ডেস্ক রিপোর্টার, ৯এপ্রিল।।
    সাঙ্গ হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন।ফলাফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাজ্যের মানুষ। নির্বাচন শেষ হতেই ফের  বামেদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন রাজ পরিবারের সদস্য তথা তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর।
   প্রদ্যুৎ সরাসরি আক্রমণ করেছেন বামপন্থীদের। প্রদ্যুৎ বলেন, এখন ভোট শেষ হয়েছে।রাজ্যের কিছু কমিউনিষ্ট নেতা  ফিরে যেতে পারেন তাদের প্রিয় বিনোদনে।আক্রমণ করতে পারেন প্রয়াত রাজ পরিবারের সদস্যদের।
শুধু কি প্রদ্যুৎ? তিপ্রামথার অন্য নেতারাও কমিউনিষ্টদেরই আক্রমণ করছেন। অর্থাৎ ভোট শেষ হতেই কমিউনিস্টদের আক্রমণের কৌশল নিয়েছে গোটা তিপ্রামথা দল।বামেরাও কম যায় নি। রাজ্যে বাম শাসনের দীর্ঘ সময়ের কান্ডারী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সুযোগ পেলেই আক্রমণ করতেন রাজ পরিবারকে। আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার বলে খ্যাত মহারাজা  বীরবিক্রম কিশোর মানিক্যের উন্নয়ন মূলক কাজ কর্মকে মানিক কখনো মেনে নেন নি। আপাদস্তক বামপন্থীরা বরাবর ছিলো রাজ পরিবারের মস্ত বড় সমালোচক।


রাজ্য রাজনীতিতে বরাবর কমিউনিস্ট ও ত্রিপুরার রাজ পরিবার দুই মেরুতেই অবস্থান করে আসছে। তারা বরাবর একে অপরের তীব্র সমালোচক। বাম শাসনে কমিউনিস্ট নেতদের আক্রমণের ফলাতে ছিলো ত্রিপুরার রাজ পরিবার। রাজ্যের অনুন্নয়ন, জনজাতিদের পিছিয়ে থাকা সহ ৮০- র জুনের   দাঙ্গার পেছনেও কমিউনিস্টরা রাজ পরিবারের ভূত খুঁজে বেড়াতেন।ত্রিপুরার রাজতন্ত্রকে কখনো মেনে নেয় নি  বামপন্থী নেতৃত্ব। কিন্তূ সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসতেই রাজ পরিবারের সদস্য তথা  তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর ও রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর হয়। অবশ্যই দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আগেই অনেক গভীরে প্রোথিত ছিলো। প্রদ্যুৎ ও জিতেন্দ্রর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্কও গাঢ় হয়। পরিস্থিতি প্রতিকুল থাকায় বামেদের দিক থেকে প্রদ্যুৎকে নিয়ে গদ গদ একটু বেশিই ছিলো।


রাজ পরিবারের তীব্র সমালোচক প্রাক্তন কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও তিপ্রামথার গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকেও সমর্থন করেছিলেন প্রকাশ্যে।আসলে হাতি ফান্দে পড়লে যা হয়,মানিক সরকারের তাই হয়েছিলো। সমস্ত নীতি, আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে মানিক সরকার গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের ফেরী ওয়ালা প্রদ্যুৎ কিশোরের হয়ে ব্যাটন ধরেছিলেন। কমিউনিস্টরা স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রদ্যুৎকে তোয়াজ করলে ভোট ময়দানে তিপ্রামথাকে তারা পাশে পেয়ে যাবে। প্রদ্যুৎ কমিউনিস্ট নেতাদের এই মনোভাব বুঝতে পেরে তাদেরকে ছড়িতে করে ঘুরাতে শুরু করেছিলেন।  আর কমিউনিস্ট নেতারা প্রদ্যুৎ কিশোরের কথায় বেশ করে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে নেচে উঠেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন পাহাড়ের জনজাতি ভোট  ব্যাংক এবারও ত্রাতার ভূমিকা পালন করবে।দল ও  প্রদ্যুৎ কিশোরের মাঝ খানে অনুঘটকের মতো কাজ করেছিলেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। আক্ষরিক অর্থে প্রদ্যুৎ কিশোরের সঙ্গে  সুসম্পর্ক রেখে লাভবান হয়েছেন জিতেন্দ্র চৌধুরীর। কমিউনিস্টদের নয়। নির্বাচনে সাব্রুম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন  মথার কোনো প্রার্থী দেননি। কমিউনিস্ট জনজাতি নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী নির্বিঘ্নে তার নির্বাচনী বৈতরনী  অতিক্রম করতেই প্রদ্যুৎ কিশোরের এই সিদ্ধান্ত। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর প্রদ্যুৎ – জিতেন্দ্রর এই রসায়ন প্রকট হয়ে যায় জনমনে। ভোটের পর অবশ্যই কমিউনিস্টদের কাছে ভিলেন হয়ে ওঠেছিলেন মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর।


প্রদ্যুৎ কিশোরের মতোই তিপ্রামথার নেতা তথা ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজিত প্রার্থী অমিয় নোয়াতিয়া তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন কমিউনিস্টদের। তিনি  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিখেছেন,” তিপ্রাসাদের ধ্বংসের মূল কারণ কমিউনিস্টরা। এখন তারা নাটক করছে।”
তার আগে অবশ্যই তিপ্রামথার চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ কিশোর বলেছিলেন, “এখন ভোট শেষ হয়েছে।রাজ্যের কিছু কমিউনিষ্ট নেতা  ফিরে যেতে পারেন তাদের প্রিয় বিনোদনে।আক্রমণ করতে পারেন প্রয়াত রাজ পরিবারের সদস্যদের।”
   রাজনীতিকরা বলছেন, ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে  তিপ্রা মথা নেতৃত্ব ধারাবাহিকভাবে বামেদের আক্রমণ করার পেছনেও রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড় থেকে আসনের নিরিখে বামেদের ঝুলি শূন্য করে দিয়েছে তিপ্রামথা। সমতলেও বেশ কিছু বিধানসভা আসনে  মথা বামেদের গুড়ি কেটে দিয়েছে। তিপ্রা মথার ভোট কাটাকাটিতে নিশ্চিতভাবে জয় পেয়েছে বিজেপি। এবার মথার লক্ষ্য পাহাড়ে বামেদের স্বল্প পরিমাণে থাকা ভোট ব্যাংক গ্রাস করা। তাহলেই পাহাড় রাজনীতি থেকে চিরতরে বামপন্থীদের বিলুপ্ত করে দিতে পারবেন প্রদ্যুৎ কিশোর। এবং একই সঙ্গে দীর্ঘ বছর ধরে কমিউনিস্টদের উপর চেপে থাকা রাজনৈতিক আক্রোশের প্রতিশোধও নিতে সক্ষম হবেন প্রদ্যুৎ। অন্তত প্রদ্যুৎ কিশোরের বর্তমান রাজনৈতিক গ্রাফ দেখলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় রাজনীতিকদের কাছে। প্রদ্যুৎ কিশোরের এই রাজনৈতিক অংক সফল হলে পাহাড় থেকে নিশ্চিতভাবে ক্রিম তুলতে পারবে ভারতীয় জনতা পার্টিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *