয়গুলিকে সবিস্তারে পেশ করা হয়েছে। সবিস্তারে পেশ করা হয়েছে এই উপত্যকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এখানকার অপরীক্ষিত অবহেলিত প্রাকৃতিক সম্পদ,জনসম্পদ তথা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা। কিন্তু এখন অব্দি এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি, কোন আলোচনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি। তাই এখন তাঁরা এই ব্যাপারে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবং সেই লক্ষ্যে জনমত সংগঠিত করার প্রথম প্রয়াস হিসেবেই শিলচর শহড় জুড়ে এই সম্পর্কিত হোর্ডিং লাগানো হয়েছে।


বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন, যে এনআরসির কাজ সম্পুর্ন না করে ১৯ লক্ষ নাগরিকদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা, ডিলিমিটেশন করে বরাকের রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করা, ইচ্ছাকৃতভাবে বরাকের চাকুরি প্রার্থীদের বঞ্চনা করা, বরাকের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য না দিয়ে,সিন্ডিকেটরাজের মাধ্যমে এই উপত্যাকার অর্থনৈতিক শোষন, ভাষিক আগ্রাসন ও বিদ্বেষ সহ যেসব বিষয় এইসব হোর্ডিংএ উল্লেখিত হয়েছে তা নিয়ে কারো দ্বিমত থাকতে পারেনা এবং রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকেও তাই এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এসবের সমাধানের লক্ষ্যে সচেষ্ট হতে হবে।অন্যথা তাঁদের আন্দোলন চলবে এবং আগামীতে তা বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ নেবে।


প্রদীপ বাবু এদিন আরো  বলেন যে বরাক পৃথকীকরণের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণসমূহ সাধারণের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরতে তাঁদের একটি পুস্তিকা প্রকাশের কাজ শেষের পথে। তিনি বলেন যে আগামীতে বরাকের বিভিন্ন প্রান্তে সভা করে তাঁরা এই পুস্তিকার পাঁচ লক্ষ কপি জনগনের কাছে পৌঁছে দেবেন। এছাড়া বরাকের তিন জেলায় এই ব্যাপারে বিডিএফ এর পক্ষ থেকে গন কনভেনশন আয়োজন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন এই ইস্যুতে তাঁদের গনতান্ত্রিক আন্দোলন তৃনমূল স্তরে সংগঠিত করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন বাধাবিপত্তি আসবেই,  সে
সরকারি তরফে, কিংবা বরাকের কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের তরফে,এসব তাঁরা জানেন এবং এসব নিয়ে তাঁরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নন।


তিনি বলেন যে বরাক পৃথকীকরণের অন্যতম উদ্দেশ্য বরাকের একশ শতাংশ কর্মপ্রার্থীদের জীবিকার নিশ্চিতকরণ, অর্থনৈতিক ভাবে এই উপত্যকাকে উত্তর পূর্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন যে এই উপত্যকায় মেধার অভাব নেই, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অফুরন্ত, শুধু সরকারি চক্রান্ত আর আমাদের চেতনা হীনতার জন্য সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বরাকের যুবসমাজকে এই ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়েছেন।


প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন যে ,যে কোন বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য আর্থিক সংস্থান জরুরী। এই ব্যাপারে এযাবৎ অনেকেই সাহায্য করায় বিগত কর্মসূচিগুলি রূপায়ণ সম্ভব হয়েছে। তবে আগামীতে যেহেতু আরো বৃহত্তর কর্মসূচি নিতে হবে তাই এই ব্যাপারে এদিন আপামর বরাক বাসীকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি। প্রদীপবাবু এদিন স্বামী বিবেকানন্দ এবং নেতাজির উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন যে নিজের তথা পারিপার্শ্বিক সমাজের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা এবং সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়াতেই মানবজীবনের চরিতার্থতা প্রকৃত রূপ পায়। তাই বরাক পৃথকীকরণের এই স্বপ্নকে সাকার করার জন্য সবাইকে সক্রিয় হতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে। এছাড়া কোন বিকল্প নেই।বিডিএফ এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এই খবর জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *