#সমীরণ রায়#
_______________
আবদুল হামিদ ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ব্যক্তিগত সুখবিলাসের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা এবং সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাবদ রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর।।
বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে সাজসজ্জার নামে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাবদ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এমন অভিযোগে এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান টিম কাজও শুরু করেছে। অভিযোগে তার তিন ছেলের নামও এসেছে। তারা হলেন- প্রাক্তন এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক, রাসেল আহমেদ তুহিন ও রিয়াদ আহমেদ তুষার।
রোববার দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন (প্রতিরোধ) এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আবদুল হামিদ ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ব্যক্তিগত সুখবিলাসের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা এবং সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাবদ রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে আবদুল হামিদের ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তিন তলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে উঠেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই বাসা ছেড়ে দেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, আবদুল হামিদ তার ওই আবাসিক ভবনের দুই পাশের রাস্তা হাঁটার (ওয়াকওয়ে) জন্য বাঁধিয়েছেন। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে খালসংলগ্ন রাস্তায় অত্যাধুনিক ল্যাম্প পোস্ট সবই তৈরি করা হয়েছিল তার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে। প্রকল্পের অংশ না হলেও, পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়। রাজউকের তত্ত্বাবধানে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। যেখানে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে আবদুল হামিদ সপরিবারে নিকুঞ্জের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরপর এলাকাটি রীতিমতো নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া সাধারণের প্রবেশে ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তবে পট পরিবর্তনের পর আলোচিত বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কোটায় নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন আবদুল হামিদ। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর তাকে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি নকশা অনুমোদন নেন। মোট সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন আবদুল হামিদ। নিকুঞ্জ-১ এলাকায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও আরও অনেকের বাড়ি রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রীসহ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এবং শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের অনেকে ওই এলাকায় চোখ ধাঁধানো ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাদের মধ্যে হামিদের বাড়ির পাশেই সাত নম্বর প্লটে বাড়ি করেছেন পলাতক প্রাক্তন হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। চার নম্বর রোডের তিন নম্বর বাড়ির মালিক হাসিনার আত্মীয় মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাত।
এছাড়া শেখ হাসিনার প্রাক্তন প্রেস সেক্রেটারি নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক নেতা ও শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য এবং দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমা খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী কবির হোসেন ওরফে শেখ কবির এবং সুইডেন আওয়ামী লীগের নেতা বিতর্কিত ব্যবসায়ী কাজী শাহ আলম ওরফে ফুল শাহ আলম নিকুঞ্জ এলাকায় বাড়ি করেছেন।

