ডেস্ক রিপোর্টার,৭ডিসেম্বর।।
আগামী ১৫ডিসেম্বর বড়সড় সিদ্ধান্ত নিতে চলছে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস।এদিন প্রদেশ সভানেত্রী হিসাবে সুস্মিতা দেবের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করতে পারে তৃণমূল।এমন খবর পাওয়া গিয়েছে বঙ্গ তৃণমূল সূত্রে।
ঘাসফুলের অন্দর মহলের খবর অনুযায়ী, প্রদেশ সভানেত্রী হিসাবে সুস্মিতা দেবের নাম ঘোষণার পাশাপাশি নতুন প্রদেশ কমিটিও ঘোষণা করা হতে পারে।এই নতুন কমিটিতে থাকতে পারে নতুন চমক।তবে একটা বিষয় স্পস্ট, সুবল ভৌমিকের ডানা ছাঁটাই করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিএমসি।
অসম থেকে ভাড়া করে আনা সুস্মিতা দেবকে কেন প্রদেশ তৃণমূলের সভানেত্রী দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘাসফুল শিবির?এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত পুর ও নগর ভোটে দল ২০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেলেও তার পেছনে সুবল ভৌমিকের খুব বেশি ভূমিকা নেই বলে মনে করছে দলের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক।পুর ভোটে প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী দিতে পারেননি সুবল ভৌমিক। বা তিনি প্রার্থী দিলেও এই সকল প্রার্থীরা শেষ সময়ে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।মুর্দা কথা,সুবল ব্যর্থ।শেষ সময়ে অভিষেক ব্যানার্জীকে হাত ধরতে হয়েছিলো সুদীপ রায় বর্মনের।সুদীপ বর্মন ১৫টি আসনে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রার্থী দিয়ে সাহায্য করেন।এই ঘটনার পর বাংলার নেতৃত্বের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়,সুবল ভৌমিকের ক্ষমতা।তাছাড়া ভোটের সময় সুবল ভৌমিকের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি অভিযোগ উঠেছিলো।এই বিষয়টিও নোটিশে রেখেছে দলের হাই-কমান্ড।
অন্যদিকে বঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস ভেবেছিল বিজেপি’র বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেবেন।কিন্তু বেশ কয়েকবার আলোচনার পরও সুদীপ রায় বর্মন চূড়ান্ত ভাবে কিছু জানাননি।এবং হাবেভাবে সুদীপ বুঝিয়ে দেন তিনি বিজেপিতেই থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।প্রয়োজনে তিনি পৃথক দল তৈরি করতে পারেন।তৃণমূল কংগ্রেস বুঝে গেছে সুদীপের জন্য বসে থেকে আর লাভ হবে না।তবে সুদীপের জন্য সর্বদাই দরজা খোলা তৃণমূল কংগ্রেসের।
তৃণমূল কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুবল ভৌমিক বা সুদীপ রায় বর্মনকে(যদি পরবর্তী সময়ে আসেন) দলের মুখ করলে বিজেপি এবং সিপিআইএম তাদেরকে আক্রমনের অনেক উপপাদ্য পেয়ে যাবে।কিন্তু সুস্মিতা দেবের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হবে না। ত্রিপুরার প্রেক্ষাপটে সুস্মিতা দেবকে বিরোধীরা আক্রমণ করার তেমন কোনো রসদ পাবে না। তাঁর বাবা প্রয়াত সন্তোষ মোহন দেবের কিছু বিষয় বড় জোড় আলোচনায় আনতে পারে বিরোধীরা।
কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তা ধোপে টিকবে না,বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজ্যের মহিলা ভোটারদের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী প্রতিমা ভৌমিক। এক্ষেত্রে প্রতিমা ভৌমিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুস্মিতা দেব মহিলা ভোটারদের ভাবাবেগে স্পর্শ করে ভোট আদায় করতে পারবেন। সব মিলিয়ে বিজেপি’র সঙ্গে সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করার জন্য সুস্মিতা দেবের বিকল্প কোনো মুখ নেই প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসে।
সুস্মিতা দেবকে প্রদেশ সভানেত্রী করলে কথা উঠতে পারে বহিরাগত একজনকে এনে কেন ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হলো?এর উত্তরও থাকবে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। কারণ রাজ্যের প্রয়াত কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর মূল ভিটে ছিলো পশ্চিম বাংলায়।তেভাগা আন্দোলনের পর নৃপেন চক্রবর্তীকে কমিউনিস্ট পার্টি ত্রিপুরাতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো সংগঠন তৈরির জন্য। শুধু কি তাই, রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিং রাঠোর মূলত উত্তর প্রদেশের রাজপুত বংশধর। শচীন্দ্র লাল সিংয়ের বাবা ছিলেন রাজার কর্নেল জিন্দাল সিং। ত্রিপুরার রাজা তাকে এনেছিলেন।সেই সুবাদে শচীন্দ্র লাল সিংয়ের বেড়ে উঠা পার্বত্য ত্রিপুরার আকাশে বাতাসে।শেষে তিনি আসেন রাজ্য রাজনীতিতে।রাজ্যের মানুষ এই রাজপুতকে মেনে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে।এই মুহূর্তে শচীন্দ্র লাল সিংয়ের ছেলে আশীষ লাল সিং প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা। সুস্মিতা দেবের বাবা সন্তোষ মোহন দেবও লোকসভা ভোটে রাজ্যের পশ্চিম আসন থেকে জয়ী হয়ে সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন।তাই দলের সভানেত্রী হিসাবে সুস্মিতা দেবের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
