
Exclusive News প্রসঙ্গ:৮০- র দাঙ্গা। আজও কেন কেন্দ্র – রাজ্যে লাল ফিতায় বাঁধা দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্ট? কি ছিলো রিপোর্টে?
* অভিজিৎ ঘোষ *
_______________
১৯৮০- র ৮ জুন রাজ্যের ইতিহাসে একটি অভিশপ্ত দিন।এই দিনেই জিরানিয়ার মান্দাইয়ে হয়েছিল বাঙালি হত্যার যজ্ঞ।মান্দাই গণহত্যার পর নড়েচড়ে বসেছিলো দেশ সহ গোটা বিশ্ব।আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে স্থান পেয়েছিল মান্দাইয়ের নারকীয় ঘটনা।
গণ হত্যার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তি পেয়েছিল ? না।
কিন্তু গঠিত হয়েছিলো একটি তদন্ত কমিশন।নাম দীনেশ সিং কমিশন
২০২৪- র ৮ জুন মান্দাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা ৪৪ বছরে পা দিয়েছে।অর্থাৎ হাফ সেঞ্চুরির দৌড় গোড়ায়। কিন্তু ৪৪- বছর পরও রাজ্যের মানুষ জানেন না তদানীন্তন সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গড়া দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্টে কি ছিলো? এই রাজ্যের বড় অংশের বাঙালি ভুলেই গিয়েছে দীনেশ সিং কমিশনের কথা। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। রক্ত পিপাসুরা বিনা বিচারে পাড় পেয়ে গিয়েছে। বাঙালি হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যেও আজও কেউ কেউ রাজ্যের রাজনৈতিক দল গুলির মাথায় বসে আছে।
১৯৮০ সালের জুনের দাঙ্গার পর কমিউনিস্টরা এই রাজ্যে শাসন করেছে সিংহ ভাগ সময়। মাঝে পাঁচ বছর মসনদে ছিলো কংগ্রেস।আবার জোট সঙ্গী ছিলো বাঙালি হত্যার ষড়যন্ত্রকারী জনজাতি ভিত্তিক দল টিইউজেএস।অন্তত একথাই বলছে ইতিহাস। এখন ক্ষমতায় ভারতীয় জনতা পার্টি। মান্দাই গণ হত্যার ৪৪- বছর পরও দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্ট আনা হয় নি জন সন্মুখে। কাদের স্বার্থে ? কোন গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্টে? কেউ জানেন না।

জনজাতি ভোট ব্যাংকের স্বার্থে কমিউনিস্টরা দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্ট চেপে যায়। ৮৮- তে কংগ্রেস জোট সরকার একই ভূমিকা পালন করে।এবং হালের বিজেপিও স্থাপন করেছে জনজাতি তোষণের দৃষ্টান্ত। ৮০- জুন মাসে রাজ্যে জাতির দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। ৬ থেকে ৮ জুন গোটা রাজ্যে চলছিল বাঙালি নিধন যজ্ঞ। মান্দাই গণ হত্যার এক মাস পর অর্থাৎ ৮০-র, ৮ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গণ হত্যার রহস্য উন্মোচনে গঠন করেছিলো দীনেশ সিং কমিশন। সবচেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা, দাঙ্গার পর এই কমিশনের কথা ভুলেই গিয়েছিল তদানীন্তন কমিউনিস্ট সরকার। না, আসলে ইচ্ছা করেই তারা ভুলে যাওয়ার ভান করেছিলো।

আমরা কেন একথা বলছি? তার পেছনেও কারণ আছে। দাঙ্গার ছয় বছরের মাথায় রাজ্য সভায় দীনেশ সিং কমিশনের হাল হকিকত নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তৎকালীন সময়ে রাজ্যের কমিউনিস্ট নারায়ন কর। প্রতিবেদনের সঙ্গে সেটে দেওয়া হয়েছে এই সমস্ত তথ্য।

স্থান : রাজ্যসভা
সেশান নম্বর: ১৩৯
তারিখ: ১৪ আগস্ট,১৯৮৬
টাইটেল: Dinesh Singh commission riot in Tripura
প্রশ্ন পত্রের নম্বর: ২১৪০
প্রশ্ন দাতা: নারায়ণ কর, সাংসদ, রাজ্যসভা
উত্তর দাতা: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ
পেজ নম্বর: ৭৩ থেকে ৭৪
মন্ত্রক: স্বরাষ্ট্র

রাজ্যের তদানীন্তন সাংসদ নারায়ন কর রাজ্য সভায় দীনেশ সিং কমিশন নিয়েও কি প্রশ্ন করেছিলেন ? এবং উত্তরে কি বলেছিলেন তদানীন্তন সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতি মন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক —

প্রশ্ন :নারায়ন কর:
(a) whethe, the Central Government had ‘appointed Dinesh Singh Commission to find the causes of riots that took place in Tripura, in June, 1980;
উত্তর: গোলাম নবী আজাদ
(a) The Government of India had constituted Dinesh Singh Committee in July, 1980 to suggest measures for speedy restoration of normalcy, relief and rehabilitation of the riot victims and to bring about harmonious rel’ation, among the different sections of the population in Tripura.
প্রশ্ন: নারায়ন কর
(b)whether the said Commission has submitted its report, if so, when;
উত্তর: গোলাম নবী আজাদ
(b) The Committee submitted its Report on 7-8-1980.
প্রশ্ন: নারায়ন কর
(c) what are the salient points of the said report including recommendations, if any;
and
(d) what action was taken for the implementation of the recommendations?
উত্তর: গোলাম নবী আজাদ
(c) and (d) A copy of the Report of Dinesh Singh Committee- was laid on the Table of the House on 14th August, 1980, The recommendations were com municated to the State Government and all concerned authorities for necessary action. The Government is a’ive to the need for accelerated development of Tripur& and is taking necessary action in thi, direction

পরিষ্কার করে বললে তৎকালীন ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ সাংসদ নারায়ন করের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,
ভারত সরকার ১৯৮০- র জুলাই মাসে দীনেশ সিং কমিশন গঠন করেছিল। তাতে ত্রিপুরার জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশের মধ্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দ্রুত ব্যবস্থা করে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা।

১৯৮০ – র ৭ আগস্ট দীনেশ সিং কমিশন তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্টের অনুলিপি ১৯৮০তে’ ই হাউসের টেবিলেও রাখা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল রাজ্য সরকার এবং সমস্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ত্রিপুরা সরকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সচেষ্ট এবং নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছে।

১৯৮৬- র ১৪ আগস্টের পর দীনেশ সিং কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে কমিউনিস্ট সরকারের দণ্ড মুন্ডের কর্তারা একটি শব্দও খরচ করেন নি। এই অবস্থা ছিল তৎকালীন সময়ের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। তারা তো করবেই না। কারণ পাহাড়ের আসন পেতে কংগ্রেস বরাবর নির্ভরশীল ছিল জনজাতি ভিত্তিক দল গুলির উপর। পাহাড় রাজনীতির জন্য টিইউজেএস – আইএনপিটি – আইপিএফটি ছিলো কংগ্রেসের প্রাণ ভোমরা।

হালে বিজেপিও দীনেশ সিং কমিশন নিয়ে নীরবতা পালন করছে।কারণ তারাও যে,পাহাড়ে কংগ্রেসের মতই জনজাতি ভিত্তিক দল তিপ্রামথার উপর নির্ভরশীল ।তাহলে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?

আর রাজ্যের আরাম প্রিয় বাঙালি আছে মাছ – ভাত নিয়ে। রক্ত স্রোতও বাঙালি জাতির আড়-মোরা ভাঙতে পারবে না। সত্যিই তারা আজও বঙ্কিম চন্দ্রের বাবু শ্রেণীর বাঙালি।