রাজ্য বিধানসভার আলামত অনুযায়ী, কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপাধ্যক্ষ রাম প্রসাদ পাল বিধানসভার একই সেশানে একাধিক স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ জারি করেছেন। বিধানসভার আইন পর্যালোচনা করে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এক সেশানে একাধিক স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ জারি করা যায় না। যদি বিধানসভার কোনো সদস্য এক সেশনে একাধিক স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগের নোটিশ জারি করে থাকেন তাহলে সবগুলিই ” গুরুত্বহীন” ! অর্থাৎ আইনের কাছে ধোপে টিকবে না।
গণতন্ত্রের ঢোল বাজিয়ে নেতা – মন্ত্রী গাইছেন সুখের গান,
শাসন ত্রাসে আরেক নেতা কাড়ছে সংবাদ মাধ্যমের ঘুম।
ক্ষমতা লাভের দর্প দ্বন্দ্বে আজ রাজ্যটাকেই করছে গরম।
উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে নাইতো নেতা – মন্ত্রীর শরম।
।প্রতীকী ছবি।
কবির কবিতার পংক্তিগুলি আজকের দিনে রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। রাজ্যে দীর্ঘ বাম জামানার শেষ লগ্নে কমিউনিস্ট নেতা – মন্ত্রীদের মুখাবয়বেও ভেসে উঠেছিল অহংকার – দম্ভের একই ক্যানভাস। তখন অনেকেই বলতেন অশান্তির নেকড়েগুলি কেন করছে রাজ্য শাসন?
টয়লেট পেপার থেকে চোঙ্গা পত্রিকা, বাজারি চ্যানেল নানান বিশেষনে রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমকে বিশেষিত করতেন কমিউনিস্ট নেতা – মন্ত্রীরা।
বাম জামানার শেষ পাঁচ বছর ( ২০১৩ থেকে ২০১৮) কমিউনিস্ট নেতারা চোখে দেখতেন সর্ষে ফুল! তারা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতেন। তাই তো রাজ্যের সংবাদ পত্র, টিভি চ্যানেল গুলির রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই করতেন আদ্য শ্রাদ্ধ। তালিকায় সঙ্গে অবশ্যই ছিলেন নেতা – মন্ত্রীর “পিয়ারে”র আমলা সকল। টয়লেট পেপার থেকে চোঙ্গা পত্রিকা, বাজারি চ্যানেল নানান বিশেষনে রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমকে বিশেষিত করতেন কমিউনিস্ট নেতা – মন্ত্রীরা। অন্যদিকে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের উপর ‘অগাধ শ্রদ্ধা’ ( সময় ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত) বিরোধী শিবিরে থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি ।
কমিউনিস্ট নেতা – মন্ত্রীদের মতোই ‘ শাসক ‘ নামক যন্ত্রের উপর বসে বিজেপির নেতা – মন্ত্রীরাও এখন ভয়ংকরী হয়ে উঠেছেন।
তখন বিজেপির সমস্ত স্তরের নেতাদের কাছে রাজ্যের সংবাদ মাধ্যম, সম্পাদক, সাংবাদিকরা ছিলো পরম বন্ধু। আর আজকের দিনে কথিত “সাংবাদিক বান্ধব” সরকারের নেতা – মন্ত্রীদের কাছে সাংবাদিকরা চক্ষুশূল। এই সংক্রান্ত দৃষ্টান্ত গোটা রাজ্যে তালিকা তৈরী করেও শেষ হবে না। কারণ কমিউনিস্ট নেতা – মন্ত্রীদের মতোই ‘ শাসক ‘ নামক যন্ত্রের উপর বসে বিজেপির নেতা – মন্ত্রীরাও এখন ভয়ংকরী হয়ে উঠেছেন।রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান শাসক দলের নেতা – মন্ত্রীরা তাদের ভয়ংকরী উঠার ছাপ রেখেছেন।
সম্প্রতি রাজ্যের প্রভাতী কাগজ গুলিতে প্রায়শই ভেসে উঠছে একটি শব্দ – যার পোশাকি নাম ” প্রিভিলেইজ নোটিশ (Privilege Notice)।
সম্প্রতি রাজ্যের প্রভাতী কাগজ গুলিতে প্রায়শই ভেসে উঠছে একটি শব্দ – যার পোশাকি নাম ” প্রিভিলেইজ নোটিশ (Privilege Notice)। এই শব্দ মূলত সংসদীয় বা আইনি প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলায় তর্জমা করলে হয় “স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ”। রাজ্য বিধানসভার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রাম প্রসাদ পাল রাজ্যের প্রথম সারির তিনটি সংবাদ পত্রের তিনজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ” দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। সংশ্লিষ্ট সংবাদ পত্র গুলিতে প্রকাশিত খবর তাঁর অধিকার বা সুযোগ- সুবিধা লঙ্ঘিত করেছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ দিয়েছেন। অন্তত পবিত্র বিধানসভার আইন একথাই বলছে।
রাজ্য বিধানসভার আলামত অনুযায়ী, কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপাধ্যক্ষ রাম প্রসাদ পাল বিধানসভার একই সেশানে একাধিক স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ জারি করেছেন। বিধানসভার আইন পর্যালোচনা করে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এক সেশানে একাধিক স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ জারি করা যায় না। যদি বিধানসভার কোনো সদস্য এক সেশনে একাধিক স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগের নোটিশ জারি করে থাকেন তাহলে সবগুলিই ” গুরুত্বহীন” ! অর্থাৎ আইনের কাছে ধোপে টিকবে না।
।ফাইল ছবি।
আইন বিশেষজ্ঞদের কথায়, বিধানসভার এই আইন অনুযায়ী রাজ্যের তিন সম্পাদকের বিরুদ্ধে উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পালের আনা স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ গুলিও নাকি মলিন কলাপাতার মতো হয়ে যাবে। এই জন্যই কি উপাধ্যক্ষ’ র স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশের প্রেক্ষিতে তিন সম্পাদকের দেওয়া চিঠির প্রেক্ষিতে কোনো সাড়া দিচ্ছেন না রাজ্য বিধানসভার সচিব? বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে চলছে জোর চর্চা।
রাজ্যের সু – শাসনে ( কথিত) গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রধানদের বিরুদ্ধে গণ হারে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ কেন?
বিজেপি সরকারের বর্তমান প্রধান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা থেকে শুরু করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সহ অধিকাংশ নেতা – মন্ত্রী নিজেদের ‘সাংবাদিক বান্ধব ‘ সরকারের প্রতিনিধি বলে জাহির করে থাকেন। তাহলে রাজ্যের সু – শাসনে ( কথিত) গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রধানদের বিরুদ্ধে গণ হারে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ কেন? রাজ্যের মানুষের জিজ্ঞাসা, তাহলে কি বিজেপি সরকারের উপাধ্যক্ষ রাম প্রসাদ পাল নিজের সম্পর্কে সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না? তিনিও কি পূর্বতন বাম সরকারের নেতা – মন্ত্রীদের ‘কার্বন কপি ‘ ? কমিউনিস্টদের মতো অহঙ্কার – দম্ভের আত্মতুষ্টিতে কি তিনিও ভুগছেন? যদি এমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমিউনিস্টদের লাল দুর্গের পতনের ক্যানভাসটিও উপাধ্যক্ষ রাম প্রসাদ পালকে মনে রাখতে হবে। অন্যথায় বাড়তে পারে বিড়ম্বনা!
বাম জামানায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শহিদ চৌধুরি রাজ্যের প্রথম সারির এক সংবাদ পত্রের সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, তা ধোপে টেকে নি।আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী মামুন মিয়া কাণ্ডে শহিদ চৌধুরীকে চার বছরের জন্য মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছিলো।
রাজ্য বিধানসভার তথ্য অনুযায়ী, বাম জামানায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শহিদ চৌধুরি রাজ্যের প্রথম সারির এক সংবাদ পত্রের সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, তা ধোপে টেকে নি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী মামুন মিয়া কাণ্ডে শহিদ চৌধুরীকে চার বছরের জন্য মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছিলো। তাই বলা যায়, ইতিহাস বড়ই ‘নিষ্ঠুর ‘। বাস্তব অর্থে গণতন্ত্রের ঢোল বাজিয়ে নেতা – মন্ত্রীরা সুখের গান গাইলেও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে রাজ্যের সংবাদ মাধ্যম। দড়ির বাঁধন ছিঁড়ে গেলেই কিন্তু সর্বনাশ! এটাই চিরন্তর সত্য।
।প্রতীকী ছবি।
সংবাদ মাধ্যমের চুটি চেপে না ধরে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর ( নেতা – মন্ত্রীদের নিয়ে) ভাল করে বিচার বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে বিজেপি সরকার ও সরকারের কান্ডারীদের ভুলটা কোথায়?
।প্রতীকী ছবি।
তাই সংবাদ মাধ্যমের চুটি চেপে না ধরে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর ( নেতা – মন্ত্রীদের নিয়ে) ভাল করে বিচার বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে বিজেপি সরকার ও সরকারের কান্ডারীদের ভুলটা কোথায়? তাহলে আক্ষরিক অর্থেই শাসক দল বিজেপির নেতা – মন্ত্রী – বিধায়কদের জন্য মঙ্গল হবে।বলছেন, রাজ্য রাজনীতি নিয়ে চর্চা করা প্রাজ্ঞ লোকজন। তখন আর উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিতে হবে না।