
ডেস্ক রিপোর্টার,২৬ জুলাই।।
১৯৬৭ থেকে ২০২৩। দীর্ঘ ৫৬ বছর।খোয়াই রাজনীতির এক লম্বা ইতিহাস।খোয়াই বারবার বামেদের লাল দূর্গ।সংস্কৃতির শহরে আজও অবিচল বামেরা।তিন তিন বার বাম দূর্গ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল কংগ্রেস।কিন্তু গেরুয়া রঙের প্রবল জোয়ারেও ভাজপা ব্যর্থ বাম দূর্গ ভেদ করতে।
কমিউনিস্ট নেতা সুনীল চন্দ্র দত্ত থেকে স্বরাইজম কামিনী ঠাকুর সিনহা। সমীর দেব সরকার থেকে হালের নির্মল বিশ্বাস। তারা প্রত্যেকেই খোয়াইয়ের মাটিতে বামেদের মাটি উর্বর করেছেন। বার বার খোয়াইয়ের মাটিতে উড়িয়েছেন লাল নিশান।হালের কমিউনিস্ট নেতা নির্মল বিশ্বাস আজও ধরে রেখেছেন লাল ঝান্ডা।

২০১৮ ও ২০২৩ পর পর দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে নির্মল বিশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে রাজ্যের বাম রাজনীতির ধারক – বাহক হয়ে উঠতে পারেন তিনি। ছাত্র রাজনীতি থেকে আত্ম প্রকাশ।তারপর সংসদীয় রাজনীতিতে বিচরণ। এখন পর্যন্ত সফল নির্মল। খোয়াইয়ের কমিউনিস্ট নেতা নির্মল মেলারমাঠের নেতৃত্বকেও বার্তা দিয়েছেন, দুর্দিনে কর্মী – সমর্থকদের পাশে থেকে মাটি কামড়ে লড়াই করলে পৌঁছা যায় সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে। ১৮ সালে গোটা রাজ্যে ছিলো গেরুয়া ঝড়। তাবড় তাবড় বাম নেতৃত্ব হেরে ভূত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তরুণ বাম নেতা নির্মল বাম দুর্গের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছিলেন। ২৩- র নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে নির্মল বিশ্বাস খোয়াই আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।

১৯৬৭ সালে খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম নির্বাচন হয়। নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল চন্দ্র দত্ত।৭২- র নির্বাচনেও কংগ্রেস খোয়াই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল।প্রার্থী ছিলেন যদু প্রসন্ন ভট্টাচার্য্য।৭৭- র নির্বাচনেই কংগ্রেসকে সরিয়ে দিয়ে বামেরা প্রথম খোয়াই আসন দখল করেছিলো।তখন সিপিআইএম প্রার্থী ছিলেন স্বরাইজম কামিনী ঠাকুর সিনহা।১৯৮৩ – র নির্বাচনে খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রে আত্ম প্রকাশ ঘটে ছিলো সমীর দেব সরকারের।তিনি জয়ী হয়েছিলেন নির্বাচনে।১৯৮৮- র নির্বাচনে ফের বামেদের ছন্দ পতন ঘটেছিল খোয়াইয়ে।আসনটি দখল করেছিল কংগ্রেস। প্রার্থী ছিলেন অরুণ কুমার কর।

১৯৯৩ থেকে ২০১৩ । টানা ২০ বছর খোয়াই রাজনীতির শেষ কথা ছিলেন সমীর দেব সরকার।রাজনীতির ময়দানে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।এবং খোয়াই রাজনীতির কিংবদন্তি নেতা হয়ে উঠেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রয়াত হয়েছিলেন খোয়াই বাম রাজনীতির পুরোধা সমীর দেব সরকার। তখন উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে খোয়াই কেন্দ্রের বিধায়ক হয়েছিলেন বিশ্বজিত দত্ত।

২০১৮ সালে গোটা রাজ্য জুড়ে ছিল গেরুয়া ঢেউ। টালমাটাল ছিলো বাম দূর্গ। তখন বিশ্বজিৎ দত্তের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিল সিপিআইএম। হঠাৎ রহস্য জনক ভাবে বিশ্বজিৎ দত্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সিপিআইএম তখন প্রার্থী করেছিলো যুব নেতা নির্মল বিশ্বাসকে। টিকিট না পেয়ে বর্ষীয়ান নেতা বিশ্বজিত দত্ত যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। গোটা খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রে নির্মল বিশ্বাসের জন প্রিয়তাও ভালো।

প্রবল গেরুয়া জোয়ারে ১৮- র ভোটে নির্মল ধরে রাখেন তার পুর্বসুরী সমীর দেব সরকারের ঐতিহ্য। ২৩শে- ও নির্মল খোয়াই কেন্দ্রে উড়িয়েছেন লাল পতাকা। রাজনীতিকরা বলছেন, নির্মল বিশ্বাসের জন সংযোগ অনেক বেশি শক্তিশালী। মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। সাধারণ মানুষের দুর্দিন গুলিতে পাশে থাকেন বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস।স্বাভাবিক ভাবেই নির্মলের এই সমস্ত কাজকর্মের প্রতি মানুষ ফোকাস রেখেছিল। এবং তাকে ভোট দিতেও কার্পণ্য করে নি। তাছাড়া খোয়াইয়ে বাম নেতৃত্ব সংগঠনকে ধরে রেখেছে অক্টোপাসের মতো। ভোট বাজারে এটার সফলতাও পেয়েছেন নির্মল বিশ্বাস। প্রয়াত সমীর দেব সরকারের পর খোয়াই কেন্দ্র থেকে নির্মলই পর পর দুইবার বিধায়ক হয়েছেন। বাম ঘরানার মানুষের মনে কৌতুহল নির্মল বিশ্বাস কি পারবেন সমীর দেব সরকারের বিকল্প হয়ে উঠতে?

রাজনীতিকরা বলছেন, এখনো বাম রাজনীতিতে চলছে বৃদ্ধতন্ত্র। বৃদ্ধদের চাপের মুখে সামনে আসতে পারছেন না তুলনায় তরুণ নেতারা। তাপস দত্ত, অমল চক্রবর্ত্তী, পার্থ সারথি মজুমদার, নির্মল বিশ্বাস সহ বহু নেতা রয়েছেন যারা মানিক – জিতেন – নারায়ণদের কারণে এখন তাদের হারিয়ে যাওয়ার পালা।