ডেস্ক রিপোর্টার, ৮সেপ্টেম্বর।।
      মানিক সরকার অষ্টম বাম সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু বক্সনগরে বামেরা ছিলো সাবলীল।
বক্সনগর কেন্দ্রে বামেরা পেয়েছিল অষ্টম জয়।
তবে জোর ধাক্কা লাগে নবম জয়ে।বক্সনগরে অধরাই থেকে যায় বামেদের নবম জয়!
    একসময় সিপাহীজলা জেলার বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্র ছিল বামেদের দুর্জয় ঘাঁটি। বামেদের নিশ্চিত আসন ছিলো বক্সনগর। এবারের অকাল ভোট ব্যতীত বক্সনগর কেন্দ্রে মোট ১১ বার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। তার মধ্যে আটবার জয়ী হয়েছে সিপিআইএম এবং তিনবার জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। ১৮- র বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও বক্সনগরের আকাশ জুড়ে ছিল রক্তিম আভা। জয়ী হয়েছিলেন বাম প্রার্থী সহীদ চৌধুরী।২৩- র বিধানসভা নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন বিজেপি বক্সনগরে বামেদের টলাতে পারেনি। নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বাম প্রার্থী শামসুল হক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তিনি প্রয়াত হয়েছেন নির্বাচনের পর পরই। স্বাভাবিকভাবেই বক্সনগরে অকাল ভোটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং অনুষ্ঠিত হয়ছিলো ভোটও। নির্বাচনে প্রত্যাশিত ভাবেই জয় পায় বিজেপি। ভাজপার এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে  বক্সনগরে অধরা থেকে যায় বামেদের নবম জয়।

।।বিজেপি প্রার্থী তফাজ্জল হোসেন।।

বক্সনগর কেন্দ্রে বরাবর ছিল বামেদের একছত্র আধিপত্য। বিক্ষিপ্তভাবে কংগ্রেস কখনো কখনো মাথা চাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারিনি। গোটা বক্সনগরকে বামেরা বানিয়ে ছিল লাল দুর্গ। প্রতিটি নির্বাচনে ছিনিয়ে নিয়েছিল একের পর এক জয়। বক্সনগরের ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, ৭২ সালে বক্সনগর কেন্দ্রে প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন মনসুর আলী।


৭৭ নির্বাচনে বামেরা আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল। প্রার্থী ছিলেন আরবের রহমান। ৮৩ নির্বাচনেও বামেরা ধরে রেখেছিল জয়। তখনও বাম প্রার্থী ছিলেন আরবের রহমান। তব ৮৮- র নির্বাচনে ঘটেছিল বামেদের ছন্দপতন। জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। প্রার্থী ছিলেন বিল্লাল মিয়া। কিন্তু ৯৩-র নির্বাচনী বামেরা পুনরায় আসনটি দখল করেছিল। তখন প্রার্থী ছিলেন সহিদ চৌধুরী।কিন্তু ৯৮- র নির্বাচনে বক্সনগর ফের দখল করেছিল কংগ্রেস। প্রার্থী ছিলেন বিল্লাল মিয়া।২০০৩- র পর  বামেদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

।।কমিউনিস্ট নেতা সহিদ চৌধুরী।।

২০০৮,২০১৩,২০১৮ পর্যন্ত টানা জয় পায় বামেরা। টানা কুড়ি বছর প্রার্থী ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা সহিদ চৌধুরী। তিনিই ছিলেন বক্সনগর কেন্দ্রে বামেদের সপ্তমের কান্ডারী।২০২৩- শেও বামেরা বক্সনগর কেন্দ্রে জয়ের ধারা বজায় রেখেছিল। বাম প্রার্থী ছিলেন শামসুল হক। বক্সনগর কেন্দ্রে বামেদের বেধে রাখার মত কোনো শক্তি ছিল না।
২৩- র অকাল ভোটে বক্সনগর কেন্দ্রের  রাজনৈতিক ক্লাইম্যাক্স পুরোপুরি ভাবে ঘুরে যায়। স্থানীয় বাম ভোটাররাও বিজেপির দিকেই ঝুকে যায়। তাছাড়া কংগ্রেস, তিপ্রামথা ও তৃণমূলের নেতা – কর্মীরাও বিজেপির জোয়ারে ভেসে যায়। আর তাতেই বক্সনগরে ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে যায় বিজেপি।


উপ-নির্বাচনে বামেদের প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত বিধায়ক শামসুল হকের ছেলে মিজান হোসেন।। তাকে মেলারমাঠ প্রার্থী করলেও স্থানীয় অনেক বাম নেতা, এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন নি। কারণ বক্সনগর কেন্দ্রে শামসুল হকের পর আরো সিনিয়র বাম নেতারা ছিলেন। যারা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। স্থানীয় বাম নেতৃত্ব প্রকাশ্যে মেলারমাঠের বিরোধিতা না করলেও পর্দার আড়ালে তারা ছিল অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।


তারা প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত শামসুল হকের ছেলে মিজানকে মেনে নিতে পারেনি।
বক্সনগরে শক্তি বৃদ্ধি, সিনিয়র বাম নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা, কংগ্রেস, সিপিআইএম, মথার কর্মীদের বিজেপির স্রোতে ভেসে যাওয়া সহ নানান কারণে অকাল ভোটে বামেরা নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে পারে নি।


প্রার্থী তফাজ্জল হোসেনকে সামনে রেখে বক্সনগর ছিনিয়ে নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি। আর তাতেই বক্সনগর কেন্দ্রে বামেদের নবম জয়ের স্বপ্ন খান খান হয়ে যায়। কপাল চাপড়াতে হচ্ছে মেলারমাঠের লালবাড়ির দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *