সূর্য মোহন দাসের অসহায় স্ত্রী তার স্বামীকে না পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দারস্ত হন গণ্ডাছড়া থানার পুলিশের কাছে। পুলিশ থানায় মিসিং ডায়েরি রুজু করে। বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় লোকজনকে। পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন সহ স্থানীয় লোকজন সূর্য মোহন দাসের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি সূর্য মোহন দাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।

ডেস্ক রিপোর্টার,১৫ অক্টোবর।।
          ” তাজা ফুলদল ঝরে পড়েছে, মরে গেছে
           কোন্ কালে, কারণ তারা এখন অসহায়।”

— কবি সুনির্মল বসু’র “আমরা বাঙালি” কবিতার এই পংক্তি আজকের দিনে একে বারেই প্রাসঙ্গিক। কবি এখানে তাজা ফুলদল বলতে বুঝিয়েছেন,আজকের দিনের বাঙালিকে। তারা এখন ঝরে পড়েছে ।এবং অসহায় জাতি। মরে গেছে অনেক কাল আগেই।  কেন আজকের দিনে কবি সুনির্মল বসুর কবিতার এই পংক্তি প্রাসঙ্গিক? তার ব্যাখ্যা আমরা তুলে ধরবো এই প্রতিবেদনে।

নাম: সূর্য মোহন দাস

বাড়ি: হরিপুর, ১২ঘাট

মহকুমা :গণ্ডাছাড়া

পেশা: কাঠ মিস্ত্রি

।কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন নিখোঁজ সূর্য মোহনের স্ত্রী।

অভাব অনটনের এই সংসারের অর্থ উপার্জনের ভর কেন্দ্রে ছিলেন সূর্য মোহন নিজেই। 

সূর্য মোহন দাস, এক অসহায় দরিদ্র বাঙালি। দুই মেয়ে ও এক ছেলে সহ স্ত্রীকে নিয়ে তার পাঁচজনের সংসার। অভাব অনটনের এই সংসারের অর্থ উপার্জনের ভর কেন্দ্রে ছিলেন সূর্য মোহন নিজেই।   রহস্য জনক ভাবে গত ৯ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ সূর্য মোহন দাস। কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলেন বাড়ি থেকে। কিন্তু আর ফিরে আসেন নি তাঁর স্বপ্নের কুড়ের ঘরে।
           সূর্য মোহন দাসের অসহায় স্ত্রী তার স্বামীকে না পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দ্বারস্থ হন গণ্ডাছড়া থানার পুলিশের কাছে। পুলিশ থানায় মিসিং ডায়েরি রুজু করে। বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় লোকজনকে। পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন সহ স্থানীয় লোকজন সূর্য মোহন দাসের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি সূর্য মোহন দাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।

সূর্যের অসহায় পরিবারের পাশে স্থানীয় বাঙালি সমাজ।

সূর্য মোহনের নিখোঁজের পর নানান আশঙ্কার দানা বাঁধছে গোটা গণ্ডাছড়াতে।

নিখোঁজ হত দরিদ্র সূর্য মোহন আপাদ মস্তক একজন নিপাট বাঙালি। তাই সূর্য মোহনের নিখোঁজের পর নানান আশঙ্কার দানা বাঁধছে গোটা গণ্ডাছড়াতে। অবশ্যই নিখোঁজ সূর্য মোহনের অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই অঞ্চলের সমাজ সেবী তপন চৌধুরী। তিনি সূর্য মোহনের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছেন কিছু খাদ্য সামগ্রী।করেছেন আর্থিক সাহায্য। সূর্য মোহনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন, ” যে কোনো মূল্যে প্রশাসনের সহায়তায়  সূর্য মোহনকে খুঁজে বের করবেন”।

গন্ডাছড়া মহকুমা বরাবর অতি সংবেদনশীল। বিশেষ করে জাতিগত ভাবে।

গন্ডাছড়া মহকুমা বরাবর অতি সংবেদনশীল। বিশেষ করে জাতিগত ভাবে। কেন,না গত বছরের ১২ জুলাই রাতে গণ্ডাছড়ার বাঙালি বাড়ি – ঘরে হামলা, অগ্নি সংযোগ ও ছিনতাই সহ মারধরের ঘটনা সংগঠিত করেছিল হায়নার দল। তারা সবাই ছিল স্থানীয় জনজাতি গোষ্ঠীর। স্বাভাবিক ভাবেই এরপর থেকে আজও নানান ভাবে গণ্ডাছড়ায় বসবাসকারী ত্রিশ শতাংশ বাঙালিদের পড়তে হচ্ছে হুমকির মুখে। আজ পর্যন্ত গত বছরের ১২ জুলাইয়ের ঘটনায় জড়িত কুশীলবদের একজনকেও গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। স্থানীয় বাঙালি সমাজের স্ব – ঘোষিত সমাজসেবীরাও থানায় মামলা করার সাহস করেন নি। বা রাজধানীতে এসে এই ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনো আওয়াজ করেন নি। তারা সহ সর্বোপরি গণ্ডাছড়া ও আশপাশ অঞ্চলের বাঙালিদের মুখে কুলুপ এঁটে রাখার কারণেই আজ আরও খাদের কিনারায় সীমান্ত মহকুমার বাঙালিরা। সূর্য মোহনের নিখোঁজ নিয়ে মুখ খুলতে লজ্জা পাচ্ছেন রাজধানীর বাবু শ্রেণীর বাঙালিরাও।

২৪- র ১২ জুলাইয়ের ধংস লীলার দৃশ্য।

বাস্তব অর্থে গোটা দেশেই বাঙালি আজ অথর্ব।রাজ্যের বাঙালি সমাজের বাবু শ্রেণী তো জানেই না তাদের রুট কোথায়? বা জেনেও না বুঝার ভান ধরে থাকে তারা। এই কারণেই প্রদ্যুৎ কিশোর সহ জনজাতি সম্প্রদায়ের সিকি – আধুলি, হাফ প্যান্ট পড়া নেতাদের বাঙালিকে ” বিদেশি” তকমা দিতে ঠোঁটে আটকায় নি। অথচ বাঙালিরাই ব্রিটিশের হাত থেকে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আজ এই বাঙালি বড়ই অসহায়। একেবারে তাজা ফুল গাছ থেকে ঝরে পড়ার মতো। অবশ্যই কবি সুনির্মল বসুর কথায়, অনেক কাল আগেই মরে গেছে বাঙালি। এখন শুধু কঙ্কাল সার।

তাই তো কবি লিখেছেন –
“যৌবন-ভরা মৌ-বনে আজ মৌ নাই এক কড়া,
তিক্ত রসেতে সিক্ত পরান, রিক্ততা আগাগোড়া।
বুকে নাই আশা, মুখে নাই ভাষা, নাহি সে পূর্ব খ্যাতি,গৌরবময় বাঙালী এখন মুমূর্মু এক জাতি।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *