শিলচর ডেস্ক, ১০ এপ্রিল।।
বরাকের গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কন্ঠস্বরকে রুদ্ধ করতে বাঙালি সংগঠন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (বিডিএফ) মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়ের বিরুদ্ধে ফের মামলা করিমগঞ্জ পুলিশের।ডিলিমিটেশন করে বরাকের দুটি আসন কেটে নেওয়ার প্রতিবাদে পদক্ষেপ নেওয়ার “অপরাধে”(!) ঘটনার দুবছর পর প্রদীপ দত্তরায়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে ক্ষমতা প্রদর্শন করলো বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার পুলিশ।এর আগেও বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষায় সরব হওয়ার অপরাধে ৬৭ বছর বয়েসে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
করিমগঞ্জ পুলিশের দায়ের করা মামলার ( জি আর -১৩৬৪/২০২৩) প্রেক্ষিতে আগামী ৬ মে প্রদীপ দত্তরায়কে শ্রীভূমি জেলার কোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করিমগঞ্জ পুলিশের পক্ষে এই মামলাটি করেছিলেন ডিএসপি গীতার্থ দেবশর্মা ,এসআই লীলা প্রসাদ শর্মা ও রাতাবাড়ি থানার এসআই সুরজ দত্ত। এতে সাক্ষ্য দিয়েছেন করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ রামানুজ চক্রবর্তী ও বর্তমানে হোজাই জেলায় কর্মরত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুজিত চৌধুরী।
দায়ের করা মামলাতে বলা হয়েছে, ডিলিমিটেশন করে বরাকের দুটি বিধানসভা আসন কেঁটে নেবার প্রতিবাদে ২০২৩-র ২৭জুন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র পক্ষ থেকে বারো ঘন্টাব্যাপী সর্বাত্মক বরাক বনধের ডাক দিয়েছিলেন প্রদীপ দত্তরায়। এই বনধের সমর্থন করেছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,সিপিআইএম, এআইইউডিএফ ও আম আদমি পার্টি। পুলিশের অভিযোগ, এই বনধ সফল করতে প্রদীপ দত্তরায়ের উস্কানিতে করিমগঞ্জের জনগনকে ভয় দেখানো হয়েছে। জনগণকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। দোকান-পাট জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, পিকেটাররা সেদিন রাস্তা অবরোধ করেছে।জরুরী পরিষেবা ব্যাহত করেছে।কেউ কেউ জনগনকে হুমকি দিয়েছেন। তা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। এমনকি বনধ সমর্থকরা রেল রোকো কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।এসবের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১/৫০৬/১৮৬ ধারায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
প্রদীপ দত্তরায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রসঙ্গে বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, প্রথমত,পুলিশের দায়ের করা এজাহারে বিডিএফ’র সাথে অন্যান্য দলের নাম রয়েছে। কিন্তু বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়কের নাম ব্যতীত অন্য দলের কোনো দলের পদাধিকারীর নামোল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত কাছাড় ,হাইলাকান্দি বাদ দিয়ে শুধু করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে এই মামলাটি কেন করা হল? ,তার পেছনেও রহস্য রয়েছে।
তৃতীয়ত, ঘটনার দুবছর পর হঠাৎ করে এই মামলা করা হয়েছে। জয়দীপ বলেন, এই সমস্ত বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট, শুধুমাত্র বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ককে হেনস্থা করার জন্যই নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে করিমগঞ্জ পুলিশ। জয়দীপের কথায় , ২০২৩ সালে সমষ্টি পুনর্বিন্যাসের অজুহাতে সম্পুর্ন অনৈতিক ভাবে বরাক উপত্যকার দুটি আসন কর্তন করা হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তে বরাকের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বরাক বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল বিডিএফ এর পক্ষ থেকে। সমর্থন জানিয়েছিল বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল।
“এই বনধে জনগণের অংশগ্রহণ এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল যে বিডিএফ’র পক্ষ থেকে একজন পিকেটারকেও মাঠে নামাতে হয়নি।বরাকের সর্বত্র স্থানীয় জনগন উদ্যোগী হয়ে এই বনধকে সম্পুর্ন সফল করেছেন। তাই ভয় বা হুমকি প্রদর্শন বা কোনো ধরনের জোরজবরদস্তির প্রসঙ্গ এক্ষেত্রে সম্পুর্ন মিথ্যাচার। “- বক্তব্যে যোগ করেছেন বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য।
তিনি চ্যালেঞ্জ ঠুকে বলেন, সেরকম কোন ঠোস প্রমাণ যদি করিমগঞ্জ পুলিশের হাতে থাকে তবে তাঁরা তা প্রকাশ করুক। জয়দীপের ভাষায়, কোনো আদালত জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত গনতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। বনধ করে জোর জবরদস্তি বা সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তিহানি করলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন কোর্টের রায়ে।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জানিয়েছেন, বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এই উপত্যকার একমাত্র দল যারা বিগত অনেক বছর ধরে উপত্যকার প্রতি সরকারের বৈষম্য ও এখানকার সমস্যা নিয়ে নিয়ত সরব রয়েছে। তাঁরা সম্পুর্ন গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন , প্রতিবাদ ইত্যাদি করে যাচ্ছেন। তাঁদের কন্ঠরোধ করার জন্যই বারবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিডিএফ নেতৃত্বের বক্তব্য, এসব করে তাঁদের গনতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নেওয়া যাবে না।কারণ বরাকের বৃহৎ সংখ্যক জনগনের সমর্থন ও শুভেচ্ছা তাঁদের সাথে রয়েছে।অবিলম্বে করিমগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনকে এই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন জয়দীপ। অন্যথা তারা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বলেও পাল্টা হুমকি দিয়েছেন।বিডিএফ’র পক্ষ থেকে আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে প্রেস বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
#Tripura #Assam #Karimganja # barak #BDF#JM