
ডেস্ক রিপোর্টার,২২ জুন।।
এক অদ্ভুদ দেশ ভারত ও দেশের সংবিধান।এই দেশে খুনিরাও হতে পারেন নেতা – মন্ত্রী। তারা অপরাধ করেও পৌঁছে যেতে পারে সংসদীয় রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তরে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের দিকে তাকালে চিত্র একেবারেই স্পষ্ট হয়ে যায়। ত্রিপুরা থেকে অসম, মিজোরাম থেকে নাগাল্যান্ড। বারবার অতীতের রক্ত পিপাসু হায়নারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে আত্ম প্রকাশ করছেন জন প্রতিনিধি হিসাবে।

*নাম: বিজয় রাঙ্খল।
*তিনি রাজ্যের প্রাক্তন বিধায়ক
*তিনি ছিলেন রাজ্যের জঙ্গি সংগঠন টিএনভির সুপ্রিমো।
* দেশের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কাছে তিনি আত্মসমর্পন করেছিলেন।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে যোগ দেন সংসদীয় রাজনীতিতে।
*তৈরি করেন নিজের রাজনৈতিক দল আইএনপিটি।
*আইএনপিটির টিকিটে আমবাসা বিধানসভা
কেন্দ্র থেকে তিনি ভোটে লড়াই করেন।
*ভোটে জয়ী হয়ে তিনি বিধায়কও হয়েছিলেন।

এক সময় রাজ্যের গ্রাম – পাহাড়ে বিজয় রাঙ্খল ছিলেন ত্রাস। বহু সাধারন মানুষের রক্ত ঝরে ছিলো টিএনভির বৈরী নেতা বিজয় রাঙ্খলের নেতৃত্বে।তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, অপহরন ও তোলা আদায়ের অভিযোগ ছিলো। বর্তমানে প্রদ্যুৎ কিশোরের তিপ্রামথার সভাপতি বিজয় রাঙ্খল।জেনেভায়
বিজয় রাঙ্খলের এক বক্তব্য ঘিরে গোটা দেশে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। বিজয় রাঙ্খলের বিতর্কিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বাম সরকার তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলো। তদন্ত কমিশন তদন্ত শেষ করে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট জমা করেছে কিনা আজ পর্যন্ত জানা নেই রাজ্যের মানুষের। কার স্বার্থে তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট চেপে গিয়েছিল? কবর থেকে আজও উঠছে সেই প্রশ্ন।

*নাম: খগেন্দ্র জমাতিয়া।
*তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী।
*তিনি ছিলেন রাজ্যের জঙ্গি সংগঠন এটিপিএলও- র শীর্ষ নেতা।
*খগেন্দ্র জমাতিয়ার বিরুদ্ধে গণহত্যা, অপহরন ও তোলা আদায়ের অভিযোগ ছিলো।
*পরবর্তী সময়ে তিনি জঙ্গিপনা ছেড়ে ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে।
*এরপর খগেন্দ্র জমাতিয়া যোগ দিয়েছিলেন সিপিআইএমে।
* সিপিআইএমের প্রতীকে তিনি ভোটে লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন।

প্রাক্তন কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন খগেন্দ্র জমাতিয়া। বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণপুর কেন্দ্র থেকে তিনি টানা পাঁচ বার জয়ী হয়েছিলেন।


*নাম: রণজিৎ দেববর্মা।
*তিনি রাজ্যের বিধায়ক।
• ২৩- র নির্বাচনে তিনি রামচন্দ্র ঘাট
বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ।
* নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন তিপ্রামথার প্রতীকে।
*তিনি ছিলেন রাজ্যের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্সের সুপ্রিমো।
*৯০ দশকে রণজিৎ দেববর্মা টাইগার ফোর্সের জন্ম দিয়েছিলেন।
*রণজিৎ দেববর্মার বিরুদ্ধে একাধিক গণহত্যা, অপহরন ও তোলা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
* ২০০৮ সালে আগরতলায় বোমা বিস্ফোরণে পেছনে মূল মস্তিষ্ক ছিলো এটিটিএফের প্রধান রণজিৎ দেববর্মার।

১৯৯০থেকে ২০১৭।দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রণজিৎ দেববর্মা বাংলাদেশের বৈরী ঘাঁটিতে বসে ত্রিপুরাতে রক্ত ঝরিয়ে ছিলো। পাহাড়ের আনাচে কানাচে চালিয়ে ছিলো বাঙালি নিধন। রাজ্যের বহু জায়গায় টাইগার ফোর্সের বৈরীদের ছোড়া বুলেট ও গ্রেনেডে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর শরীর। মৃত্যু হয়েছিল সাধারণ নাগরিকদের।বাঙালি প্রধান অঞ্চল গুলির রাতের আঁধারে বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আগুনের আঁচ পেয়ে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন বৈরীরা সামনে থেকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলো। রণজিৎ দেববর্মার নেতৃত্বে দিনের পর দিন বাঙালি নিধন যজ্ঞ চালিয়ে ছিলো এটিটিএফ। টাইগার ফোর্সের রক্ত পিপাসু বৈরিদের নর সংহার চালানোর বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে রাজ্যে। তা নতুন করে কিছু বলার নেই।

শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে রণজিৎ দেববর্মা বাংলাদেশের ঘাঁটি থেকে খোয়াই সীমান্ত দিয়ে এপারে এসেছিলেন।খোয়াইয়ে বিএসএফ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। এরপর কয়েকবছর কারাগারে ছিলেন টাইগার ফোর্সের সুপ্রিমো রণজিৎ দেববর্মা। জেল থেকে বেরিয়ে রণজিৎ দেববর্মা সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেন। গা ভাসিয়ে দেন প্রদ্যুৎ কিশোরের তিপ্রামথাতে।২৩ র নির্বাচনে রাম চন্দ্র ঘাট থেকে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন।

এক সময়ে সাধারন মানুষের রক্ত খেকো জঙ্গিরা স্বাভাবিক জীবনে এসে মন্ত্রী – বিধায়ক হওয়ার ঘটনা শুধু ত্রিপুরাতে সীমা বদ্ধ নয়। উওর পূর্বাঞ্চলের অসম,নাগাল্যান্ড, মিজোরামে বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। মিজোরামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লাল ডেঙ্গা নিজেই ছিলেন একজন বৈরী নেতা। তিনি নিজের হাতেই হত্যা করেছিলেন ভারতীয় সেনা জওয়ানদের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে একথা স্বীকার করে ছিলেন খোদ লাল ডেঙা। অর্থাৎ মানুষের রক্তে হাত রাঙানোর পরও বৈরী নেতারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সরকারী ভাবে পুনর্বাসন পান। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে দেওয়া হয় সিকিউরিটি। চলেন গাড়ির বহর নিয়ে। তারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করলেও তাদেরকে বাঁচানোর জন্য সরকারী কোষাগার থেকে খরচ করা হয় অর্থ। এটার নামই কি গনতন্ত্র? হায় রে!