আমাদের সাংবাদিকরা ভারত গিয়েছিলেন। আপনাদের (সাংবাদিক) নিয়ে আমার একটা অবজারভেশন আছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যখন আপনাদের বলেছিলেন তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ইত্যাদি নির্বাচন চান। আপনাদের মুখে তারা একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন, আপনারা কেউ করেননি। আপনাদের মুখে প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়েছিল যে- এই কথা গত ১৫ বছর বলেননি কেন! আগের নির্বাচন কি এই ফর্মুলায় সঠিক ছিল?

                 *ঢাকা থেকে সমীরণ রায়*
                 ______________________

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের নির্বাচন ও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ ফেরত চাওয়ার ইস্যুতে প্রশ্ন না করায় বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সমালোচনা করলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন,  বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত কেন কোনো প্রশ্ন তোলেনি, এ প্রশ্নটি সাংবাদিকদের করা উচিত ছিল।   তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার বিষয়ে আমরা আমাদের আইনি দিক পালন করেছি এবং আদালতের নির্দেশেই আমরা ফেরত চেয়েছি। তারা (ভারত) দেখুক তাদের মতো করে, আমাদের এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ সমালোচনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে সম্প্রতি দিল্লিতে বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে আইনি দিক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। আপনাদের কিছু জানিয়েছে কি তারা এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা আইনি দিক পালন করেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছি। তারা কোনো জবাব দেয়নি। তারা তাদের দিক থেকে দেখতে থাকুক।সাংবাদিকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিকরা ভারত গিয়েছিলেন। আপনাদের (সাংবাদিক) নিয়ে আমার একটা অবজারভেশন আছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যখন আপনাদের বলেছিলেন তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ইত্যাদি নির্বাচন চান। আপনাদের মুখে তারা একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন, আপনারা কেউ করেননি। আপনাদের মুখে প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়েছিল যে- এই কথা গত ১৫ বছর বলেননি কেন! আগের নির্বাচন কি এই ফর্মুলায় সঠিক ছিল? আপনারা কেউ এই প্রশ্নটি তুলেননি কেন? আগের নির্বাচনগুলো কি সঠিক ছিল? তিনি (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) নিজে থেকেই এ সুযোগটি দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনারা প্রশ্নটি করেননি।
তিনি আরও বলেন, আমি বরং অবাক হয়েছি যে, আপনাদের মধ্যে অনেক সিনিয়র পুরনো সাংবাদিক ছিলেন, কিন্তু কেউ এই প্রশ্নটি তুলেননি। যেহেতু উনি (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) সুযোগ দিয়েছেন, আপনারা যদি বিব্রত করতে নাও চান, যখন তিনি সুযোগ দিয়েছেন তখন প্রশ্নটি করেননি।
এ সময় রাষ্ট্রীয় দাওয়াতে জাকির নায়েক দেশে আসছেন কি-না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামিক বক্তা জাকির নায়েককে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে-এমন কিছু আমার জানা নেই। আমি এখনই আপনাদের কাছে থেকে জানলাম। আমি এরকম কিছু শুনিনি।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইসের পরিবর্তে নতুন যিনি বাংলাদেশের জন্য মনোনীত হয়েছেন, তাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এটুকু আপনাদের বলতে পারি, বাংলাদেশে সমস্যা সৃষ্টি হয়, এমন কেউ এখানে আসবে না। এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে চাই না।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে যেহেতু আমরা ভারসম্যপূর্ণ সম্পর্ক মেনে চলি, এতে অন্য কারও উদ্বেগের কিছু নেই। আমরা ভারসম্য মেনে চলি। সবখানেই আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এমন না যে, বাংলাদেশ কোথায় কী করে, তা কেউ গায়ে লাগায় না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আকারের তুলনায় যথেষ্ঠ গুরুত্ব পায় বলে আমি মনে করি।
নির্বাচনের সময়সীমা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দাতা দেশসহ উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সংশয় নেই। এছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে বিদেশি কোনও চাপ নেই। 
নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, যারা আসতে আগ্রহী, তারা সাধারণত নির্বাচনের আগে সফরে আসেন। এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক সফর কিছু হয়েও গেছে। সর্বশেষ আইআরআই’র প্রতিনিধিদল এসেছিল। তারা আবারও আসবেন। আমরা তো একেবারে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাজেই যারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চায়, আমরা অবশ্যই তাদের উৎসাহিত করবো। কিন্তু আমরা চাই না যে, পর্যবেক্ষকের আড়ালে কেউ শুধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নাম করার জন্য আসুক, এটা আমরা চাইবো না। আমরা এই পর্যন্ত যা দেখেছি, যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, ইইউ,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমরা মনে করি, এটা একটা ভালো লক্ষণ। সময় কাছাকাছি আসলে হয়তো আরও পর্যবেক্ষক আসবেন। আমরা চাই, নির্বাচন স্বচ্ছভাবে সবার সামনে প্রদর্শিত হোক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *