ডেস্ক রিপোর্টার,২৭জানুয়ারি।।
বিজেপি’র বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন চষে বেড়াচ্ছেন গোটা রাজ্য।” ২৩-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র টিকিটে আর লড়বেন না”। এই ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।তাহলে পরিষ্কার বিধায়ক আর বিজেপিতে থাকছেন না।তাহলে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? এই লক্ষ টাকার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। বিধায়ক নিজেও খোলসা করেন নি এই বিষয়টি।তবে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন অনুগামীদের।
রাজনীতিকরা বলছেন, এই মুহূর্তে সুদীপ রায় বর্মন ঝুঁকছেন কংগ্রেসের দিকে।কংগ্রেসই তার প্রথম পছন্দ।অন্তত অনুগামীদের এই ইঙ্গিতই করেছেন বিজেপি’র বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। কংগ্রেসে যাওয়ার আগে নিজের ঘর গুছানোর কাজ করছেন সুদীপ রায় বর্মন।
সুদীপ রায় বর্মন কংগ্রেসে গিয়ে তিনি কতটা উজ্জীবিত করতে পারবেন “দল”কে? উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্ন। নিঃসন্দেহে সুদীপ কংগ্রেসে যোগ দিলে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়বে।কিন্তু তিনি কি বিজেপিকে পরাজিত করতে পারবেন ২৩-র ভোটযুদ্ধে?
১৯৯৩ সালে কংগ্রেস-টিইউজিএস জোটকে পরাজিত করে ক্ষমতায় এসেছিলো সিপিআইএম।তারপর ১৯৯৮,২০০৩,২০০৮ ও ২০১৩।এই চারটি বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস রাজ্যের তৎকালীন শাসক দল সিপিআইএমকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেনি।তখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি ছিলো কংগ্রেস।এই সময়ে সুদীপ রায় বর্মন কখনো কংগ্রেসের প্রধান সেনাপতি বা কখনো “স্ট্রাইকিং লিডার” ছিলেন।কিন্তু কখনো রাজ্যকে বামমুক্ত করতে পারেননি।তবে লড়াই করেছিলেন আপ্রাণ।
প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে থাকা নিন্দুকরাই কখনো কখনো সুদীপ রায় বর্মনের বিরুদ্ধে তুলেছিলো নানান অভিযোগ। সুদীপের অনুগামীদের কথায় তা ছিলো “অপবাদ”।কমিউনিস্টদের সঙ্গে সুদীপ রায় বর্মন নাকি খেলেছেন গট-আপ-গেম।তবে এখন পর্যন্ত এই সমস্ত অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।এটাও বাস্তব বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সুদীপ রায় বর্মন। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাই কমান্ডের উপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস।
কংগ্রেসের দুর্বলতার সুযোগে রাজ্যে বেড়ে ওঠে বিজেপি। মানুষ বুঝে গিয়েছিলো কংগ্রেসকে দিয়ে কিছু হবে না।তখন মানুষ বিজেপিকে ভরসা করতে শুরু করেছিলো।কংগ্রেসের ভোট সব ঝুঁকে যায় বিজেপি’র দিকে। ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে তার পরিণাম দেখতে পেয়েছে রাজ্যের মানুষ।
রাজনীতিকরা বলছেন, ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুদীপ রায় বর্মন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।তিনি বুঝে গিয়েছিলেন বিজেপি’র জোয়ারের বিপক্ষে থাকলে রাজনীতির ময়দানে সুবিধা করতে পারবেন না। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ঝুঁকে পড়েন পদ্ম শিবিরে।আবার একই ভাবে ১৮-র ভোটের আগে সমস্ত আবাম ভোটকে একত্রিত করতে বিজেপিও টেনে এনেছিল সুদীপকে। নির্বাচনে বামেদের মসনদচুত্য করতে ভূমিকা ছিলো সুদীপেরও। এটা অস্বীকার করতে পারবে না বিজেপি নেতৃত্বও।
রাজনীতিকদের প্রশ্ন, সুদীপ রায় বর্মন কংগ্রেসের মুখ হয়ে রাজ্য রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন।তিনি যদি ফের কংগ্রেসে যোগ দেন তাহলে কি বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন? কারণ কংগ্রেস নেতা হিসেবে সুদীপ রায় বর্মন রাজ্যের মানুষকে পরিবর্তনের স্বাদ এনে দিতে পারেননি। এখন কি কংগ্রেসের ব্যর্থ নেতা সুদীপ রায় বর্মনের উপর আস্থা রাখতে পারবে মানুষ? “মনে হয় না।”—এমনটাই বলছেন রাজনীতির বিশারদরা।কারণ ২০১৮-র পরিবর্তন ছিলো দীর্ঘ ২৫বছরের চাহিদা।এবারও রাজ্যজুড়ে সরকার বিরোধী একটা হাওয়া আছে।তবে এই “হাওয়া” কিন্তু ২০১৮-র মতো তেজী হবে না।এই কারণেই সুদীপ রায় বর্মন কংগ্রেসে গেলেও আক্ষরিক অর্থে তিনি বিজেপি’র জন্য ফ্যাক্টর হবে তা ঠিক,কিন্তু এই ফ্যাক্টরের তেজস্ক্রিয়তা কতটা হবে? বাস্তবে কি সুদীপ পারবেন বিপ্লব দেবকে ক্ষমতাচ্যুত করতে? যথা সময়েও জানা যাবে এই প্রশ্নের উত্তর।তার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা দিন।
