“রাজ্যের শাসক জোটের বিভিন্ন নেতা এই ইস্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন। সর্বশেষে প্রদেশ বিজেপির সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্যও ইতিহাস না জেনেই সিপিএমের দিকে ঢিল ছুড়েছেন। এটা কোন ভাবেই মানা যায় না। কারণ, ছত্রিশগড়ের রাজনীতির সঙ্গে নকশালদের সম্পৃক্ততা কিভাবে হয়েছে, তা জানেনই না প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব।”
“২০০১-২০০২ সালে ছত্রিশগড়ে নকশালদের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। তারা উৎখাত করেছিল অজিত যোগীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে। আর এখন বিজেপি সাধু সেজে নকশাল দমনে নেমেছে।”- বক্তা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য তুলে ধরেন।
হঠাৎ করে জিতেন্দ্র চৌধুরী কেন ছত্রিশগড়ে নকশাল ও বিজেপির মধ্যে হওয়া পুরানো চুক্তি কবর থেকে তুলে আনলেন? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক।
পলিটব্যুরোর সদস্য জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, বিগত কিছুদিন ধরে ছত্রিশগড়ে প্রশাসন নকশালদের বিরুদ্ধে টানা অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানে অনেক নকশালের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সর্বভারতীয় সিপিএম একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। আর তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে ত্রিপুরা বিজেপি।
সর্বভারতীয় সিপিএমের জারি করা বিজ্ঞপ্তি নিয়ে দেশের শাসকদল বিজেপি এবং দেশের প্রশাসনও কোনরকম মন্তব্য করেনি। অথচ নকশালের ইতিহাস না জেনেই ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্ব সিপিএমকে লক্ষ্য করে নানান কটু মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সর্বভারতীয় সিপিএমের জারি করা বিজ্ঞপ্তি নিয়ে দেশের শাসকদল বিজেপি এবং দেশের প্রশাসনও কোনরকম মন্তব্য করেনি।
জিতেন্দ্র চৌধুরী কথায়, রাজ্যের শাসক জোটের বিভিন্ন নেতা এই ইস্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন। সর্বশেষে প্রদেশ বিজেপির সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্যও ইতিহাস না জেনেই সিপিএমের দিকে ঢিল ছোড়ছেন। এটা কোন ভাবেই মানা যায় না। কারণ, ছত্রিশগড়ের রাজনীতির সঙ্গে নকশালদের সম্পৃক্ততা কিভাবে হয়েছে, তা জানেনই না প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য বিজেপি চুক্তি করেছিল নকশালদের সঙ্গে।
ছত্রিশগড়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট টেনে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ২০০১-২০০২ সালে ছত্রিশগড়ের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস ।মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অজিত যোগী। কংগ্রেস সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য বিজেপি চুক্তি করেছিল নকশালদের সঙ্গে। এর ফলে ছত্রিশগড়ের বিধানসভায় কংগ্রেসের পতন ঘটিয়ে বিজেপি এন্ট্রি নিয়েছিলো। অর্থাৎ নকশালদের সঙ্গে বিজেপির বন্ধুত্ব অনেক পুরানো।
রাতের আঁধারে জিতেন্দ্র চৌধুরীদের গেস্ট হাউজে চলে আসে নকশালরা। তারা জিতেন্দ্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, “নির্বাচনী প্রচার করলে পরিণতি ভালো হবে না।
জিতেন্দ্র চৌধুরীর কথায়, তৎকালীন সময়ে সিপিএমের হয়ে ছত্রিশগড়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি ।সঙ্গে ছিলেন বঙ্গ সিপিআইএমের একজন বাম নেতা। রাতের আঁধারে জিতেন্দ্র চৌধুরীদের গেস্ট হাউজে চলে আসে নকশালরা। তারা জিতেন্দ্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, “নির্বাচনী প্রচার করলে পরিণতি ভালো হবে না। কারণ, তারা কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিজেপিকে ছত্রিশগড়ের মসনদে বসাতে চাইছে।” জিতেন্দ্র চৌধুরী তথ্য দিয়ে বলেন, ছত্রিশগড়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর নকশালরা সেই রাজ্যে প্রথম সারির ১২জন কংগ্রেস নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছিলো। ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে জিতেন্দ্র চৌধুরীর বক্তব্য, নকশালদের বোতল থেকে বের করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। তাদেরকে হাতিয়ার করেই ছত্রিশগড়ের ক্ষমতা দখল করেছে। এখন নকশালরা বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই নকশাল দমনে অভিযান শুরু করেছে ছত্রিশগড়ের প্রশাসন। বিরোধী দলনেতার সাফ কথা, নকশাল,উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদীদের কখনও সিপিআইএম সমর্থন করে না। নকশাল – উগ্রবাদীদের প্রথম শিকার সিপিআইএমই।ত্রিপুরার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী ঘুরিয়ে বলেন, ত্রিপুরাতেও রাজনৈতিক মদতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল উগ্রপন্থীরা। গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলেও একই চিত্র।
কেন্দ্রের মোদি সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২৬ সালের মধ্যে গোটা দেশকে করবে নকশালমুক্ত। তারই অঙ্গ হিসেবে শুরু হয়েছে অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট।
প্রসঙ্গত, বিগত কিছুদিন ধরে ছত্রিশগড়, মধ্য প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ,অন্ধপ্রদেশ,মহারাষ্ট্র সহ দেশের আরো কয়েকটি রাজ্যে “অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট” শুরু করেছে প্রশাসন। কেন্দ্রের মোদি সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২৬ সালের মধ্যে গোটা দেশকে করবে নকশালমুক্ত। তারই অঙ্গ হিসেবে শুরু হয়েছে অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট। তাতেই দিনের পর দিন কোণঠাসা হচ্ছে নকশালরা। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বুলেট যুদ্ধে মৃত্যু হচ্ছে নকশাল পন্থীদের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু নকশালকে গ্রেফতার করছে নিরাপত্তা বাহিনী এবং অনেকেই করেছে আত্মসমর্পণ। এই মুহূর্তে গোটা নকশালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের “অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট” দেশীয় রাজনীতির আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।