*অভিজিৎ ঘোষ*
——————————-
সুবল ভৌমিক-সুস্মিতা দেব ও আই-প্যাক ব্যর্থ। তাদের নেতৃত্বে আগরতলা পুর নিগমে খাতা খুলতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস।সান্ত্বনা স্বরূপ তৃণমূল কিছু আসনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। আর তাতেই আত্ম-হারা সংশ্লিষ্ট তৃণমূল নেতৃত্ব। শুরু করেছেন নিজেদের ঢাক পেটাতে। বার বার “সন্ত্রাস” ইস্যুকে সামনে এনে ঢাকতে চেষ্টা করছেন নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা। এখন হয়তো সুবল-সুস্মিতাদের হাত নিসফিস করছে।কেননা “পোলো টাওয়ার” ও বনমালী পুরের ক্যাম্প অফিসে বসে যে ত্রিপুরায় রাজনীতি হবে না এটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন সুস্মিতা দেব।আর সুবল ভৌমিকের রাজনৈতিক জীবনই এরকম।তিনি যেন ভাজা মাছ উল্টাতেও জানেন না–এই ভান বরাবর করে থাকেন। বলছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অতি বড় সমর্থকরা।
সুবল-সুস্মিতা সহ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মোটা প্যাকেজ পাওয়া “আই-প্যাক”র কর্মীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ তৃণমূলের “রাউডি সিং রাঠুর”। তিনি কে?নিশ্চয় প্রশ্ন ছুঁড়বেন পাঠকরা?
তিনি আর কেউ নন। তিনি রাজপুত বংশধর ত্রিপুরার ভূমিপুত্র আশীষ লাল সিং রাঠুর। প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেতার নেতৃত্বেই ঘাসফুল শিবির আমবাসা পুরযুদ্ধে খাতা খুলতে সক্ষম হয়েছে। আমবাসার ১৩নম্বর ওয়ার্ড দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস।তৃণমূলের প্রার্থী সুমন পাল তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি’র প্রার্থীকে পরাজিত করেন।
প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটি আশীষ লাল সিংকে খোয়াই,ধলাই,উনকোটি ও উত্তর জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছিল। অর্থাৎ সুবল-সুস্মিতারা স্মার্ট সিটির হাওয়া গায়ে লাগাতে আশীষকে নির্বাসন দিয়েছিলেন রাজধানীর বাইরে। রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংয়ের ছেলে আশীষ বুঝিয়ে দেন যারা রাজ্যের মাটির গন্ধ বুঝতে পারেন তারাই সাফল্য পান। দলের নির্দেশ অনুযায়ী, আশীষ লাল সিং চলে যান তাঁর গন্তব্য স্থলে। নিষ্ঠার সঙ্গে শুরু করেন তার নেট-ওয়ার্ক।
ভোটের কয়েকদিন আগে তেলিয়ামুড়াতে বিজেপি-তৃণমূল কংগ্রেসের সংঘর্ষ হয়েছিলো।এই সংঘর্ষে বিজেপিকে পাল্টা আঘাত হানে তৃণমূল কংগ্রেস।আমবাসাতেও বিভিন্ন সংঘর্ষের সময় বিজেপি’র চোখে চোখ রাখতে সক্ষম হয়েছিলো তৃণমূল। তার পেছনে ছিলো দলের নেতা ভূমিপুত্র আশীষ লাল সিংয়ের অদম্য সাহস ও রাজনৈতিক কৌশল।কিন্তু আগরতলা পুর নিগম এলাকায় সুবল ভৌমিক একবারও সেই মাত্রায় পৌছতে পারেন নি। অভিযোগ,বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ঘটনাস্থলে নেই সুবল।রাতে আক্রান্ত কর্মীদের হাসপাতালে গিয়ে দেখতেও কুণ্ঠা বোধ করেন।আর সুস্মিতা দেবের কথা যতটা কম বলা যায়,ততটাই ভালো।কারণ রাজধানী আগরতলা সহ গোটা রাজ্যের মানুষের পালস এখনো বুঝতে পারেন নি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুস্মিতা দেব। সুস্মিতাকে রাজ্য রাজনীতির শিরা-ধমনীর আচ পেতে অতিক্রম হয়ে যাবে ২০২৩।এমনটাই বলছেন, রাজনীতিকরা।ভোট বিশ্লেষকদের দাবি, এতো তাড়াতাড়ি সুস্মিতার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি এখনো রাজ্য রাজনীতির সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় গুলি বুঝে উঠতেই পারেন নি।
রাজনীতিকদের কথায়, তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কৌশলী সংস্থা “আই-প্যাকে”র কর্মীরা ভাবছে ত্রিপুরা আয়তনের দিক দিয়ে বাংলার অনেক জেলা থেকে ছোট।এখানে অতশত অঙ্কের প্রয়োজন নেই।তারাই বলবেন শেষ কথা।বাস্তব অর্থে আই-প্যাকের কর্মীদের বাংলা নিয়ে ধারণা থাকলেও ত্রিপুরার রাজনীতি নিয়ে কোনো সাম্যক ধারণা নেই।তার প্রমান পাওয়া যায় দুর্বল স্টিয়ারিং কমিটি গঠন। ও আগরতলা পুর নিগমে নিজের সার্ভে করে প্রার্থী দিতে না পারা। সব মিলিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে শত যোজন এগিয়ে রাউডি রাঠুর আশীষ লাল।
নির্বাচনের কিছুদিন আগে কৈলাশহরে আক্রান্ত হয়েছিলেন আশীষ লাল সিং।তাঁর গাড়িতে ছিলো দলীয় দুই নেত্রী রাখি দেবনাথ ও স্বর্ণপ্রভা চ্যাটার্জী। আশীষ লাল সিংয়ের অভিযোগ, বিজেপি’র দুষ্কৃতীরা তাকে আক্রমণ করেছিলো।তিনি বেশ কয়েকদিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। অবাক করার মত বিষয় দলের “বেডবয়”(সুবল-সুস্মিতার কথায়)আশীষ লাল সিং আক্রান্ত হওয়ার পর প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটা বিবৃতিও দেওয়া হয়নি।মুখ খুলেন নি সুস্মিতা-সুবলরা? একই অবস্থা আই-প্যাকের।সুস্মিতা-সুবলরা আক্রান্ত হলে তারা সংবাদ মাধ্যমকে সরাসরি ফোন করে।আর হোয়াটস এপ্সে থাকে এই সংক্রান্ত “বার্তার” ফুলঝুরি।কেন তাদের এই আচরণ? তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের দাবি, দলের একমাত্র ভালো সংগঠক আশীষ লাল সিংকে রাজনৈতিক প্রতি হিংসার কারণে সাইড লাইন করতে চাইছেন সুবল-সুস্মিতা ও রাজ্যে কর্মরত আই-প্যাকের কর্মীরা।পর্দার আড়ালে আশীষকে নিয়ে চলছে এক গভীর ষড়যন্ত্র।
শুধু তাই নয়, সুবল-সুস্মিতারা পুর নির্বাচনে নতুন কোনো মুখ তুলে আনতে পারেননি।এমনটাই বলছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা।এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আশীষ লাল সিং।তাঁর হাত ধরেই আত্ম প্রকাশ ঘটেছে শর্মিষ্ঠা দেব সরকার ও দীপান্বিতা চক্রবর্তী নামক দুই নেত্রীর।তারা দুইজনই কাজ করেছেন শহরের রামনগর ও অভয়নগরে।বিজেপির সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে কাজ করেছেন তারা।খোয়াই, ধলাই, উনকোটি ও উত্তর জেলায় সাহসের সঙ্গে কাজ করেছেন আরো দুই নারী নেত্রী রাখি দেবনাথ ও স্বর্ণপ্রভা চ্যাটার্জি। তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, আশীষ লাল শুধু একজন নেতা নয়, তিনি নেতৃত্ব তৈরি করতেও সিদ্ধহস্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *