“রবীন্দ্র ভবন চত্বরে বেশ কয়েকটা নামী রেস্তোঁরা রয়েছে। প্রতিটার ভিতরেই আছে অঘোষিত “পানশালা” বা “বার”। আজকাল বিলাস বহুল রেস্তোঁরা গুলিতে পানশালার ব্যবস্থা না থাকলে ব্যাবসা- ই হবে না। তাই রেস্তোঁরা মালিকরাও মিনি পানশালার ব্যবস্থা রাখেন।রাজধানীর সমস্ত রেস্তোঁরা গুলিতেই আছে “বার সংস্কৃতি”।”

ডেস্ক রিপোর্টার, ১০ সেপ্টেম্বর।।
      “হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার” – স্বপ্নের স্মার্ট সিটির নতুন ঘোষিত “পানশালা” অর্থাৎ “বার”। আর এই স্মার্ট সিটিতে স্মার্ট পানশালা থাকবে না, এটা কেমন করে হয়? অন্তত স্মার্ট সিটির স্মার্ট যুবাদের কাছে এটা একটা চাহিদাও বটে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, স্মার্ট – আগরতলার বুকে স্মার্ট পানশালা মাথা তুলতেই শুরু হয়ে গেলো রে রে ডাক। যেন সর্বস্ব শেষ। অশুচি হয়ে গেলো গোটা আগরতলা। বলা চলে, শহরের সংস্কৃতির পিঠস্থান বলে খ্যাত রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন। কারণ রবীন্দ্র ভবনে গা ঘেষে উঠা নগর উন্নয়ন ভবনের মাথার উপর “হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার” নামক পানশলা তার ডানা মেলে বসেছে।তাতেই নাকি অপবিত্র হয়ে উঠেছে শহরের সংস্কৃতির পিঠস্থান  রবীন্দ্র ভবন। ব্যাস, আসলে একথা যারা বলছেন, তাদের অধিকাংশই ঘোমটার নিচে খেমটা নাচন দেখতে অভ্যস্ত।


রবীন্দ্র ভবনে আশপাশে থাকা প্রতিটি হোটেলে বার থাকা সত্ত্বেও সংস্কৃতির পিঠস্থান এতদিন অশুচি হয় নি। একেবারে গঙ্গার জলের মতো পবিত্র ছিলো!

রবীন্দ্র ভবন চত্বরে বেশ কয়েকটা নামী রেস্তোঁরা রয়েছে। প্রতিটার ভিতরেই আছে অঘোষিত “পানশালা” বা “বার”। আজকাল বিলাস বহুল রেস্তোঁরা গুলিতে পানশালার ব্যবস্থা না থাকলে ব্যাবসা- ই হবে না। তাই রেস্তোঁরা মালিকরাও মিনি পানশালার ব্যবস্থা রাখেন।রাজধানীর সমস্ত রেস্তোঁরা গুলিতেই আছে “বার সংস্কৃতি”। ভাবতেও অবাক লাগে, রবীন্দ্র ভবনে আশপাশে থাকা প্রতিটি হোটেলে বার থাকা সত্ত্বেও সংস্কৃতির পিঠস্থান এতদিন অশুচি হয় নি। একেবারে গঙ্গার জলের মতো পবিত্র ছিলো!  কিন্তু “হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার” মাথা তুলতেই শহরের সংস্কৃতি প্রবণ (!) মানুষের কাছে “জাত” চলে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।তাদের কাছে এই বার একেবারেই যেন অস্পৃশ্য। আর মাঠ গরম করার যন্ত্রও হাতে পেয়ে যায় বিরোধী দলগুলি।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে কিছু সংখ্যক মদ্যপায়ী মূল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে প্যাগ নিচ্ছে আপন মনে।

রবীন্দ্র ভবন থেকে পাঁচশ মিটারের মধ্যেই বিলেতি মদের কাউন্টার।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে কিছু সংখ্যক মদ্যপায়ী মূল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে প্যাগ নিচ্ছে আপন মনে।তখন কি অশুচি হয় না সংস্কৃতির পিঠস্থান?  রবীন্দ্র ভবনে ঠিক উল্টো দিকেই আছে বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের দোকান। রাত বিরাতেই এই সমস্ত ফাস্টফুডের আড়ালে আবডালে চলে রঙিন প্যাগের খেলা। বার বিরোধী সংস্কৃতি প্রবণ লোকজনের চোখ কিভাবে এড়িয়ে যায় এই সমস্ত ঘটনা?


রাজ্যের এক উদ্যোগী যুবক যখন কর্পোরেট কায়দায় টেন্ডার দিয়ে পানশালার অনুমতি পেয়েছেন, এবং স্মার্ট সিটির স্মার্ট পানশালার ঝাঁপ খুলেছেন,তখন সংস্কৃতির পিঠস্থানের সূচি – অশুচি প্রশ্ন উঠতে শুরু হলো কেন? নাকি এই পানশালাকে অঙ্কুরেই ধংস করার কোনো গভীর ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে? এই প্রশ্ন তুলছেন খোদ সংস্কৃতি প্রবণ লোকজনের কেউ কেউ।

“হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার” বারকে নাইট ক্লাব বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবে তা নয়, নাইট ক্লাবের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।

“হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার” বারকে নাইট ক্লাব বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবে তা নয়, নাইট ক্লাবের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। এই বারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ” শুধু মাত্র প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও রবিবার সন্ধ্যা থেকে বারে চলবে ডিজে বক্স। ” পানশালার ধর্ম অনুযায়ী, মদের পাশপাশি রেস্তোরাঁ বা সরাইখানার ব্যবস্থাও থাকবে এখানে। তাই এখানে খাবারও পরিবেশন করা হবে খদ্দেরদের।


পানশালা  শুধুমাত্র মদ খাওয়ার জায়গা নয়, বাস্তবে এটি একটি সামাজিক পরিবেশ। যেখানে মানুষ একত্রিত হয় এবং সময় কাটায়।

পানশালা  শুধুমাত্র মদ খাওয়ার জায়গা নয়, বাস্তবে এটি একটি সামাজিক পরিবেশ। যেখানে মানুষ একত্রিত হয় এবং সময় কাটায়।পানশালার বাস্তব চরিত্র না বুঝেই কিছু অংশের মানুষ ও রাজনৈতিক ব্যাপারীরা নিজেদের অতি সংস্কৃতি প্রবণ হিসেবে তুলে ধরতে “হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার”কে টার্গেট করেছেন। এবং নিজেদের নিয়ে আসতে চাইছেন প্রচারের আলোতে।  বার বার গর্জে উঠছে তাদের প্রতিবাদের “স্ফুলিঙ্গ”। অথচ রাজ্যে সংঘটিত নানান অমানবিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রাখেন এনারা। তখন তাদের স্ফুলিঙ্গ নিস্প্রভ হয়ে যায়। আগরতলাতে এমন দৃশ্য ভুরি ভুরি। হায়, রে বিচিত্র রাজ্যের বিচিত্র মানুষ। তারাই নাকি আবার বুক ফুলিয়ে বলেন, “আমরাই প্রতিবাদী কন্ঠ।”
      


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *