ডেস্ক রিপোর্টার, আগরতলা।।
      রাজ্যে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার সার্বিক বিকাশ ও জনজাতিদের আর্থসামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকার একটি দীর্ঘ মেয়াদি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্যের ২৩টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লকে এবং ১২টি অ্যাসপিরেশনাল রকে শিক্ষা, যোগাযোগ এবং জনজাতিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তর, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন, কৃষি ও উদ্যান, প্রাণীসম্পদ বিকাশ, মৎস্য, পূর্ত, শিক্ষা, পরিবহণ, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। আজ সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের রূপায়িত উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতির এবং সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে একথা জানান জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া। তিনি জানান, জনজাতি অধ্যুষিত ব্লক এলাকাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনজাতিদের অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের উপর এই প্রকল্পে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী জানান, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি তাদের আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সাপ্লিমেন্টারি এডুকেশন ফর এলিমেন্টারি ক্লাসেস (এসইইসি) ২০২২ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে ২৯০টি কোচিং সেন্টার চালু হয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৭,৩৬১ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীকে ছাত্রাবাস বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে এবং এরজন্য মোট ৩৪৮৩৮৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৭,৮০৯ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীকে পাঠ্যবই ক্রয় করার জন্য ৯৪৮৮ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এককালীন আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য ৬৮৫ জন ছাত্রছাত্রী ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৯,৫৬৪ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক বিষয়ের উপর বিশেষ কোচিং দিতে ৭৩.২৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী জানান।


তিনি জানান, শিক্ষার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লকে আরও ১৭টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল (১টি একলব্য মডেল ডে বোর্ডিং স্কুল সহ) স্থাপনের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ১৬টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের মধ্যে আমবাসার নালীছড়ায় ১টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল চালু হয়েছে এবং আরও ১৩টির নির্মাণ কাজ চলছে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে কিল্লা একলব্য মডেল ডে বোর্ডিং স্কুলটি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে রূপান্তরের জন্য ভারত সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তর অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান শ্রী জমাতিয়া। তিনি জানান, ৩টি ডিগ্রি কলেজ হোস্টেল যথাক্রমে আগরতলার মহিলা কলেজ, ফটিকরায়ের আম্বেদকর কলেজ এবং গন্ডাছড়া সরকারি কলেজের হোস্টেল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে রয়েছে।সাব্রুম মহকুমার কলাছড়া এবং আগরতলার মেলারমাঠে কুমারী মধুতী রূপশ্রী নামে নতুন জনজাতি বিশ্রামাগার চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে বিভিন্ন জেলাতে ৩২টি বনধন বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২৫টি বনধন বিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং টিআরআইএফইডি-এর কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জুম চাষ প্রকল্প রূপায়ণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর ১ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এই প্রকল্পে ৮,৩৬৮টি হার্ডকোর জুমিয়া পরিবারকে ২১২ টাকা করে ৬ দিনের মজুরি হিসেবে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্পে আগামী ৫ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার চাষ করা হবে। চলতি অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর ১০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা প্রকল্পে ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুসারে কেন্দ্রীয় জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রক ত্রিপুরার ৩৭৫টি গ্রাম চিহ্নিত করেছে।


সাংবাদিক সম্মেলনে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী জানান, বনাধিকার আইনের অধীনে রাজ্যে মোট ১,৩১,৫৬৪টি পরিবারকে মোট ১,৮৮,২৫০.১৭ হেক্টর পরিমাণ জমির পাট্টা প্রদান করা হয়েছে। জমির অধিকার প্রাপ্ত ৩২,৭২২টি পরিবারকে আইএওয়াই / পিএমএওয়াই-এর আওতায় ঘর দেওয়া হয়েছে। জনজাতি যুবক যুবতীদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের জন্য ৫২ জন জনজাতিকে বিভিন্ন প্রকল্পে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ৭ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ২০২২- ২৩ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২১২ জন দরিদ্র জনজাতি রোগীর চিকিৎসার জন্য জনজাতি কল্যাণ দপ্তর থেকে ১৮.২৪ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়াও ক্রেডিট লিংক মডেলের শূকর এবং ছাগল পালনের জন্য জনজাতি কল্যাণ দপ্তর একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলেও জানান জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী। এছাড়াও তিনি জানান, রাজ্য সরকার পরিচালিত ১৬১টি হোস্টেলে স্মার্ট টিভি এবং টাটা স্কাই দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিচালিত ২২টি হোস্টেলে কম্পিউটার সেট দেওয়া হয়েছে। সমস্ত সরকারি হোস্টেলগুলিতে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধীনস্ত জনজাতি গবেষণা এবং সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্তা আনন্দহরি জমাতিয়া জনজাতি গবেষণা এবং সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে জনজাতিদের কল্যাণে রূপায়িত বিভিন্ন প্রকল্পসমূহের বিশদ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ত্রিপুরার জনজাতিদের জীবন ধারা, সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জনজাতি গবেষণা এবং সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়িত হয়। এই দপ্তরের অধীনে একটি লাইব্রেরি রয়েছে। এই লাইব্রেরিতে ত্রিপুরা ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনজাতিদের বিষয়ে ১৫,৩৯৪টি বই রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান একটি রিসার্চ জার্নাল ‘তুই’ এবং একটি সাহিত্য জার্নাল সাইমা প্রকাশ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ত্রিপুরা স্টেট একাডেমি অব ট্রাইবেল কালচার নামে একটি জনজাতি সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৪টি জনজাতি সাংস্কৃতিক দলের মধ্যে চিরাচরিত পোশাক, অলংকার, বাদ্যযন্ত্র ও সাজসরঞ্জাম সম্প্রতি বিতরণ করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা আনন্দহরি জমাতিয়া এবং যুগ্ম অধিকর্তা রিংকু রিয়াং উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *