ডেস্ক রিপোর্টার, ১৮আগষ্ট।।
“প্রদেশ তৃণমূলে নেই কাজের স্বাধীনতা।পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দরকার কাজের জন্য।অন্যথায় দলের কাজ করা যাবে না।” উক্ত লাইনগুলি একটি রাজনৈতিক চিঠির ভাষ্য।এই ভাষাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুবল ভৌমিক। অভিষকে দেওয়া এই চিঠি নিয়ে তীব্র গুঞ্জন তৃণমূল শিবিরে।
সদ্য সমাপ্ত উপভোটের পর তৃণমূল কংগ্রেস লেজে গোবরে একাকার।দলের ফলাফল প্রত্যাশার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি। তৃণমূল নেতাদের কাছে এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত হলেও রাজনীতিকদের কাছে তৃণমূলের ২.৯শতাংশ প্রাপ্য ভোট ছিলো প্রত্যাশিত। উপভোটের আগে “জনতার মশাল” নিউজ ওয়েব পোর্টাল নিজস্ব সমীক্ষা করে বলেছিলো, চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জামানত জব্দ হবে।নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর “জনতার মশাল”র সমীক্ষা সত্যি হয়।
চার কেন্দ্রের উপভোটের পর তৃণমূল কংগ্রেসের সংসারে শুরু হয় অশান্তি।প্রদেশ সভাপতি সুবল ভৌমিক ও দলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুরু হয় মতানৈক্য। চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। সুবল অনুগামীদের বক্তব্য, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কোন স্বাধীনতা দেননি সুবল ভৌমিককে। এই কারণেই সুবল ভৌমিক তার নিজের মতো করে পারেননি দল পরিচালনা করতে। এর প্রভাব পড়েছে সদ্য সমাপ্ত উপ নির্বাচনে।
অন্যদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের দাবি, সুবল ভৌমিকের কার্যকলাপে অনেক ভুল ত্রুটি ছিল।এইগুলি তুলে ধরেছিলেন পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সমস্ত ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই নাকি উপভোটে অপ্রত্যাশিত ফল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের।
উপভোটের পর থেকেই দলের প্রদেশ সভাপতি সুবল ভৌমিক নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন । তিনি আসেননি দলের সদর কার্যালয়ে। কর্মী সমর্থকদের সঙ্গেও তৈরি হয়েছে দূরত্ব। ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও সুবলকে গুরুত্ব দেন নি।প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে আলোচনা না করেই দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের রাজ্য কমিটি ঘোষনা দেন। তার পেছনে কাজ করেছে আসাম রাজনীতিতে গুরুত্বহীন নেত্রী সুস্মিতা দেবের মস্তিষ্ক।
সুবল অনুগামীদের দাবি, গত ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ স্মরণে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা গিয়েছিলেন সুবল ভৌমিক। সেখানে তিনি মৌখিকভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে ছিলেন দল পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তাঁর কিছু সমস্যার কথা। অভিষেক শুনেছেন সুবলের বক্তব্য।এবং গত ২৬জুলাই সুবল ভৌমিকের সঙ্গে কলকাতায় অভিষেক বৈঠক করার জন্য দিনক্ষণও চূড়ান্ত করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসে।
প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠক বানচাল হওয়ার পর সুবল ভৌমিক চলতি মাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেন। সুবল ভৌমিক তার দেওয়া চিঠিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে বলেন, “দলের কাজ করার জন্য তিনি পূর্নাঙ্গ স্বাধীনতা পাচ্ছেন না। তার কাজে বার বার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। স্বাধীনতা না পেলে সভাপতির দায়িত্বে থেকে কোনো কাজ করতে পারবেন না।তবে দলের একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে কাজ করবেন।”
তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, অভিষেককে দেওয়া চিঠিতে সুবল ভৌমিক কাউর নাম উল্লেখ না করলেও প্রকারন্তে তিনি দলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। কারণ উপ ভোটের মুখে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিতা দেব ও তৃণমূলের ভোট সমীক্ষক সংস্থা আই- প্যাকের টিমের সঙ্গে সুবল ভৌমিকের নানান ইস্যুতে মতানৈক্য হয়েছে। এরপর থেকেই শুরু ঝামেলা।ভোটের পর শুরু হয়েছে দোষারোপের পাল্লা।তবে সুবল – রাজীব – সুস্মিতা বা আই – প্যাক যাই বলুক না কেন, ত্রিপুরাতে এই মুহূর্তে তৃণমূলকে তারা গড্ডায় ঠেলে দিয়েছে এবং ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে মমতা – অভিষেকের স্বপ্নকে।
