
ডেস্ক রিপোর্টার, আগরতলা।।
“গুরু মা”-নামটি এখন বেশ জনপ্রিয় রাজ্যের অপরাধ জগতে। ধর্মনগর থেকে সাব্রুম নিগো বাণিজ্যের কুইন এখন “গুরু মা”। সর্বত্র তিনি ডাক পান “ইন্টারলোকেটর” হিসাবে। উত্তর থেকে ধলাই, গোমতী থেকে সিপাহিজলা, ঊনকোটি থেকে দক্ষিণ জেলা। সর্বত্রই তিনি বিরাজমান।আর পশ্চিম জেলা তো থাকে হাতের তালুতেই। অর্থাৎ বলতেই হয়, “সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা”তার মানে,গুরু মা এখন অপরাধ জগতের চাইদের শিরা – ধমনীতে বিরাজ করছেন। যেমন মা দুর্গা সর্ব প্রাণীতে বিরাজ করেন।লোকমুখে শোনা যায়, গুরু মা এখন রাজ্যের ক্রাইম কুইন।কারণ তার পেছনে আছে রাজনৈতিক সিম্বল। ব্যাস, তাতেই ঘটে চলছে “গুরু মা”র বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি।

সম্প্রতি ঋষ্যমুখের ঠিকাদার দিব্যেন্দু রায়কে ১১ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য হুলিয়া জারি করেছিল স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।তাদের মধ্যে ছিলো দক্ষিণ জেলার যুব মোর্চার নেতা সঞ্জু নমঃ,বিজেপি নেতা রাজু নাথ, বাদল ভৌমিক ও রাজীব দত্ত। সঞ্জু নম: ঠিকাদার দিব্যেন্দুকে কুকুরের মতো মারধর করবে বলেও হুমকি দিয়েছিলো।
এরপর ঠিকাদার দিব্যেন্দু রায় ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তিনি এই ঘটনা চিঠির মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা:মানিক সাহা ও প্রদেশ বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যকে অবগত করেছিলেন। তার মধ্যেই আবির্ভাব ঘটে “গুরু মা’র”। যিনি এই মুহূর্তে রাজ্যব্যাপী নিগো কুইন বা ক্রাইম কুইন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।

দক্ষিন জেলা বিজেপির অন্দর মহলের খবর অনুযায়ী, গেরুয়া বাহিনীর বাহুবলী নেতা তথা স্ত্রী হত্যাকারী সঞ্জু নম: “গুরু মা”র অনুগামী। সঞ্জুর সঙ্গে থাকা বাদল ভৌমিক রাজু নাথ, রাজীব দত্তরা “গুরু মা”র ভাব শিষ্য। তারা বাঁচার জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন গুরু মার। তিনি শিষ্যদের বলে দিয়েছেন, ” “গুরু মা” আছে!তোদের কোনো চিন্তা করতে হবে না।” অর্থাৎ গুরু মা দক্ষিণ জেলাতে থাকা তার শিষ্যদের অভয় বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপর গুরু মা পুরো ঘটনা নিজেই টেক ওভার করেন।

আগরতলার রঞ্জিত নগরস্থিত বাড়ি থেকে ঠিকাদার দিব্যেন্দুকে ডায়াল করেন। গুরু মা ঠিকাদারকে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন, এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। খুব শীঘ্রই তাকে গুরু মার শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলেই নাকি হবে সব মুশকিল আসান।ঠিকাদার দিব্যেন্দু গুরু মার কথায় সম্মতি প্রকাশ করে তার বিধান জানতে চাইছিলেন। গুরু মা সটান জানিয়ে দিয়েছেন, সঞ্জু – বাদল ও রাজু’র মতো শিষ্যদের ১১ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গুরু মা’কে সাত লক্ষ টাকা দিলেই তিনি মীমাংসা করে দেবেন। এবং তার রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবেন। তাকে কেউ যন্ত্রনা করবেন না।

ঠিকাদার দিব্যেন্দু রায় গুরু মায়ের। কথা শুনে আতকে উঠেন।নিজের ঘাটের পয়সা খরচ করে কাজ করছেন। কিন্তু তারপরও কেন নিষ্কলুষ মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহার জামানায় গৈরিক সেনাদের তোলা বাবদ দিতে হবে মোটা অঙ্কের কাঞ্চনমূল্য ? বিচারের আশায় ঠিকাদার গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের গুরু মার কাছে।কিন্তু গুরু মার কাছেও তিনি কোনো বিচার পেলেন না।

বরং গুরু মা তার শাড়ির আঁচল দুই হাত দিয়ে ধরে দাড়িয়ে গেলেন ঠিকাদার দিব্যেন্দুর সামনে। গুরু মায়ের শাড়ির আঁচলের গভীরতা দেখে ভরকে যান খোদ ঠিকাদার দিব্যেন্দু।

কতো টাকা দিলে সন্তুষ্ট হবেন গুরু মা বা হালের নিগো কুইন? এটাই এখন মাথায় ঘুরছে গুরু মার শিষ্যদের ভয়ে বাড়ি – ঘর ছেড়ে ভবঘুরে হয়ে থাকা ঠিকাদার দিব্যেন্দু রায়কে।