ডেস্ক রিপোর্টার, ২৮অক্টোবর।।
২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের কংগ্রেস রাজনীতিতে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছিলো। বিজেপির উত্থানে এক লহমায় রাজনীতির কৃষ্ণ গহ্বরে চলে গিয়েছিলো শচীন – সুকুময় – সুধীরের কংগ্রেস। দেশীয় স্তরে কংগ্রেসের মতো রাজ্যেও কংগ্রেস মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ঘরে বসে গিয়েছিলো।
প্রদেশ কংগ্রেসকে উজ্জীবিত করতে এআইসিসি প্রদ্যুৎ কিশোরকে (হালের তিপ্রামথা) সুপ্রিমো সভাপতি করেছিলো।একেবারেই নতুন মুখ।প্রদ্যুৎ কিশোর ১৯- র লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। লোকসভার আসনে জয়ী হতে না পারলেও কংগ্রেসকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ইস্যুতে কংগ্রেসের হাই-কমান্ডের সঙ্গে প্রদ্যুৎ কিশোরের মতানৈক্য হয়। এরপর প্রদ্যুৎ কংগ্রেস ছেড়ে দেন।
এই পরিস্থিতিতে এআইসিসি দলের সিনিয়র নেতা বীরজিত সিনহা ও গোপাল রায়ের উপরও ভরসা রাখতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত অস্থায়ী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় পিযুষ কান্তি বিশ্বাসকে (হালের টিডিএফ নেতা)। এডিসি নির্বাচনে কংগ্রেসের ফের কঙ্কাল সার বেরিয়ে আসে। এরপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যান পীযুষ বিশ্বাস। কংগ্রেসের হাই- কমান্ড শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখে সিনিয়র নেতা বীরজিত সিনহার উপর। বীরজিতকে প্রদেশ সভাপতি হিসাবে নিযুক্তি দেয়। বীরজিতের নেতৃত্বে পুর ও নগর ভোট করে কংগ্রেস। কিন্তু বীরজিত আশার আলো দেখাতে পারেন নি।
পুর ও নগর ভোটের পর আচমকা বিজেপির দুই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ও আশীষ কুমার সাহা কংগ্রেসে যোগ দেন। এরপরইও কংগ্রেসের মরুভূমিতে একটু একটু করে জল চুয়াতে থাকে। উপনির্বাচনে সুদীপ – আশীষ লড়াই করেন। সুদীপ তার দূর্গ আগলে রাখলেও, ব্যর্থ হন আশীষ। সুদীপ রায় বর্মন কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর পোস্ট অফিস চৌমুহনীর সাদা বাড়ির চেহারা অনেকটাই পাল্টে যায়। সীমিত সংখ্যক কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা চনমনে হয়ে উঠে। উপনির্বাচনে সুদীপের জয়ের পর ২৩কে নিয়ে নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধতে থাকে।
ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গেছে বিধানসভা নির্বাচনের কাউন- ডাউন। কংগ্রেস প্রদ্যুৎ কিশোরের তিপ্রামথা ও সিপিআইএম উভয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করতেই প্রস্তুত। নানান সভা মঞ্চে কংগ্রেস আগ বাড়িয়ে মথা – বামকে জোটের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বামেরা ঘুরিয়ে কংগ্রেসের প্রস্তাবকে সাড়া দিলেও প্রদ্যুতের তরফ থেকে তেমন কোনো সাড়া নেই। রাজনীতিকরা বলছেন,২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রায় মুখহীন ভাবেই লড়াই করবে। দলের স্ট্রাইকিং লিডার সুদীপ রায় বর্মন তার নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে নিশ্চিত জয়ের আশা করতে পারেন।কিন্তু বাদবাকি ৫৯টি আসনে কংগ্রেস আর কোথায়ও এই আশা করতে পারে না। টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহার সঙ্গে আশীষ কুমার সাহা ২৩শেও বিশেষ চমক দিতে পারবেন না বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা। বীরজিত সিনহার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কৈলাসহরে ২৩শেও ফেভারিট বাম প্রার্থী। এই তিনটি কেন্দ্রই কংগ্রেস লড়াইয়ের মানসিকতা দেখাতে পারবে। জয় পরাজয় পরের কথা। আর কোথায়ও কিছু করতে পারবে না। কারণ সুদীপ বিনা তাদের কোনো “মুখ” নেই। রাজ্যের বাদবাকি বিধানসভা কেন্দ্র গুলোর মধ্যে বড়জলা (যদি সৃষ্ট মোহন দাসকে প্রার্থী করা হয়) লড়াই দিতে পারবে। বাধারঘাটে রতন দাস ছাড়া আর দুয়েকটি নাম ভেসে উঠছে নির্বাচনে যাদের জামানত জব্দ হবে না। তবে যদি কংগ্রেস কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট হয়,তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হবে।অন্যথায় এক কুম্ভ সুদীপ দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না পোস্ট অফিস চৌমুহনীর নেতৃত্ব। কংগ্রেস রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমনটাই বলছেন রাজনীতিকরা। অর্থাৎ কংগ্রেস নেতৃত্ব লম্ফজম্ফ করলেও আক্ষরিক অর্থে ২৩-এ তারা খুব বেশি দূর এগোতে পারবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।