ডেস্ক রিপোর্টার, ২০আগষ্ট।।
অবশেষ দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার পর দিদির মমতার আঁচল ছেড়ে দাদা মোদির পেছনেই ছুটতে শুরু করেছেন রাজ্য রাজনীতির দলবদলু নেতা সুবল ভৌমিক। অর্থাৎ প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুবল ভৌমিক পাকাপাকি ভাবি ত্যাগ করছেন তৃণমূলের সংসার।তিনি যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। আগামী ২৮ আগস্ট এডিসির সদর দপ্তর খুমুলুঙ-এ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা জনসভায় ফের গেরুয়া পতাকা হাতে নেবেন সুবল। অন্তত কৃষ্ণনগরস্থিত গেরুয়া বাড়ি থেকে এমন খবরই ভেসে আসছে রাজনৈতিক মহলে।
শাসক দলের এক শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই সুবল ভূমি বিজেপি আসাম – ত্রিপুরার সংগঠন মন্ত্রী ফনিন্দ্র নাথ শর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিস্তারিত কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে।সুবল বিজেপিতে ফের আসার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। প্রথম দিকে নেতৃত্ব রাজী হয় নি।যদিও পরবর্তী সময়ে তারা সুবল ভৌমিককে সবুজ সংকেত দেন। সুবল ভৌমিককে দলে না নেওয়ার জন্য বিজেপির রাজ্য স্তরের একাংশ নেতা সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে সায় দেন নি। গত সপ্তাহে সুবল ভূমি আচমকেই রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি তার অনুগামীদেরও এসব কথা বলেননি। চুপিসারেই তিনি হয়েছিলেন রাজ্যন্তরী।তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিরে আসেন রাজ্যে। খবর অনুযায়ী, সুবল ভৌমিক গিয়েছিলেন গুয়াহাটিতে। এবং সেখানেই ফনিন্দ্র নাথ শর্মার সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আর্জি জানান।
কেন্দ্রীয় নেতাদের যুক্তি, সুবল ভৌমিক এখন অতীতের ছায়া। তারা তা ভালো করে জানেন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সুবল ভৌমিককে দলে নেওয়া হবে। সুবলকে দলে টেনে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব সর্বভারতীয় স্তরে বোঝানোর চেষ্টা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর কোনো নেতৃত্ব আস্থা রাখতে পারেন না।সুবল ভৌমিক গিয়েছিলেন তৃণমূলে। কিন্তু মমতার দলের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তিনি ফের চলে এসেছেন বিজেপিতে। গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্ব সারা দেশেই এই বার্তা দেবে। বিশেষ করে বাংলার রাজনীতিতে। এই মুহূর্তে বাংলায় বিজেপি বিরোধী দল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাজিত করে বাংলার মসনদ দখল করতে চাইছে বিজেপি।তাই সুবলকে এই মুহূর্তে ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব।
সদ্য সমাপ্ত রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সুবল ভৌমিককের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস গোহারা হেরেছে। দলের চার প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। সর্বোপরি বলা যায়, রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির বাজারে সুবলের টিআরপি তলানিতে ঠেকেছে। উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের এই ফলাফলের কারণে বঙ্গ নেতৃত্বের কাছে অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন সুবল ভৌমিক। তাছাড়া রয়েছে আর্থিক বিষয়ও। সব মিলিয়ে তৃণমূলের সংসারে সুবল ভৌমিক হয়ে উঠেছেন এক “ছন্নহীন” সভাপতি। তাকে দলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও নেত্রী সুস্মিতা দেব কোনরকম পাত্তাই দিচ্ছে না। সুবল ভৌমিককে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই তারা নিচ্ছেন দলীয় কর্মসূচি। কাজের মাধ্যমে রাজীব- সুস্মিতা বুঝিয়ে দিলেন দলে সুবল গুরুত্বহীন। এই বিষয়টি অবশ্যই সুবল ভৌমিক মেনে নিতে পারেননি। নিজের রাজনৈতিক কারবার টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সর্ব ভারতীয় রাজনৈতিক দল। রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে শাসক দলের অবস্থান অন্যান্য বিরোধী দল থেকে অনেক ভালো। স্বাভাবিকভাবেই সুবল নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা ভেবে ফের গেরুয়া শিবিরেই যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *