
ডেস্ক রিপোর্টার, ২১আগস্ট।।
১৯৭২ থেকে ১৯৯৩
এবং ১৯৯৮ থেকে ২০১৮।
দুই দফায় মোট পঞ্চাশ বছর। এই সময়ে গোটা ধনপুরে পত পত করতো লাল পতাকা। ধনপুরকে রাজ্যের কমিউনিস্টরা বলে থাকেন ভিয়েতনাম। পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে রাজ্যের ভিয়েতনাম থেকে উঠে এসেছিলেন মাত্র দুই জন বিধায়ক। নিজ নিজ সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে তারা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং অপরাজেয় । একজন প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সমর চৌধুরী। অপর জন সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

১৯৭২ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত সমর চৌধুরী ছিলেন ধনপুরের শেষ কথা। টানা পাঁচটি নির্বাচনে সমর চৌধুরী ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ৯৮- র নির্বাচনে ধনপুরে আসেন সমরের উত্তরসূরি মানিক সরকার। তিনিও ৯৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ধনপুর রেখেছিলেন নিজের মুঠিতে।একই।সঙ্গে শাসন করেছেন গোটা রাজ্য। ত্রিপুরার কমিউনিস্টকে তুলে নিয়ে যান সর্ব ভারতীয় স্তরে। একই সঙ্গে গোটা দেশের কাছে কমিউনিস্ট আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিল ত্রিপুরা।নেপথ্যে ছিলেন ধনপুর কেন্দ্রের এই বিধায়ক। তিনি আজও ধনপুর কেন্দ্রে অপরাজেয়।

২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে ধনপুর কেন্দ্রে বামেদের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসের ছেদ ঘটে। বাম প্রার্থী কৌশিক চন্দ পরাজিত হন। তিনি ধরে রাখতে পারেন নি সমর – মানিকের জয়ের ঐতিহ্য। ধনপুরে বামেদের ছন্দ পতনের মূল কারিগর ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতি মন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী প্রতিমা ভৌমিক। সেই সঙ্গে প্রতিমা ভৌমিক একটি রেকর্ডও করেন। ধনপুর কেন্দ্রে প্রথম কোনো অবাম দলের বিধায়িকা হিসাবে তিনি উঠে আসেন।

কেন্দ্রীয় সাংসদ এবং প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে প্রতিমা ভৌমিক ধনপুরের বিধায়িকা পদ থেকে পদত্যাগ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই ধনপুরে অকাল ভোটের পরিস্থিতি তৈরি হয়।আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ধনপুরে হবে উপভোট।

এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিন্দু দেবনাথ এবং সিপিআইএম প্রার্থী কৌশিক চন্দ। বাম প্রার্থী কৌশিক ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। তবে বিজেপি প্রার্থী বিন্দু দেবনাথ নতুন।এটাই তার সংসদীয় রাজনীতির প্রথম সোপান।

আসন্ন উপ নির্বাচনে বাম প্রার্থী কৌশিক চন্দ কি পারবেন সমর চৌধুরী, মানিক সরকারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে? এবং বামেদের ভিয়েতনামে বিজেপির উত্থান রুখতে? প্রশ্ন রাজনীতিকদের। অন্য দিকে বিজেপি প্রার্থী বিন্দু কি প্রথম বারই পারবেন সংসদীয় রাজনীতিতে চমক দেখাতে। তিনি কি ধরে রাখতে পারবেন দিদি প্রতিমার ঐতিহ্য? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা ধনপুরে।

বিজেপি প্রার্থী বিন্দু দেবনাথ ও বাম প্রার্থী কৌশিক চন্দ, উভয়েই বয়সে তরুণ। ইতিহাস বলছে, যারাই ধনপুরের মাটি থেকে রাজ্য রাজনীতিতে এসেছেন তারা প্রত্যেকেই দাপুটে। এবং তারা রাজ্য নেতা হিসাবে দাগ কেটেছেন।

সমর চৌধুরী থেকে মানিক সরকার এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমা ভৌমিক তিন জনই নজর কেড়েছেন দেশীয়।রাজনীতির অঙ্গনেও।এবার পালা এসেছে বিন্দু দেবনাথ ও কৌশিক চন্দ’র।

রাজনীতিকরা বলছেন, উপভোটে বরাবর শাসক গোষ্ঠীর দাপট বেশী থাকে। তবে শাসকের প্রবল হাওয়ার মধ্যেও বিরোধীরা উপ নির্বাচনে জয় পেয়েছে। এমন দৃষ্টান্তও আছে রাজ্যে। তাই ধনপুর কেন্দ্রের দিকে পাখির চোখ রাজ্যের মানুষের। কৌশিক চন্দ কি পারবেন লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিআইএমকে ব্রেক থ্রো এনে দিতে?

নাকি বিন্দু দেবনাথ বিজেপিকে বিধানসভায় করতে পারবেন আরোও শক্তিশালী? এই কোটি টাকার প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ধনপুর রাজনীতির অলিন্দে।