দুই দফায় বরাদ্দ কৃত ছয় লক্ষের অধিক টাকার জন্য তিনি কোনো পারচেজ কমিটি গঠন করেন নি প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায়চৌধুরী।
।।সেকেরকোট স্কুল।।
ইঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান অনুযায়ী জিনিসপত্রও ক্রয় করা হয় নি। নিম্ন মানের জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার তার প্ল্যানে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ক্লাসরুমগুলির সিলিংয়ে ১২ এম এম ইনসুলেটিং বোর্ড লাগানোর জন্য। কিন্তু স্কুলের সিলিংয়ে ৪এম এম প্লাই উড লাগিয়ে ১২এম এম বোর্ডের বিল হাতিয়ে নিয়েছেন।
।।স্কুলের সিলিং ভেঙ্গে চৌচির।।
ডেস্ক রিপোর্টার, ২৩অক্টোবর। দুর্নীতির অক্টোপাসে নিমজ্জিত শহর দক্ষিণের সেকেরকোট স্কুল। দুর্নীতির মধ্য মনি খোদ স্কুলের অভিভাবক প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরী। চলতি বছর ক্লাস রুম সহ অন্যান্য মেরামতির জন্য দুই ধাপে স্কুলকে মোট ছয় লক্ষ টাকার অধিক অনুদান দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি টাকা খরচ করতে হলে টেন্ডার আহ্বান করা আবশ্যক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরী সরকারি নিয়মকে কোনো তোয়াক্কা করেন নি।তিনি বিনা টেন্ডারে কাজ করিয়ে নিয়েছেন। তা থেকে প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশ্য স্পষ্ট।
২৫ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান পেলেন গঠন করতে হয় লোয়ার পারচেজ কমিটি।
রাজ্য সরকারের টেন্ডারের নিয়মে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি সংস্থা পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান পেলে কাজ শুরুর আগে হায়ার পারচেজ কমিটি গঠন করতে হয়। এবং ২৫ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান পেলেন গঠন করতে হয় লোয়ার পারচেজ কমিটি। স্কুল কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে দুই ধাপে ছয় লক্ষ টাকার অধিক অনুদান পেয়েছে। সে অর্থে পৃথক পৃথক ভাবে দুই দফায় বরাদ্দ কৃত অর্থের জন্য লোয়ার পারচেজ কমিটি গঠন করা আবশ্যক ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের। ঘুরিয়ে বললে প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরীর।
পারচেজ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্রয় করা হয় জিনিস পত্র। এবং পরবর্তী সময়ে কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট কাজের বিল এবং পারচেজ কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা জমা করতে হয় ট্রেজারিতে। অথচ সরকারি এই নিয়মকে মলিন কলাপাতা বানিয়ে নিজের মন মতো কাজ করিয়ে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরী।
।।বিজ্ঞাপন।।
দুই দফায় বরাদ্দকৃত ছয় লক্ষের অধিক টাকার জন্য তিনি কোনো পারচেজ কমিটি গঠন করেননি। স্কুল পরিচালন কমিটির কয়েক জনকে হাতে নিয়ে নিজের পছন্দ মতো দোকান থেকে জিনিস পত্র ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ। এই কারণেই ইঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান অনুযায়ী জিনিসপত্রও ক্রয় করা হয় নি। নিম্ন মানের জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার তার প্ল্যানে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ক্লাসরুমগুলির সিলিংয়ে ১২ এম এম ইনসুলেটিং বোর্ড লাগানোর জন্য। কিন্তু স্কুলের সিলিংয়ে ৪এম এম প্লাই উড লাগিয়ে ১২এম এম বোর্ডের বিল হাতিয়ে নিয়েছেন। এই কারণেই নির্মাণ কাজের কয়েক মাসের মধ্যে ক্লাস রুম গুলির সিলিং ভেঙ্গে গিয়েছে।এবং বৃষ্টি হলেই জলে সাগর হয়ে ক্লাস রুম গুলি।
।।প্রতীকী ছবি।।
প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায়চৌধুরী কাগজে কলমে ১৪৬ ব্যাগ সিমেন্ট ক্রয় করেছেন কেন?
ইঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান অনুযায়ী স্কুলের নির্মাণ কাজে মোট সিমেন্টের প্রয়োজন ছিল প্রায় ১০ ব্যাগের কাছাকাছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায়চৌধুরী কাগজে কলমে ১৪৬ ব্যাগ সিমেন্ট ক্রয় করেছেন। তবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে ৫০টি বস্তা। দ্বিতীয় ধাপে আরও পঞ্চাশ ।এবং তৃতীয় ধাপে ৪৬ টি। স্কুলের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১০ বস্তার। তাহলে ১৪৬ বস্তা কেন? স্কুল চত্বরে কান পাতলেই শোনা যায়, তিনি কাগজে কলমে ১৪৬ বস্তা আনলেও বাস্তবে এনেছেন ১০টি। বাদবাকি গুলি নাকি ভুয়ো বিল করেছেন।
।।প্রতীকী ছবি।।
সন্তোষ কুমার রায়চৌধুরী ২৫০০০ টাকা করে মোট টাকাকে ছয় সাত ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, অনুদান পাওয়া অর্থ কখনো ভাগ করে কাজ করা যায় নি।কিন্তু সন্তোষ কুমার রায়চৌধুরী ২৫০০০ টাকা করে মোট টাকাকে ছয়, সাত ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন। কেন? রাজ্য সরকারের নিয়মাবলীতে বলা হয়েছে, যদি কাজের স্বার্থে কর্তৃপক্ষ বিলগুলিকে ছোট ছোট করতেই হয়,তাহলে সংস্থার প্রধানকে এই মর্মে পৃথক পৃথকভাবে ডিক্লিয়ারেশন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এবং এই ডিক্লিয়ারেশনের কপি জমা করতে হয় ট্রেজারিতে।
রাজ্য সরকারের ট্রেজারিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, সেকেরকোট স্কুল এই নির্মাণ কাজের বিলের সঙ্গে কোনো ডিক্লেয়ারেশন জমা করে নি। এই সমস্ত অনিয়ম থেকে স্পষ্ট প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায়চৌধুরী নিজের কায়েমি স্বার্থের জন্য সরকারি টাকার আদ্যা শ্রাদ্ধ করেছেন। তাঁর এই সংক্রান্ত দুর্নীতির আরো বহু তথ্য রয়েছে আমাদের কাছে। তাই সাধু সাবধান।।