পুলিশ প্রশাসনের ভাষ্য, “শুক্রবার দুপুরে জিবিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তড়িতাহত কলেজ ছাত্র পরমেশ্বর রিয়াংয়ের। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা গন্ডাছড়া মহকুমার জনজাতি অংশের মানুষ তোষের আগুনের মতো জ্বলে উঠে। রাতে বাঙালি গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে শুরু করে হামল – হুজ্জুতি।”…

।।নিহত কলেজ ছাত্র পরমেশ্বর রিয়াং।(ছবি – নিজস্ব)।।

রহস্যজনক ভাবে শুক্রবার দুপুরে গন্ডাছড়া মহকুমা
_________________________________________

সদর বাজার, নারায়ণপুর চৌমুহনি বাজার এবং
_________________________________________
গ্রামীণ হাট হিসাবে পরিচিত মনোরঞ্জন দাস পাড়ার
__________________________________________

বাজারটিও বন্ধ হয়ে যায়। _______________________

ডেস্ক রিপোর্টার, আগরতলা।।
                নিরীহ গ্রামবাসীদের বাড়ি ঘরে হামলা।মারধর,ভাঙচুর, লুটপাট,অগ্নিসংযোগ। আতঙ্ক গ্রস্থ গ্রামবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে গহন অরণ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। হামলাকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ ছুঁড়েছে টিয়ার গ্যাস । শূন্যে ছুঁড়েছে গুলি। তারপরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে হিংসার আগুন। আগুনের লেলিহান শিখা লাফিয়ে লাফিয়ে বিস্তার করছে এক গ্রাম থেকে অপর গ্রামে। ক্রমান্বয়ে এই সমস্ত ঘটনা ঘটে ধলাই জেলার সীমান্ত মহকুমা গন্ডাছড়াতে।শুক্রবার দিনভর গোটা গণ্ডাছড়া ছিল  থমথমে। রাত বিরাতেই শুরু হয় নির্বিচারে হামলা-হুজ্জতি। ঘটনার নেপথ্যে জনজাতি সম্প্রদায়ের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের মৃত্যু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গোটা গন্ডাছড়ায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু তারপরও উত্তেজনা হ্রাস করতে ব্যর্থ পুলিশ। অভিযোগ, জনজাতি অংশের লোকজন রুদ্র মূর্তি ধারণ করে ঝাপিয়ে পড়ছে মহকুমার বাঙালি মহল্লা গুলিতে।

।গন্ডাছড়ায় সাম্প্রদায়িক আগুনের লেলিহান শিখা।(ছবি – নিজস্ব)

স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য , গত একপক্ষ কাল আগে মহকুমার লক্ষীপুর এডিসি ভিলেজের ত্রিশকার্ড এলাকার অন্তর্গত ডিগ্রী কলেজ লাগোয়া ত্রিপুরা ক্রিকেট এসোশিয়েশনের গন্ডাছড়া ক্রিকেট মাঠে আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মেলাতে সামান্য ঘটনা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর যুবকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় । এই সময় পরমেশ্বর রিয়াং নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র তার বিপক্ষ গোষ্ঠীর যুবকদের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছিল মেলা প্রাঙ্গণে থাকা বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের উপর। সঙ্গে সঙ্গেই   তড়িতাহত হয়েছিল পরমেশ্বর।উপস্থিত দমকল বাহিনীর কর্মীরা তৎক্ষণাৎ পরমেশ্বরকে নিয়ে গিয়েছিল গন্ডাছড়া হাসপাতালে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় পাঠানো হয়েছিল আগরতলার জিবি হাসপাতালে। এই ঘটনার পর গন্ডাছড়া থানার পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছিলো। এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রাখার অভিযোগে চার অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারও করেছিলো ।বর্তমানে তারা জেল হাজতে।

।।পরমেশ্বর কাণ্ডে ধৃত চার যুবক।।

জনজাতি সম্প্রদায়ের উত্তেজিত জনতা বাঙালিদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সময় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিও ছুড়েছে। তাদের বুলেট নিক্ষেপের শব্দ শুনতে পেয়েছে আতঙ্কিত লোকজন।

।।বিজ্ঞাপণ।।

বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য বলছে, “খুব পরিকল্পিত ভাবেই রাতের হিংসাত্মক ঘটনা সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল শুক্রবার দুপুর থেকেই ।” পরমেশ্বর রিয়াংয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে গন্ডাছড়াকে। রহস্যজনক ভাবে শুক্রবার দুপুরে গন্ডাছড়া মহকুমা সদর বাজার, নারায়ণপুর চৌমুহনি বাজার এবং গ্রামীণ হাট হিসাবে পরিচিত মনোরঞ্জন দাস পাড়ার বাজারটিও বন্ধ হয়ে যায় ।শুধু তাই নয়, নাম ডেকে ছুটি দেওয়া হয় মহকুমার ডিগ্রি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের।

আরো খবর পড়ুন

https://janatarmashal.com/tripura-news-new-game-in-hill/

।।গন্ডাছড়া ডিগ্রী কলেজ (ছবি নিজস্ব)।।

ছুটি দেওয়া হয় গন্ডাছড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, কবিগুরু স্মৃতি বিদ্যালয় সহ দুইটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়। দুপুর নাগাদ মহকুমা শাসকের পক্ষে মাইকযোগে ১৪৪ ধারা গোটা মহকুমায় বলবৎ করা হয়। অভিযোগ, এলাকার পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় স্থানীয় নেতৃত্ব। ভয়ে গণ্ডাছড়া বাজার সহ আশপাশের ব্যবসায়ীরাও তাদের দোকানের ঝাঁপ বুজিয়ে দিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরেন।

।।বিজ্ঞাপণ।।

“গোটা বিষয় নিয়ে প্রদ্যুৎ কথা বলেছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সঙ্গে। পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। একই সঙ্গে প্রদ্যুৎ কিশোর উত্তেজিত জনজাতি অংশের লোকজনকে শান্তি বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।”

।।বিজ্ঞাপণ।।

রাতে পরমেশ্বর রিয়াংয়ের মৃতদেহ গন্ডাছড়াতে পৌঁছতেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্থানীয় জনজাতি অংশের উত্তেজিত লোকজন সম্মিলিতভাবে বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে আসে। বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে হামলা চালায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গোটা মহকুমাতে অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতাযেন করে প্রশাসন।কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। এক সময় পরিস্থিতি পুলিশ নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হামলাকারীরা বাঙালি মহল্লায় প্রবেশ করে ধারাবাহিক ভাবে  বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্বিচারে করে ভাঙচুর ও লুটপাট। ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ গ্রামবাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।তারা আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে। রাতভর চলে জঘন্য হামলার খেলা। হামলাকারীরা একের পর এক নাশকতামূলক কাজকর্ম চালিয়ে গেলেও পুলিশ ছিল অসহায়ের মতো। তারও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিল বাঙালি মহল্লার বাড়িঘরে জ্বলে উঠা আগুনের লেলিহান শিখা।

।।গন্ডাছড়ার রাজপথে হামলাকারীরা (ছবি- নিজস্ব)।।

রাতে গন্ডাছড়া ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনজাতিদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন। প্রদ্যুৎ জনজাতিদের উদ্দেশ্যে বলেন,  “গোটা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সঙ্গে। পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। একই সঙ্গে প্রদ্যুৎ কিশোর উত্তেজিত জনজাতি অংশের লোকজনকে শান্তি বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।” তবে প্রদ্যুৎ বকলমে জনজাতি অংশের মানুষের সংঘটিত অপরাধকে সমর্থনই করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা।

।।প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন (ফাইল ছবি)।।

গভীর রাতের খবর অনুযায়ী,  উত্তেজিত জনতাকে পুলিশ কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি।পুলিশ ধাপে ধাপে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। অসমর্থিত সূত্রের খবর, জনজাতি সম্প্রদায়ের উত্তেজিত জনতা বাঙালিদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সময় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিও ছুড়েছে। তাদের বুলেট নিক্ষেপের শব্দ শুনতে পেয়েছে আতঙ্কিত লোকজন। জনমনে আতঙ্কের বহর আরো গভীর করার জন্যই কুচক্রীরা তাদের বেআইনি অস্ত্র থেকে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে।যদিও এই ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি পুলিশ প্রশাসন। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে তৎপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা :মানিক সাহা। তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ।
        

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *