জানাজার পর দুপুর সাড়ে ৩টের দিকে হাদির দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কেন্দ্রীয় মসজিদে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয় তরুণ নেতাকে। একাধিক শিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সমাধিস্থ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নির্দিষ্ট চত্বরে। এ বার সেখানে স্থান পেলেন হাদিও।
#সমীরণ রায়#
_________________
ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর।।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধে পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
শনিবার ৪টায় হাদীকে দাফন করা হয়। এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজ়ায় হাদীর নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ জানাজায় লাখো লাখো জনতার ঢল নামে। অবশ্য, এই জানাজাকে ঘিরে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা! নমাজ শেষ হতেই অনেকেই দৌড়ে ঢোকার চেষ্টা করেন জাতীয় সংসদ ভবনে। পরে সেনাবাহনীর হস্তক্ষেপে তাদের নিরন্ত্রণ করা হয়। সেখানে অবস্থানরত সেনা সদস্যরা তাদের বাধা দেন। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী বেলা আড়াইটায় দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে সংসদে প্রবেশের গেটগুলি ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী। কড়া নিরাপত্তায় জোরদার করা হয় ভবনের চার দিক। মাইকে সকলকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন সেনা সদস্যরা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তারা সেনা বাহিনীর সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। রে অবশ্য ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে থাকে।

শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজ়ায় হাদির জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। হাদিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন লাখো মানুষ।
নামাজের আগে ড. ইউনূস বলেন, ‘তোমাকে আমরা বিদায় জানাতে আসিনি আজ। তুমি আমাদের বুকের ভিতরে আছ, সব বাংলাদেশির বুকের ভিতরে আছ।’’ এ সময়ে হাদির পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যদের পক্ষ থেকে হাদির খুনিদের গ্রেফতারি ও চরম শাস্তির দাবি জানানো হয়।
জানাজার পর দুপুর সাড়ে ৩টের দিকে হাদির দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কেন্দ্রীয় মসজিদে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয় তরুণ নেতাকে। একাধিক শিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সমাধিস্থ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নির্দিষ্ট চত্বরে। এ বার সেখানে স্থান পেলেন হাদিও।
দাফনের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক পার্টির আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী এবং হাদির পরিবারের সদস্যরা।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকার বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেখানেই গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।

