
ডেস্ক রিপোর্ট,২এপ্রিল।।
বাংলার বাম রাজনীতির পুনরাবৃত্তি হবে রাজ্যেও।
এক সময় বাংলার রাজনীতির অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি ছিল বামেরা।একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা জয়ী হয়েছিল।১৯৭৭ থেকে ২০১১-র এপ্রিল পর্যন্ত।বাংলার মাটিতে কমিউনিষ্টরা ছিলো শেষ কথা। ২০১১- র নির্বাচনে বাংলায় ৩৪ বছরের বাম দুর্গের পতন ঘটেছিলো।এর পর বামেরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে নি।২১- র নির্বাচনে বামেদের ঝুলি একেবারেই খালি হয়ে যায়।
গোটা বাংলাতে কমিউনিষ্টদের অবস্থা এখন সঙ্গীন।বাংলার ২১- র বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের পেছনে ঠেলে বিরোধী দল হিসাবে উঠে এসে ভারতীয় জনতা পার্টি।এখন লড়াইয়ের মূল অলিন্দে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। সিনের বাইরে বামেরা।জ্যোতি বসু – বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের সোনালী অতীতকে আঁকড়ে ধরেই এখন বাংলার কমিউনিস্টরা রাজনীতির ময়দানে বেচেঁ থাকার রসদ খোঁজে চলছে প্রতিনিয়ত।

ত্রিপুরার রাজনীতিতে এক সময় কমিউনিস্টরা ছিলো দানবীয় শক্তি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৩ থেকে ২০১৮- র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমিউনিস্টদের কথাতেই লরতো রাজ্যের প্রতিটি গাছের পাতা। কিন্তু ১৮ সালে বিজেপির ঝড়ে কমিউনিস্টরা কুপোকাত হয়ে যায়। আসন সংখ্যা নেমে আসে ১৬ -তে। এরপর রাজ্যের বামেদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২০২১ -র এডিসি নির্বাচনে হাত ছাড়া হয় পাহাড়।এই পাহাড় – ই ছিলো রাজ্যের বাম রাজনীতির পীঠ স্থান।২০১৮ র নির্বাচনে পাহাড় থেকে দুইটি আসন পেয়েছিল সিপিআইএম।২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড় বামেদের হাতে ধরিয়ে দেয় “শূন্য”।

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা বিজেপির বিরুদ্ধে একা লড়াই করার দুঃসাহস করতে পারেনি।বাংলার মডেল অনুকরণ করে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে ছিলো কমিউনিস্টরা।কিন্তু পৌঁছতে পারেনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। আগের তুলনায় মোট আসন সংখ্যাও কমে যায়। ১৬ থেকে আসন সংখ্যা নেমে আসে ১১ তে।

বাংলা এবং ত্রিপুরায় বামেদের রাজনৈতিক গ্রাফের দিকে তাকালে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।দুই রাজ্যেই ধারাবাহিক ভাবে তাদের রাজনৈতিক অবনমন হয়েছে।
বাংলায় ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা পেয়েছিল মোট ৪০টি আসন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেদের দখলে ছিল মোট ৪২টি আসন।২০২১- র বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় কমিউনিস্টদের আসনের স্কোর বোর্ডে ছিল শূন্য।২১- এ বাংলায় বামেরা হারিয়ে ছিলো বিরোধী দলের তকমা।
ত্রিপুরার রাজনীতিতে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক গ্রাফও একই দিকে ধাবিত হচ্ছে।২০১৮- র নির্বাচনে বামেরা পেয়েছিল মোট ১৬টি আসন।২০২৩ – র বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় বামেরা পেয়েছে মোট ১১টি আসন।ত্রিপুরাতেও ২৩- এ বামেরা হারিয়েছে বিরোধী দলের তকমা।

২০২৮ – র ভোটে বামেরা যে ভালো জায়গাতে পৌঁছবে এই আশা করছেন না অতি বড় বাম সমর্থকরাও।কারণ রাজ্যে রাজনীতির ভোটের সমকারণ এমন ইঙ্গিত করছে। ২০১৮ ও ২০২৩ র বিধানসভা নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে জনজাতি ভোট বামেদের দিকে সুইং করার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের মুখ রক্ষা করেছে বাঙালিরা।তাদের দৌলতে কমিউনিস্টরা পেয়েছে ১১টি আসন। বাংলায় ক্ষমতা চ্যুত হাওয়ার পরও টানা দশ বছর বামেরা ছিলো বিরোধী আসনে। ত্রিপুরায় আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো বামেরা।

পাঁচ বছরের মধ্যেই ছিটকে গেল বিধানসভার বিরোধী আসন থেকে। রাজ্যের শাসক দল বিজেপি পাহাড়ের প্রধান শক্তি ও রাজ্যের বিরোধী দল তিপ্রামথাকে ভেঙ্গে দিতে পারলে বাঙালি ভোট আরো বেশি করে ঝুঁকে পড়বে বিজেপির দিকে। তাহলে সমতলেও বিজেপির আরো দাপট বাড়বে। শক্তি কমবে বামেদের।

একই সঙ্গে পাহাড়েও হাবি হবে গেরুয়া বাহিনী।।তখন জনজাতি ভোটও গা ভাসবে পদ্ম বনের দিকে।এই জটিল অঙ্কে বামেরা পড়বে উভয় সঙ্কটে। পাহাড়েও ভিত করতে পারবে না।এবং সমতলেও আলগা হবে মাটি।এই পরিস্থিতিতে বামেদের অবনমন কেউ রুখতে পারবে না।রাজ্য রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একথা বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।