তাঁকে নিয়ে হয়েছিল হিন্দি সিনেমা “রাজি”।

কাহিনীর ক্লাইম্যাক্স শুরু ১৯৬৯ সালে। তৎকালীন সময়ে সহমত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। হঠাৎ একদিন সহমতের বাবা তাকে বাড়িতে ডেকে পাঠান। তখন সহমতের বাবা ছিলেন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। বাবা তাঁর মেয়ের কাছে শেষ ইচ্ছার কথা খুলে বলেন।কি ছিলো সহমতের বাবার শেষ ইচ্ছা?
* অভিজিত ঘোষ*
নাম: সহমত।
দেশ: ভারত।
জন্ম: জম্মু – কাশ্মীর।
জম্মু – কাশ্মীরের মেয়ে সহমত আজও কেন বিখ্যাত? কি করেছিলেন তিনি?তাঁকে নিয়ে হয়েছিল হিন্দি সিনেমা “রাজি”। এই সিনেমায় সহমতের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী আলিয়া ভাট।
পাঞ্জাবের উপন্যাসিক হরিন্দর সিং সিক্কার উপন্যাস ‘কলিং সহমত’- র প্রাপ্ত গল্প অনুযায়ী, জম্মু কাশ্মীরের তনয়া সহমতের বাবা ছিলেন ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস অর্থাৎ ” র” এজেন্ট। তিনি ‘ র ‘ হয়ে গুপ্তচর বৃত্তির কাজ করতেন। ব্যবসায়িক সূত্রে সহমতের পিতা নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন পাকিস্তানে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান সেনা ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই- র অনেক গোপন তথ্য নিয়ে আসতেন ওপার থেকে। এবং প্রাপ্ত তথ্য তিনি উগলে দিতেন ভারতীয় সেনার কাছে। ১৯৬৫- সালের ভারত – পাকিস্তান যুদ্ধে সহমতের বাবা জীবন ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাক সেনাকে পরাভূত করতে পেরেছে ভারতীয় সেনা।

সহমতের বাবার শেষ ইচ্ছা কি ছিলো?
কাহিনীর ক্লাইম্যাক্স শুরু ১৯৬৯ সালে। তৎকালীন সময়ে সহমত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। হঠাৎ একদিন সহমতের বাবা তাকে বাড়িতে ডেকে পাঠান। তখন সহমতের বাবা ছিলেন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। বাবা তাঁর মেয়ের কাছে শেষ ইচ্ছার কথা খুলে বলেন।কি ছিলো সহমতের বাবার শেষ ইচ্ছা?সহমতের বাবার স্বপ্ন ছিলো তাঁর মেয়েও দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে। তাই তিনি মেয়েকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। এবং মৃত্যুর শয্যায় শায়িত থেকে সহমতের বাবার মেয়েকে বলেছিলেন এটাই নাকি তার শেষ ইচ্ছা।”
বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করাই হয়ে যায় সহমতের “মিশন”।
বাবার কথা অমান্য করতে পারেননি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সহমত। বরং বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করাই হয়ে যায় সহমতের “মিশন”। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে সহমত নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সহমত নিজেও নিয়মিত পাকিস্তানের আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন এবং ওপারের বিভিন্ন তথ্য তিনি নিয়ে এসে তুলে দেন ভারতীয় সেনা ও ‘র’ হাতে।

পরবর্তীতে ৭১- র যুদ্ধে সহমত নামের ২০ বছরের এই মেয়েটিই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
১৯৭০ – র মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু হয়ে যায় ভারত পাকিস্তানের দ্বিতীয় যুদ্ধের আবহ। ১৯৭১- সালে ভারত – পাকিস্তান সরাসরি লিপ্ত হয়ে যায় যুদ্ধে। পরবর্তীতে ৭১- র যুদ্ধে সহমত নামের ২০ বছরের এই মেয়েটিই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এবং ভারতকে যুদ্ধে জয়ী হয়ে পালন করেন মূখ্য ভূমিকা।দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সহমতের শখ ছিলো শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং বেহালা বাজানো।নিয়মিত চর্চাও করতেন। কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনায় দাড়ি টেনে চলে আসেন কাশ্মীরে। শুরু করেন ‘র’ গুপ্তচর বৃত্তির কাজ।

১৯৭১-র ভারত- পাকিস্তানের আকাশে তখন যুদ্ধের ঘনঘটা। এই সময় ভারতীয় সেনার কাছে প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিকল্পনার তথ্য জানা। কিন্তু কি করে তা সম্ভব হবে? তখনই ভারতীয় সেনার নজরে আসে সহমত।
ভারতীয় সেনার মিশনকে সফল করতে সুন্দরী সহমত তাঁর প্রেমের জালে ফেলে দেন পাকিস্তানি সেনার শীর্ষ আধিকারিক ইকবাল সৈয়দকে।
যুদ্ধ সংক্রান্ত পাকিস্তানি সেনার সমস্ত পরিকল্পনার তথ্য আনার দায়িত্ব বর্তায় সহমতের উপর। সহমত মাথা পেতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতীয় সেনার মিশনকে সফল করতে সুন্দরী সহমত তাঁর প্রেমের জালে ফেলে দেন পাকিস্তানি সেনার শীর্ষ আধিকারিক ইকবাল সৈয়দকে। এরপর তাঁকে বিয়ে করেন। এবং করেন সংসার।ইকবালের বাবাও ছিলেন পাক সেনার একজন ব্রিগেডিয়ার। তাঁর নাম ছিলো পারভেজ সৈয়দ।ভারতীয় সেনা সহমতকে নির্দেশ দিয়েছিল, তাঁকে শুনতে হবে পাক সেনা কর্মকর্তাদের কথোপকথন। এই তথ্য মোর্স কোডের মাধ্যমে জরুরি বার্তা পাঠাতে হবে। তার জন্য অবশ্যই সহমতকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল।
সহমত খুব অল্প সময়েই তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবং তিনি ঢুকে যান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অলিন্দে। নাচ, গানে দক্ষ থাকাই সহমতকে পাক সেনার স্কুলে চাকরি দেওয়া হয়। এর ফলে পাক সেনার গোপন তথ্য চলে আসে সহমতের হাতের মুঠোতে।
পাক সেনার অলিন্দ থেকে পিএনএস গাজির অবস্থান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভারতীয় সেনা কাছে পাচার করেন সহমত।

১৯৭১ সাল ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সেই সময় ভারতের রণ তরী আইএনএস বিক্রান্তকে বঙ্গোপসাগরে নামানো হয়। এই খবর পৌঁছে যায় পাক শিবিরে। পাকিস্তান ভারতের আইএনএস বিক্রান্তকেজব্দ করতে বঙ্গোপসাগরের জলে নামিয়ে দেয় তাদের ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত সাবমেরিন পিএনএস গাজীকে। পাক সেনার অলিন্দ থেকে পিএনএস গাজির অবস্থান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভারতীয় সেনা কাছে পাচার করেন সহমত। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তৎক্ষণাৎ ভারতীয় নৌসেনা বিশাখাপত্তনম বন্দরের কাছে পাকিস্তানি সাবমেরিন গাজীকে ধ্বংস করে দেয়। এবং অনেকাংশেই নিশ্চিত করে যুদ্ধ জয়।

দেশের স্বার্থে সহমত তাঁর স্বামীকেও হত্যা করতে বাধ্য হন।
ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র এজেন্ট সহমতের কার্যকলাপে সন্দেহ হয় তার শ্বশুরবাড়ি র ঘনিষ্ঠ আব্দুল নামে এক ব্যক্তির। সহমত বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আব্দুলকে ট্রাকের চাপায় পিষে দিয়ে হত্যা করেন। সহমতের পাক সেনা আধিকারিক স্বামী ইকবাল সৈয়দ সত্য ঘটনাটি জানতে পারেন। তখন দেশের স্বার্থে তিনি স্বামীকেও হত্যা করেন।
এই সময় গর্ভবতী ছিলেন সহমত। শেষে তিনি নিরাপদে সীমান্ত টপকে চলে আসেন ভারতে। বাদবাকি শেষ জীবন তিনি কাটিয়ে দেন পাঞ্জাবের মালেরকোটলায়। ২০১৮ সালে সহমতের মৃত্যু হয়। আজও গোপন রাখা হয়েছে এই মহীয়সী নারী সহমতের আসল পরিচয়। তবে যখনই ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়, তখনই দেশের মানুষের মনে ভেসে উঠে মহীয়সী নারী সহমতের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের উপাখ্যান।
#Indo- pak#war#1971#Indian female#sehmat#inside#story #JM