ডেস্ক রিপোর্টার, ২৭জুলাই।
    
        ২৩- র নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি র বহু মীরজাফরের মুখ ও মুখোশ খসে পড়েছে। নির্বাচনের মুহূর্তে অনেক বিজেপি নেতা প্রনামি দিয়েছিলো সিপিআইএমকে।কেন? উদ্দেশ্য রাজনীতির পালা বদল হলে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর তাগিদ। এরকম ঘটনার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বিলোনিয়া মহকুমার ঋষ্যমুখ মণ্ডলে। মহামান্য এই ব্যক্তিটি হলেন ঋষ্যমুখ মণ্ডলের সম্পাদক রাজীব পাল। তিনি ২৩শের নির্বাচনে সিপিআইএমের নির্বাচনী তহবিলে দিয়েছিলেন পঞ্চাশ হাজার টাকা। নির্বাচনী তহবিলের এই অর্থ তিনি দিয়েছিলেন দক্ষিণ জেলার ডাক সাইটের বাম নেতা তাপস দত্তকে। এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ চলে এসেছে প্রকাশ্যে।

।।ঋষ্যমুখ মণ্ডলের সম্পাদক রাজীব পাল।।

রাজীব পাল বিলোনিয়া মহকুমার পূর্ব সাড়া সীমা এলাকার বাসিন্দা।শৈশবে তার দিন কেটেছে প্রচন্ড অভাব অনটনের মধ্যে। পরিবারের অবস্থা ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত। বিলোনিয়ায় কান পাতলেই শোনা যায়,এক সময় রাজীব পালের বাবা আচমকাই বাড়ি থেকে রহস্যজনক অন্তর্ধানে চলে যান। বাবার অবর্তমানে সংসারের ঘানি টানতে হয় রাজীব পালের। রাজীব বাধ্য হয়ে শুরু করে রাজ জোগলির কাজ। অর্থাৎ রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগালি হিসেবে কাজ করতে থাকে রাজীব পাল। জোগালির কাজ করে পাওয়া মজুরীর থেকে অর্থ দিয়ে কায়ে ক্লেশে  সংসার প্রতি পালন করতো রাজীব।
  কাজের সূত্র ধরেই রাজীব পাল এক সময়ে চলে গিয়েছিল রাজনগরের বাইল্যা বাড়ি এলাকায়। সেখানেই অস্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। অভিযোগ, বাইল্ল্যা বাড়িতে থাকাকালীন অবস্থায় এক জনজাতি যুবতীর সঙ্গে রাজীবের ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। শেষ পর্যন্ত এই সম্পর্কের টানে জনজাতি যুবতীকে বিয়ে করে রাজীব পাল। তার স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় দুইটি ফুটফুটে সন্তান। বিলোনিয়া লোকজনের বক্তব্য, বেশ কয়েক বছর সংসার করার পর রাজীব পাল তার স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে চলে আসে পূর্ব সাড়াসীমা এলাকায়। ২০১৮ র বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে রাজীব পাল যোগ দিয়েছিল বিজেপিতে। ক্ষমতায় আসে দল। আর তাতেই একসময়ের রাজযোগালী রাজীবের  ভাগ্যে পরিবর্তনের টিকা লেগে যায়।

।।সিপিআইএমের নির্বাচনী তহবিল।।

২০১৮ থেকে ২০২৩ র নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চুটিয়ে তোলাবাজি, নিগোসিয়েশন, বল পূর্বক জমি দখলের মতো অপরাধ সংক্রান্ত কাজ করেছে রাজীব। অভিযোগ,রাজনৈতিক  ক্ষমতা প্রদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তিনটি ঘর বগল দাবা করেছিলো রাজজোগালী নেতা রাজীব।বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসার পর তাকে ঘরের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাতে অবশ্যই রাজীব পালের কিছু হয় নি। বরং এরপর ক্ষোভে তোলাবাজির টাকা দিয়ে চার তালা ফাউন্ডেশন করে ৪২০০ স্কয়ার ফিট জমি জুড়ে স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে রাজীব। শোনা যায়, তার গোটা বিল্ডিংয়ে রয়েছে ২৩টি দরজা। ঋষ্যমুখ মন্ডলের সম্পাদক রাজীব পালের বিরুদ্ধে স্থানীয় বিডিও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। নিগোসিয়েশন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভিডিওকে হুমকি দিয়েছিলো  রাজীব পাল। তার ঝামেলা হয়েছিলো স্থানীয় ঠিকাদার শিবক শিলের সঙ্গে। এক সময় রাজীব ও শিবক পাটনারে ঠিকাদারি কাজ করতো। শিবক শীলের কাছ থেকেও প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল রাজীব পাল।


বিলোনিয়ার বিজেপির কর্মীদের বক্তব্য, ২৩- নির্বাচনের আগে রাজীব পালের পেটে কামড় ধরে।বিজেপি ক্ষমতায় নাও আসতে পারে,এই আশঙ্কা করে রাজীব ঘরের ইদুরের মত বিজেপির বেড়া কেটে দেয়। গোপনে রাজীব বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নেয়। ২৩ – ভোটে ঋষ্যমুখ্ কেন্দ্রের বাম প্রার্থী অশেষ মিত্র ছিলেন রাজীবের শিক্ষক। রাজীব তার শুরু তথা সিপিআইএম প্রার্থী অশেষ মিত্রকে পাশ করানোর জন্য খাটাখাটুনি করে। এবং বিজেপির প্রার্থীকে পরাজিত করার নীল স্ক্রিপ্ট রচনা করে। বামেরা ক্ষমতায় এলে উঠে যাবে রাজীব পালের পিঠের চামড়া ।এই আশঙ্কা করে রাজীব পাল তার শিক্ষা গুরু  অশেষ মিত্র ও সিপিআইএম নেতা তাপস দত্তের সঙ্গে বৈঠক করে। এবং সিপিআইএমের নির্বাচনী তহবিলে জমা করে পঞ্চাশ হাজার টাকা। সিপিএমের নির্বাচনী তহবিলের  রসিদে রাজীব পালের নাম,ঠিকানা সব লেখা রয়েছে। এই রসিদ লিখেছিলেন সিপিআইএম নেতা তাপস দত্ত।

অশোক মিত্র,(বিধায়ক, ঋষ্যমুখ)

ঋষ্যমুখ মণ্ডলের সম্পাদক রাজীব পাল বিজেপিতে থেকে বিজেপিকে শেষ করে দিয়েছে।এই কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তার সঙ্গে  ছিল বিজেপির মীরজাফর নেতারা। সিপিআইএমের নির্বাচনী তহবিলে চাঁদা দেওয়া বিজেপি নেতা রাজীব পালের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়,এটাই এখন দেখার বিষয়।


তাকিয়ে আছেন ঋষ্যমুখ মণ্ডলের বিজেপির নিষ্ঠাবান কর্মীরা। “জনতার মশাল”  এই খবর  প্রকাশিত হওয়ার পরও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন প্রদেশ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *