ডেস্ক রিপোর্ট,২২ সেপ্টেম্বর।।
প্রাণীপালন ও ডেয়ারি বা দোহশালা
শিল্পের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এজন্য প্রাণীপালন ও ডেয়ারি শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষের রোজগার বৃদ্ধি করার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। গ্রামীণ এলাকার মানুষ প্রাণীপালনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। গতকাল সচিবালয়ের ১ নং কনফারেন্স হলে প্রাণীসম্পদ বিকাশ, তপশিলী জাতি কল্যাণ ও শ্রম দপ্তরের এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাণীসম্পদ বিকাশে রাজ্যে যে সাফল্য এসেছে তাকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। সভায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ, তপশিলী জাতি কল্যাণ ও শ্রমমন্ত্রী ভগবান দাস উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়াও পর্যালোচনা সভায় মুখ্যসচিব কুমার অলক, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা ড. কে শশীকুমার, তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা সন্তোষ দাস এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যে গ্রামীণ এলাকার বহু মানুষ গবাদি পশু, হাঁস মোরগ পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা ও রোজগার সুনিশ্চিত করতে গবাদি প্রাণী ও পশুপাখির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকাকরণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এখন শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ যেমন রয়েছে তেমনি পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধাও সরকার থেকে দেওয়া হচ্ছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট ডেয়ারি শিল্প স্থাপনে সমবায় সমিতি ও স্বসহায়ক দলগুলিকে উৎসাহ দিতে হবে। পর্যালোচনা সভায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার জানান, রাজ্যে বর্তমানে পশু সম্পদ রয়েছে ১৩ লক্ষ ১৮ হাজার এবং পাখি হাঁস সহ পোল্ট্রির সংখ্যা ৪১ লক্ষ ২৪ হাজার। প্রাণী স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ২০২০-২১ সালে ১২ লক্ষ ৪ হাজার গবাদি পশুর এবং ৩৩ লক্ষ ৩৮ হাজার পাখির টিকাকরণ করা হয়েছে। রাজ্যে দুধ, মাংস, ডিম উৎপাদনে দপ্তর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ফলে প্রতিবছরই দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সভায় সচিব তথ্য তুলে ধরে বলেন, রাজ্যে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে যেখানে দুধ উৎপাদন হয়েছিলো ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ২৬৮ মেট্রিকটন ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ৬ হাজার ১৭০ মেট্রিকটন। মাংস উৎপাদনেও রাজ্যে সাফল্য এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজ্যে মাংস উৎপাদন হয়েছিলো ৫০ হাজার ৮৪০ মেট্রিকটন, ২০২০-২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫২ হাজার ১৮০ মেট্রিকটন। দপ্তরের সচিব জানান, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ডিমের উৎপাদন হয়েছিলো ২৯ কোটি ৫০ লক্ষ। ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ কোটি ২৪ লক্ষ্য।
সভায় সচিব দপ্তরের অন্যান্য কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জানান, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুবিধাভোগীদের শংকর প্রজাতির শূকর ছানা সরবরাহ ও ৬ হাজার ৩৭৩টি ছোট ছোট পোল্ট্রি ইউনিট স্থাপনে সুবিধাভোগীদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ৫৯৭টি শূকরের ও ৩৭৫টি ছাগলের খামার গড়ে তুলতে সুবিধাভোগীদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ১৮ হাজার ২৬০টি পরিবার হাঁস ও মোরগ পালনে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, তপশিলী জাতি সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও রোজগার বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্যচাষ, প্রাণীপালন ও কৃষির মতো উন্নয়নের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলির অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় তপশিলী জাতি সম্প্রদায়ের মানুষকে বেশি করে যুক্ত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এসসি কর্পোরেশন থেকে যারা ঋণ পাচ্ছেন তারা প্রাপ্ত ঋণের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার করছেন কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে দপ্তরকে নির্দেশ দেন। সভায় তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব এল এইচ ডার্লং জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে এবং পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে তা তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে রূপায়ণ করা হয়ে থাকে। রাজ্যে বর্তমানে ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯১৮ জন তপশিলী জাতিভুক্ত জনগণ রয়েছেন। তাদের সার্বিক উন্নয়নে দপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ১৫ হাজার ১৪৪ জন প্রিমেট্রিক এবং ১৮ হাজার ৪১২ জন এসসি ছাত্রছাত্রীকে পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরজন্য ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালে ডাটা আপলোডিং-এর কাজ চলছে। তিনি জানান, স্পেশাল সেন্ট্রাল অ্যাসিস্টেন্ট টু সিডিউল কাস্ট সাব প্ল্যানে ৩,১৪৩ জন এসসি জাতিভুক্ত সুবিধাভোগীকে আয়ের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে এসসি সম্প্রদায়ভুক্ত এলাকার ৫৩টি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য ১৬৬ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনার কর্মসূচি দ্রুত রূপায়ণের লক্ষ্যে দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ৩০টি এসসি অধ্যুষিত গ্রামকে আদর্শ গ্রামে রূপান্তরিত করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এরজন্য প্রতিটি গ্রামকে ২০ লক্ষ টাকা করে মোট ৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৮টি গ্রামের বিভিন্ন পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রধান সচিব আরও জানান, তপশিলী জাতিভুক্ত পরিবারে রোজগারের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ছাগল পালন, মৎস্যচাষ ইত্যাদি প্রকল্পে চলতি অর্থবর্ষের এখন পর্যন্ত ৬,১৯৩ জনকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়েছে।
