আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন বা হুমকির শিকার হয়েছেন অন্তত ২৩ জন, ২০ জন প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন, ১১৮ জন সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন এবং ১২৩ জনকে প্রকাশিত সংবাদ বা মতামতের কারণে মামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর।।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে অন্তত ৩৮১ জন সাংবাদিক বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) বুধবার প্রকাশিত বাৎসরিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আইনি নিপীড়নের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকরা রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় উভয় পক্ষের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করেছে।
আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৩৮১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন বা হুমকির শিকার হয়েছেন অন্তত ২৩ জন, ২০ জন প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন, ১১৮ জন সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন এবং ১২৩ জনকে প্রকাশিত সংবাদ বা মতামতের কারণে মামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। চলতি বছরে দুর্বৃত্তদের দ্বারা তিন জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং চার জনের মরদেহ রহস্যজনকভাবে উদ্ধার হয়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৯২ জন, চট্টগ্রামে ৫৩ জন, গাজীপুরে ২০ জন, রংপুরে ২১ জন, কুমিল্লায় ২১ জন এবং বরিশালে ১২ জন সাংবাদিক রয়েছেন। বাকি ১৬২ জন অন্যান্য জেলার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত।
আইনি নিপীড়নের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাংবাদিক আনিস আলমগীরের গ্রেফতার। রাতভর ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আটক রাখার পর তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয় এবং আদালতে হাজির করার পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এছাড়া ৭ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নেয়। তাকে একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়, যা তার রাজনৈতিক মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রতিবেদনটি আরও উল্লেখ করেছে, ২০২৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ যথেষ্ট ছিল না। বিভিন্ন সময় সংস্কৃতিবিষয়ক সংবাদ সম্মেলন, গণঅভ্যুত্থান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মতামতকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হয়েছে। এমনকি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চলতি বছরের এই সহিংসতা ও আইনি নিপীড়ন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি কাঠামোগত প্রবণতার অংশ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা সাংবাদিকদের হয়রানি গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক শাসনের জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জনস্বার্থে সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, আইনি সুরক্ষা এবং ভিন্নমতের প্রতি রাষ্ট্রের সহনশীলতা নিশ্চিত করা এখন অত্যন্ত জরুরি।

