ডেস্ক রিপোর্টার, ৯এপ্রিল।।
         রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলিতে পারাপারের ব্যবসা নতুন নয়। বরং সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চল গুলিতে পারাপারের ব্যবসা কুটির শিল্পের রূপ নিয়েছে। দিনের পর দিন ধরেই চলে আসছে ইদার -কা – মাল উধার পাঠানোর প্রক্রিয়া। গোটা চক্রের সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর একটা অংশ। দুই বাহিনীর সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতেই পাচারকারীরা এপারের পণ্য ওপারে পাঠিয়ে দেয়।  আবার ওপারের পণ্য এপারে নিয়ে আসে।
         খবর অনুযায়ী, রাজ্যে দ্বিতীয় বিজেপি – আইপিএফটি জোট সরকার গঠনের পর সিপাহীজলা জেলার সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে মাথাচারা দিয়েছে শক্তিশালী “বর্ডার সিন্ডিকেট”। সিপাহীজলা জেলার বক্সনগর, কমলনগর ও কলমচৌড়া  অঞ্চলে নতুন কায়দায় “বর্ডার সিন্ডিকেট” মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। চক্রের চাইরা সীমান্তের অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে  কামাচ্ছে টু-পাইস। অর্থাৎ তাদেরকে দিতে হচ্ছে জিজিয়া কর। আর না দিলে পারাপারের ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। এমন হুশিয়ারি দিয়েছে সিন্ডিকেটের চাইরা। যেকোনো পাচার বাণিজ্য স্থান পায় “কালো বাণিজ্যে”র তালিকায় । সিপাহীজলা অঞ্চলে এরকম অবৈধ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়।


রাজধানীর আগরতলা সহ আশপাশ অঞ্চলগুলিতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাচার বাণিজ্যের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যবসায়ীরা। তারা নিয়ম করেই সীমান্তের ওপারে কাপড়,চিনি ,পেঁয়াজ সহ আরো নানান পণ্য পাঠিয়ে থাকে।অবশ্যই তার সঙ্গে রয়েছে অবলা গৃহপালিত প্রাণী গরু । তালিকায় রয়েছে রাজ্যের উৎপাদিত মাদকদ্রব্য গাঁজা।
         সীমান্ত সূত্রের খবর,অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্য রাস্তায় আটক করে সিন্ডিকেটের চাইরা তোলা আদায় করছে। প্রতিটি জায়গার সিন্ডিকেটের মাতবররা বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রেট ধার্য করে দিয়েছে। তাদের কাছে তোলার টাকা জমা দিলেই  পন্য সামগ্রী ওপারে পাঠানো যাবে। অন্যথায় রাস্তার মধ্যেই আটকে দেওয়া হচ্ছে তাদের পণ্য বোঝাই গাড়ি। সিন্ডিকেটের চাইদের অর্থ দেওয়ার পরেও স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করতে হচ্ছে। পারাপারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যবসায়ীরা টাকা দিচ্ছে পুলিশকে। তারা আবার কখনো কখনো টাকা দিচ্ছে সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফকেও। তাতে অবশ্যই কারোর কোন সমস্যা নেই ।কারণ অবৈধ ব্যবসা করলে খানে খানে জিজিয়া কর দিতেই হবে ।এটাই যেন বিধির বিধান।


প্রশ্ন হচ্ছে, আচমকা বক্সনগর,কমলনগর ও কলমচৌড়াতে সিন্ডিকেট চক্র মাথা চাড়া দেওয়াতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল গুলিতে।এতদিন পাচার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র একাংশ পুলিশ ও বিএসএফকে প্রণামি দিয়ে আসতো ।এখন তাতে নতুন সংযোজন সিন্ডিকেট। অবশ্যই সিন্ডিকেট চাইদের টাকা দিতে চাইছে না ব্যবসায়ীরাও। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পাচার বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট মাতব্বরদের  কয়েকবার ঝামেলা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে হুমকি, পাল্টা হুমকি। তাতে বিষিয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পরিবেশ। পুলিশ এই সমস্ত ঘটনা জানা সত্ত্বেও  নিশ্চুপ ।  স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে,যে কোন সময় পাচার বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট চাইদের প্রকাশ্যে গোলাগুলি হতে পারে ।কারণ বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে সিন্ডিকেট হওয়ার কারণে পাচার বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীরাও চলে এসেছে এক সূত্রে। তারাও এখন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।


পাচারকারীরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনোভাবেই সিন্ডিকেট চাইদের কোন রকম প্রণামী দেবে না। প্রয়োজনে ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। কিন্তু টাকা ছাড়বে না ।পাচার বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীদের এই হুমকির পর পাল্টা দিয়েছে সিন্ডিকেট মাতব্বরা।তারাও হুলিয়া  জারি করেছে। তাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে গোটা অঞ্চলে ব্যবসা করতে দেবেনা। প্রয়োজনে তারা রক্ত ঝড়াতে প্রস্তুত। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা না নিলে যে কোন মুহূর্তে সিপাহীজলা হয়ে উঠতে পারে রক্ত স্নাত। এমন আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *