জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু ডিসিএম অফিসের কর্মীরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এই নিয়েই নাকি ঝামেলা শুরু। ঘুষ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হওয়াতেই অফিসের কর্মীরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।তখন সেও পাল্টা গলা চড়াও করে। এই সময়ে ডিসিএম ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরা অফিসে নাকি ছিলেনই না।
ডেস্ক রিপোর্টার, ১৭ জানুয়ারি।। সদর ডিসিএমকে হত্যার চেষ্টা ।থানায় মামলা।এখনো পলাতক অভিযুক্তরা। এই প্লট – ই এখন উঠে এসেছে চর্চায়। আসলে ঘটনার নেপথ্যে কি ছিলো? সত্যি কি ডিসিএমকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে? নাকি, সদর ডিসিএম অফিসের কর্মীরা চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না পেয়ে ডিসিএমকে বোকা বানিয়ে থানায় দায়ের করেছে মামলা? উঠছে এই সংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন।তার পেছনেও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ঘটনা গত ১০ জানুয়ারি। আগরতলার পশ্চিম থানায় ডিসিএম ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরার করা অভিযোগ অনুযায়ী, এদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ হুমায়ূন কবীর ও তপন সিনহা নামে দুই ব্যক্তি গিয়েছিলেন তাদের একটি জমির সীমানা নির্ধারণ (Demarcation) ইস্যু নিয়ে। কথাবার্তা চলাকালীন হুমায়ুন ও তপন ডিসিএমের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে যায়।শেষে ডিসিএমের অফিসের ফাইল – পত্র ফেলে দেয়।ভাঙচুর করে জিনিস পত্র। এরা নাকি জাতিবিদ্বেষী মন্তব্যও করে। এই ঘটনার পর ডিসিএম বিষয়টি জানিয়েছেন জেলা শাসকে। এরপর তিনি পশ্চিম থানায় হুমায়ুন ও তপনের বিরুদ্ধে মামলা (( ০৬/২৫) দায়ের করেন। পুলিশ বিএনএস – ৩২৯,১৩২,৩৫১,৩২৪ এবং ৩(৫)-(৩)-১ টিআরএস/এসসি/এসটি আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করে।
ঘুষ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হওয়াতেই অফিসের কর্মীরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
ডিসিএম অফিসের খবর অনুযায়ী, এদিন ঘটনার সময় ডিসিএম ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরা অফিসেই ছিলেন না। তিনি ছিলেন জেলা শাসক বিশাল কুমারের রুমে,একটি গুরুত্ব পূর্ণ বৈঠকে। মূল ঘটনা হয়েছে ডিসিএম অফিসের সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে।জানিয়েছেন, এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত হুমায়ূন কবীর। তার কথায়, জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু ডিসিএম অফিসের কর্মীরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এই নিয়েই নাকি ঝামেলা শুরু। ঘুষ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হওয়াতেই অফিসের কর্মীরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।তখন সেও পাল্টা গলা চড়াও করে। এই সময়ে ডিসিএম ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরা অফিসে নাকি ছিলেনই না।
হুমায়ূনের বক্তব্য, ডিসিএম ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরা অফিসে আসার পর তাঁকে বিষয়টি।জানানো হয়। এবং লম্পট কর্মীরা ডিসিএমকে ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা করেন। তাতেই ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরা ক্ষেপে গিয়ে থানায় মামলা করেন। পুরো ঘটনা সাজানো।
হুমায়ূনের ভাষায়, ঘটনার পর ডিসিএম অফিসের কর্মীরা বিষয়টি জানান রামনগরের মন্ডল নেতা গৌতম ঘোষ ওরফে রাধুকে। সঙ্গে সঙ্গে গৌতম চলে আসেন ডিসিএম অফিসে। এবং অফিসের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।অভিযোগ, রাধুর লেখা স্ক্রিপ্ট সরকারি কর্মীরা ডিসিএমের কাছে বমি করেন। সেই সেই অনুযায়ী তৈরি হয় থানায় জমা করার অভিযোগ পত্র। প্রশ্ন উঠছে, এই ঘটনার পর ডিসিএম অফিসের কর্মীরা বিজেপি নেতা গৌতম ঘোষ ওরফে রাধুকে কেন ডাকলো? হুমায়ূন ও তার সঙ্গী তপন যদি ডিসিএম অফিসে ভাঙচুর ও ফাইলপত্র ফেলে দেওয়ার ঘটনা সংঘটিত করেই থাকে তাহলে কেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ডাকা হয়নি? তা না করে বিজেপি নেতাকে কেন তলব করা হলো? পুরো ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে জমি ব্যবসার র্যাকেট।সঙ্গে জড়িত বিজেপি নেতা গৌতম সহ ডিসিএম অফিসের কর্মীরা।
ডিসিএমকে তাঁর চেম্বারে অপদস্ত করে, ভাঙচুর করে, ফাইলপত্র ছুড়ে ফেলে দিয়ে কাউর পক্ষে পালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।কারণ ডিসিএম অফিসে থাকে নিরাপত্তা কর্মী।তাছাড়া আছে ডিসিএম অফিসে কর্মরত কর্মীরা। আছে সিসি ক্যামেরা। এতো কিছুর পর কিভাবে পালিয়ে যাবে হামলাকারী হুমায়ূন ও তার সঙ্গী তপন? আর এই জায়গাতেই জনমনে খটকা লাগছে ডিসিএমের অভিযোগ পত্রের স্ক্রিপ্ট নিয়ে।
ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সকাল সাড়ে ১১টায় । মামলা দায়ের করা হয়েছে বিকাল সাড়ে চারটায়। কেন?
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সকাল সাড়ে ১১টায় । মামলা দায়ের করা হয়েছে বিকাল সাড়ে চারটায়। তাহলে এতো দেরি কেন? আসলে অন্তরালে থাকা বিজেপি নেতা ও সরকারি কর্মচারীদের অঙ্গুলি হেলনেই বোকা বনে গেলেন ডিসিএম ব্রজেন্দ্র ত্রিপুরা। অভিযোগ, রামনগরের মন্ডল নেতা গৌতম ঘোষ ইদানিং লুটা – ঘটি নিয়ে তোলা বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেছেন। হুমায়ূনদের কাছেও দাবি করেছিল টাকা। তা না দেওয়াতেই নেতাবাবু ছিলেন তক্কে তক্কে। কাকতালীয় ভাবে ডিসিএম অফিসের কর্মীদের সঙ্গে হুমায়ূনের বাক বিতন্ডা হয়। এই ঘটনাকে সুন্দর ভাবে “ক্যাশ ” করেন রাম নগরের মন্ডল নেতা গৌতম ঘোষ। রামনগর অঞ্চলে কান পাতলেই গৌতমের এই উপাখ্যান শুনা যায়।