
*অভিজিৎ ঘোষ*
________________
দক্ষিণের রাজ্য তেলেঙ্গানা। রাজ্যটি দখল নিয়েছে কংগ্রেস। ক্ষমতা চ্যুত হয়েছে ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি। কংগ্রেস ও ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির লড়াইয়ের মাঝখানে বিজেপি দখল করেছে আটটি আসন।তেলেঙ্গানার আটটি আসনে পদ্ম ফুল ফোটার পেছনেও অবদান রয়েছে বাঙালির। অর্থাৎ বারবার বিজেপির পাশেই আছে বাঙালি। তার প্রমাণ ত্রিপুরা ও বাংলা। ২৩- র গোড়াতে ত্রিপুরাতেও বাঙালির ভোটেই ক্ষমতায় এসেছিলো বিজেপি।বাংলায় বিজেপি বিরোধী দল। অসমে বিজেপি সরকার গঠনের পেছনেও বাঙালিদের অবদান ভুলতে পারবেন না হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এবার তেলেঙ্গানাতেও বাঙালি ভোটারদের ছোঁয়া ভারতীয় জনতা পার্টির ইভিএমে।

শীরপুর কাগজ নগর।এটি তেলেঙ্গানার একটি
বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি বাঙালি অধ্যুষিত। এখানে প্রায় ৪০ হাজার বাঙালি বসবাস করে।স্বাভাবিক ভাবেই এটা একটা বড় ভোট ব্যাংক।
শীরপুর কাগজ নগর কেন্দ্রটি এতো দিন কখনও কংগ্রেস,আবার কখনো ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির দখলে চলে যেতো। স্থানীয় বাঙালি ভোটারদের কাছেও ছিল না কোনো বিকল্প। কিন্তু ২৩- র তেলেঙ্গানা নির্বাচনে শীরপুর কাগজ নগর বিধানসভা কেন্দ্রের চিত্র এবার পাল্টে গিয়েছে। জনাদেশ পুরোপুরি ভাবে ঝুঁকে পড়েছে বিজেপির দিকে। তার জন্য অবশ্যই কাজ করতে হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে।

নির্বাচনের আগেই বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
শীরপুর কাগজ নগর কেন্দ্রে। কাজে লাগিয়ে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টির বাঙালি সেলকে। এই শাখার বাঙালি নেতারা শীরপুর কাগজ নগরে বিজেপির হয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন।প্রচারে গিয়ে তারা তুলে ধরেছিল দেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাঙালির দীর্ঘ বঞ্চনার বিভিন্ন দিক। উত্তর প্রদেশ থেকে তেলেঙ্গানাতে প্রচারে যাওয়া বিজেপির বাঙালি সেলের নেতা কিশোর বক্তব্যের মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন, “দেশ ভাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জাতি একমাত্র বাঙালি। এদেশে বাঙালির টুটি চেপে ধরার ষড়যন্ত্র দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব লগ্ন থেকেই। জওহর লাল নেহেরুর কংগ্রেসের বাঙালির এই অবস্থা। তিনি বলেন, দেশ ভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু লোকজনকে সন্মানের সঙ্গে ভারতে আনা হয়েছে।

তারা পেয়েছে সমস্ত সুযোগ সুবিধা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু বাঙালিদের সঙ্গে করা হয়েছে অবিচার। তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার বদলে যাযাবরের মতো দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাও আবার ঘন বনাঞ্চল ও টিলাভূমি গুলিতে। হিন্দু বাঙালিরা এটাকে মেনে নিয়েছে।এবং বন পরিষ্কার করে, টিলা কেটে বাস যোগ্য ভূমি তৈরি করেছিল।এটা অবশ্যই বিজেপির বাঙালি সেলের নেতার রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য।

বিজেপির বাঙালি সেলের নেতাদের কথায়, তেলেঙ্গানাতে বিজেপির বাঙালি নেতৃত্বের এই ক্যাম্পেনিং ‘ র সফলতাও এসেছে। তেলেঙ্গানার শীরপুরের বাঙালিরা দুই হাত ভরে ভোট দেয় ভারতীয় জনতা পার্টিকে। এবং ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় বিজেপি আসনটি তুলে নেয় নিজেদের দখলে। ভোটের মুখে তেলেঙ্গানায় অনুষ্ঠিত জনসভায় ত্রিপুরার হয়ে বিজেপির বাঙালি সেলের নেতা রবীন্দ্র দাসও উপস্থিত ছিলেন।

দেশের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী ড:পালভাই হরিশ বাবু ৬৩,৭০২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।তিনি পরাজিত করেছে ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রার্থীকে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৮, ৪২৭ভোট।অবশ্যই বিজেপির এই ফলাফলের জন্য সমস্ত কৃতিত্ব শীরপুরের বাঙালিদের। বলা চলে, তেলেঙ্গানার এক দুষ্প্রাপ্য আসন বাঙালিরা উপহার দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু তারপরও হত ভাগা বাঙালিদের পাশে থাকে না কোনো রাজনৈতিক দল।

ত্রিপুরা থেকে আসাম, মেঘালয় থেকে মনিপুর যখন বাঙালি আক্রান্ত হয়, তখন সবাই কুলুপ এঁটে রাখে মুখে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাঙালির হয়ে কথা বলতে যেন, লজ্জা পান মুখে। এটাই কি প্রাপ্য ছিল দেশের মাটিতে যাযাবর হওয়া বাঙালিদের? আবার কৌশল করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাঙালিদের পিঠে সেটে দেওয়া হয়েছে বিদেশি তকমা। কেন বাঙালিদের বিদেশি বলা হচ্ছে? দেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দল কি এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?