#সমীরণ রায়#
_________________
ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর।।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্যসব নেতাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোসহ কয়েকটি দাবিতে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’কর্মসূচি পালন করেছে জুলাই ঐক্য নামের সংগঠন। এ কর্মসূচিতে ‘বাবরের পথ ধরো, সেভেন সিস্টার স্বাধীন করো’ সহ নানান স্লোগান দেন তারা।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার রামপুরা সেতু এলাকা থেকে লং মার্চ শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৫টায় এ কর্মসূচি শেষ হয়। কর্মসূচি থেকে ভারতীয় প্রক্সি রাজনৈতিক দল ও সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানানো হয়। এর আগে বিকেল ৪টায় ঢাকার বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের এ লং মার্চে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে প্রগতি সরণিতে অবস্থান ও বক্তব্য দেন জুলাই ঐক্যের নেতাকর্মীরা। লং মার্চ কর্মসূচি ঘিরে এদিন বিকেল ৩টা থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এদিন বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে ‘নসিহত’ করা হয়েছে। তারা নির্বাচন নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে উপদেশ চাইছে না বাংলাদেশ। ‘বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। এখন সামনে আমরা একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এই মুহূর্তে তো আমাদের নসিহত করার তো কোনো প্রয়োজন নেই।
এর আগে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’কর্মসূচিটি ঢাকার হোসেন মার্কেটের সামনে অবস্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ স্লোগান ধরেন- ‘বাবরের (আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) পথ ধরো, সেভেন সিস্টার স্বাধীন করো’। তার সঙ্গে লং মার্চে থাকা কয়েকশ লোক একই স্লোগানে সুর মেলান। এসময় ‘যে ভারত খুন করে, সে ভারত ভেঙে দাও’, ‘যে ভারত হাসিনা পালে, সে ভারত ভেঙে দাও’ সহ নানান স্লোগান দেন। পরে বিকেল পৌনে ৫টায় লং মার্চ শেষ করে জুলাই ঐক্য।
জুলাই ঐক্যের নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব খুনি ভারতে পালিয়েছেন। ভারত এমন সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়েছে। এসব সন্ত্রাসীকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল ভারতের সঙ্গে বন্ধত্ব করে ক্ষমতায় যেতে চায় মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এখন নতুন করে আরেকটি দল ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়। এটা বাংলাদেশে হতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের মানুষ এমন বন্ধুত্ব চায় না।
সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রায়ই সীমান্তে নিরীহ মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে ভারত। এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে জুলাই ঐক্যের নেতারা বলেন, এখন বাংলাদেশে ভারতের আগ্রাসন বন্ধ না হলে বাংলাদেশ তাদের সহযোগিতার প্রতিদান দেবে। ভারতের সেভেন সিস্টারকে স্বাধীন করতে সহযোগিতার মাধ্যমে এ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপরও ভারতের কাছে বাংলাদেশ মাথা নত করবে না।
এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) বুধবার দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আইভ্যাকের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘নিরাপত্তার কারণে’ দিনের কার্যক্রম বন্ধের কথা বলা হয়।
সেখানে বলা হয়, চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আপনাদের নজরে আনা যাচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্ক ঢাকার আইভ্যাক আজ দুপুর ২টায় বন্ধ করা হবে। আজকের দিনে ভিসা আবেদন জমার স্লট যাদের রয়েছে, তাদেরকে পরবর্তী অন্যদিনে স্লট দেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, সর্বশেষ যে বক্তব্য (ভারতের) এসেছে, তাতে আমাদের নসিহত করা হয়েছে। সেটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, এই সরকার ডে ওয়ান (প্রথম দিন) থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে যে আমরা “অত্যন্ত উঁচু মানের, মানুষ যেন ভোট দিতে যায়, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না। ভারত আমাদের এটা (নির্বাচন) নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটাকে আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি। তারা (ভারত) জানে এর আগে গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে (ভারতের) অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। ওই সময় নির্বাচনগুলো যে প্রহসনমূলক হয়েছিল, সে সময় তারা (ভারত) একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে আমরা একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এই মুহূর্তে তো আমাদের নসিহত করার তো কোনো প্রয়োজন নেই। ‘আমরা কী করব? আমরা এমন একটা নির্বাচন করব, যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারবে। যাদের ভোট দেবে, তারাই নির্বাচিত হবে, যেটা এর আগে গত ১৫ বছরে ঘটেনি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও জোটও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছে। তাহলে তো তারাও ভারতের মতো নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছে বলা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিষয়টা কিন্তু এক রকম না। তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু যোগাযোগ সব সময় আছে এবং তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগে আছে। কারণ, আমরা চাই যে তারা এখানে তাদের অবজারভারদের (নির্বাচন পর্যবেক্ষক) পাঠাক।
এ পর্যায়ে ভারতের বক্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটা কিন্তু এভাবে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে যে আমাদের অবস্থানটা গ্রহণযোগ্য না। এ ধরনের কথাবার্তার পাশাপাশি বলা যে এ রকম হতে হবে নির্বাচন। এই নসিহত আমরা গ্রহণ করতে পারি না। বিশেষত এ কারণে যে তাদের তো এই সেন্টিমেন্টটা (মনোভাব) দেখা যায়নি গত ১৫ বছর। হঠাৎ করে এটা কেন তারা চেয়ে বসল?’
এর আগে গত সোমবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। সেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জুলাই অভ্যুত্থান দমনের চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে গত ১৭ নভেম্বর এই দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তারা ভারতে অবস্থান করছেন।

