
ডেস্ক রিপোর্টার, ২৩জুন।।
চিটফান্ড রাজ্যের মানুষের কাছে “অভিশপ্ত নাম”। চিটফান্ডের ক্ষতের যন্ত্রনায় কাতর মানুষ।আজও মানুষ ফেরত পায়নি চিটফান্ডের টাকা।
২০১৮ – র বিধানসভা নির্বাচনে চিট ফান্ড ছিলো বড় ইস্যু। বিজেপি এই চিটফান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে ঝড় তুলেছিল নির্বাচনে। বিজেপির তৎকালীন সর্ব ভারতীয় সভাপতি তথা হালের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসে চিটফান্ড নিয়ে বড় ঘোষনা দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, বিজেপি সরকার গঠন করলেই চিটফান্ডের সঙ্গে জড়িত লোকজনকে জেলে ঢোকানো হবে। তুলে আনা হবে কবর থেকে। চিটফান্ডের বঞ্চিত আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হবে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ।

চিটফান্ডের প্রতারিত আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেয়েছেন কিনা,সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তূ এখন দেখা যাচ্ছে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চিটফান্ড কর্তারা রাজ্যের নেতা – মন্ত্রী – পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে উঠা বসা করছেন।

পাঠক বর্গ আপনারা চিনতে পেরেছেন মন্ত্রী টিংকু রায় ও পশ্চিম জেলা এসপি কিরণ কুমারের সঙ্গে থাকা মার্কিং করা ব্যক্তিটি কে? এই রাজ্যের চিটফান্ডের যন্ত্রনায় কাতর মানুষ গুলি নিশ্চয় এই ব্যক্তিকে চিনবেন। তাদের কাছে তিনি খুবই পরিচিত।

*নাম: তনয় দাস।
*বাড়ি: আগরতলা।
• চিটফান্ড সংস্থা: রুবি স্টার ।
* পদ: চেয়্যারম্যান।

রুবি স্টার নামক চিটফাট সংস্থাটি রাজ্যের মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। বহু গরীব মানুষ দু টাকা লাভের জন্য কোম্পানির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে জমা করেছিল তাদের কষ্টার্জিত অর্থ । অভিযোগ, মানুষ রুবি স্টার সংস্থা থেকে তাদের জমা আমানত ফেরত পাননি।মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে চিটফান্ড সংস্থা রুবিস্টারের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তনয় দাস।চিটফান্ডের ধরপাকড়ের সময় তনয় গা ঢাকা দিয়েছিল নিরাপদ জায়গাতে।

অন্যান্য চিটফান্ড সংস্থার মতো রুবিস্টারের বিরুদ্ধেও মামলা নিয়েছিলো পুলিশ।এখন চিটফান্ড সংক্রান্ত সমস্ত মামলার দায়িত্বে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তাতে কি? সবই অথৈ জলে।

চিটফান্ডের টাকা আত্মসাতকারী তনয় দাস এখন বিলাসবহুল জীবনযাত্রা করছেন। তিনি থাকেন দামী দামী হোটেলে। সুইমিং পুলের নীল জলে করেন স্নান।সফর করেন বিদেশেও।তিনি এখন হয়ে উঠেছেন সমাজসেবী। এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তাতে অবশ্যই কাউর কোনো সমস্যা নেই।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, চিটফান্ড সংস্থার প্রতারক কর্তা মন্ত্রী ও পুলিশ কর্তাদের সামনে রেখে নিজের কালো মুখ সাদা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

কি বুঝতে পেরেছেন, মন্ত্রী টিংকু রায়, আইপিএস কিরণ কুমার। ও তেলিয়ামুড়ার এসডিপিও প্রসূন ত্রিপুরা। মন্ত্রী ও এসপি না জানলেও এসডিপিও সাহেব প্রসূন ত্রিপুরার তো সবটাই নখে দর্পে আছে। রহস্যের জাল কোথায় আটকে গিয়েছে? বলেছে চিটফান্ডের প্রতারিত মানুষ।
তনয় দাস এখন ত্রিপুরা বডি বিল্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। সম্প্রতি শহরের রবীন্দ্র ভবনে নিজ পুত্রের জন্মদিনে অনুষ্ঠিত রক্তদান শিবিরে আসার জন্য রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায় ও জেলার এসপি কিরণ কুমারকে আমন্ত্রণ করেছিলেন তনয়। নিঃসন্দেহে এটা খুব ভালো উদ্যোগ। চিটফান্ড কর্তা তনয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সামাজিক কাজে ছুটে আসেন মন্ত্রী টিংকু রায় ও জেলা পুলিশের এসপি কিরণ কুমার। মন্ত্রী ও এসপির সঙ্গে ফটো শুট করে কি বার্তা দিতে চাইলেন তনয়? রুবিস্টারে আমানতকারীরা বলছেন, প্রতারক তনয় বুঝাতে চেয়েছেন, তার সঙ্গে সমাজের এলিট ক্লাসের লোকজনের সম্পর্ক। স্বাভাবিক ভাবেই রুবি স্টার কোম্পানি থেকে প্রতারিতরা তাকে কিছু বলার সাহস করবে না।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপির মূল এজেন্ডা ছিলো চিটফান্ড। কিন্তু এই চিটফান্ড কর্তার সঙ্গে কিভাবে মেলামেশা করছেন রাজ্যের ক্রিড়া মন্ত্রী টিংকু রায়? তাতে তো মন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। কেন রক্তদান শিবিরে আসার আগে মন্ত্রী তনয় দাস সম্পর্কে খোজ নেন নি।একই অবস্থা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার কিরণ কুমার। চিটফান্ড কর্তা তনয় দাস এসপি কিরণ কুমারকে একজন ডাইনামিক এসপি বলেও উল্লেখ করেছেন।কিরণ কুমার সদ্য জেলা পুলিশের এসপি হয়েছেন।এখনো জেলার মানুষ ভালো করে তার নাম জানে নি।তিনি জেলাতে এসে নজর কাড়ার মত তেমন কোনো কাজ করেন নি। তারপর তনয় তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসপি কিরণ কুমারকে “ডাইনামিক অফিসার” বলে উল্লেখ করেছেন। রুবিস্টারের বঞ্চিত আমানতকারীদের বক্তব্য, নিজের অপরাধ ঢাকার জন্যই এসপির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছেন ভেকদারি সমাজসেবী তথা প্রতারক তনয়।
আমানতকারীদের কথায়, চিটফান্ডের টাকা আত্মসাত করে তনয় প্রচুর সম্পত্তি করেছে। তার বেশ কয়েকটি ট্রাক গাড়ি রয়েছে। শহর ও শহরের বাইরে আছে প্রচুর জমি।এই সমস্ত টাকার উৎস কোথায়? একবার খোজ নিয়ে দেখেছেন রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায় ও জেলা পুলিশের এসপি কিরণ কুমার? আসলে প্রতারিত আমানতকারীদের বুক ফাটা কান্নার যন্ত্রণার কথা রাজ্যের মন্ত্রী মহোদয় টিংকু রায় ও জেলার এসপি কিরণ কুমার তো বলতে পারেন না।কারণ তখন তারা রাজ্যে ছিলেন না। তাই মানুষের যন্ত্রণার কথাও পৌঁছায় নি মন্ত্রী বাবু ও পুলিশ কর্তার কর্ন কুহরে।বলছেন চিটফান্ডের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হওয়া গরীব অংশের মানুষ।