ডেস্ক রিপোর্টার, আগরতলা।।
                   দুয়ারে ঘন্টি বাজছে ২৩-র মহারণের। পাহাড়ে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর। পাহাড়ের ক্ষমতাসীন দল তিপ্রামথার নেতৃত্বে দাবি, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ের কুড়িটি আসনই থাকবে তাদের দখলে। তাহলে পাহাড়ের এই আসন গুলিতে কি করবে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি? তারা কি প্রদ্যুতের পাহাড়ে ধরাশায়ী হবে? নাকি নতুন কোন কৌশল নিয়ে প্রদ্যুৎকে আটকানোর চেষ্টা করবে? রাজনৈতিক মহলে যখন এই প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি করছে, ঠিক তখনই রাজ্যের জনজাতিদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে পাহাড়ে হাজির হয়ে গেল “জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ”। অর্থাৎ প্রদ্যুৎ কিশোরকে আটকাতেই বিজেপি পাহাড়ে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে এই সংগঠনকে।  ইতিমধ্যে জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ রাজ্যের লাল পাহাড়ে শুরু করে দিয়েছে বিচরণ। এবং প্রদ্যুতের জনপ্রিয়তাতে আঘাত হানতে তারা টেনে আনছে সংবিধানের ৩৪২ নম্বর ধারাও।


২৩- র ভোট যুদ্ধে পাহাড় রাজনীতিতে প্রদ্যুৎ কিশোর ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন।এই সহজ সত্যটি রাজ্যের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে । আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ে তিপ্রামথা আউটস্ট্যান্ডিং পারফরমেন্স করলে বিপাকে পড়ে যাবে বিজেপি। এই বিষয়টি বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন গেরুয়া শিবিরের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। তাদের কাছে প্রদ্যুৎকে আটকানোর মতো জনপ্রিয় কোন জনজাতি নেতা নেই।  গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের ডাক দিয়ে প্রদ্যুৎ কিশোর সমস্ত উপজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে এক সূত্রে গেঁথে ফেলেছেন। তাছাড়া বিজেপি – আইপিএফটি দলেও হানা দিচ্ছেন প্রদ্যুৎ। এবং ঘটাচ্ছেন উইকেটের পতন।আর তাতেই বিপদ বাড়ছে পদ্ম বনেও। প্রদ্যুতের উইপোকা যেকোনো সময় খোকলা করে দিতে পারে গেরুয়া শিবিরের সাজানো পদ্ম বনকে। তাই প্রদ্যুৎকে আটকাতে খুব কৌশল করে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চকে। এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিকরা।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য,জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ রাজ্যের ১৯ টি জাতি গোষ্ঠীর সমাজপতিদের এক সূত্রে গেঁথে ফেলার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই তাদেরকে নিয়ে গোমতী জেলাতে ম্যারাথন বৈঠকও করেছে জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের নেতৃত্ব। পাহাড়ে ভোট ময়দানে জনজাতিদের কিভাবে বিজেপির অনুকূলে রাখা যায় তার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ। রাজনীতিকদের ভাষায়, মূলত জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের মূল শিকড় প্রোতিথ আছে নাগপুরস্থিত আরএসএসের সদর দপ্তরে।
            খবর অনুযায়ী, জনজাতিরা সুরক্ষা মঞ্চের নেতৃত্বের দাবি, যারা জনজাতি হয়েও ধর্ম পরিবর্তন করছে তারা জনজাতি হিসাবে সরকারী সুযোগ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রয়োজনে সংবিধানের ৩৪২নম্বর ধারা সংশোধন করোক কেন্দ্রীয় সরকার। জনজাতি হয়েও যারা জনজাতির নীতি রেওয়াজকে মান্যতা দিচ্ছে না, তাদেরকে জনজাতিদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা উচিত।
            রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, “জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ” কি বলতে চাইছে, তা মানুষের কাছে পরিষ্কার। পাহাড়ে ধর্মান্তরের বিষয়টি সামনে এনে জনজতিদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ তিপ্রামথার বড় অংশ খ্রিষ্টান। তবে তারা ধাপে ধাপে হিন্দু থেকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের নেতৃত্ব এই ধর্মান্তরন আটকানোর পাশাপাশি জনজাতিদের ভোট বিজেপিতে মেরুকরণ করার কৌশল নিয়েই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কৌশলগত ভাবে জনজাতিদের অভিমুখ বিজেপির দিকেই ঘুরানোর চেষ্টা করছে। এখন দেখার বিষয় “জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ”কে সামনে রেখে বিজেপি কিভাবে প্রদ্যুৎকে আটকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে? নাকি প্রদ্যুৎ জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চকে পাল্টা বোকা বানিয়ে মূল লক্ষ্যে পৌঁছে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *