আগরতলা, ২৫ জুন।।
দেশের জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই ১৯৭৫ সালে ২৫ জুন ভারতে জারি করা হয়েছিল জরুরি অবস্থা। সে সময় দেশের শাসকদের সরকারে থাকার বৈধতা নিয়েই নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছিল। ১৯৭৫ সালে জারি করা এই জরুরি অবস্থা ভারতের ইতিহাসে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে। বুধবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১ নম্বর হলে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে জারি করা জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ১৯৭৫ সালে জারি করা জরুরি অবস্থার বিভীষিকাময় অধ্যায় সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের জানা প্রয়োজন। তবেই বর্তমান সরকারকে তারা সেই সময়ের সরকারের সঙ্গে তুলনা করতে পারবে ও ভালোবাসতে শিখবে। নিজের অধিকার সম্পর্কে সজাগ হতে পারবে। তিনি বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। নাগরিক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, সংস্কৃতি জগৎ সহ সর্বক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল সেই সময়। বিনাবিচারে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ক্ষমতার অপব্যবহারের কি চিত্র হতে পারে তা দেশের মানুষ প্রতি পদে পদে উপলব্ধি করেছিলেন। সেই সময় যারা যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন এবং যারা এর প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের অবদানের কথা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এবং আগামী প্রজন্মের কাছে সেই সময়ের ইতিহাস তুলে ধরাই ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালনের মূল উদ্দেশ্য।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সেই কালো দিনগুলির স্মৃতিচারণ করে অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশব্যাপী চলছিল গণতন্ত্র তথা মৌলিক অধিকার লুণ্ঠনের পর্ব।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে এবং ২০১৮ সালে রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে জানে। এই সরকার গণতন্ত্রমুখী সরকার। সংবিধানকে কিভাবে সম্মান করতে হয় সে বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার অবগত। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে জনকল্যাণে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও প্রশাসনিক সংস্কার সংবিধানকে সম্মান জানিয়ে ও রক্ষা করেই করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার মানুষকে বুঝিয়েছে কিভাবে সংবিধানকে সম্মান দিতে হয়। ভারতের সংবিধান পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধান। জরুরি অবস্থা চলাকালীন দেশের প্রতিটি মানুষ ছিল বিব্রত। দেশের মধ্যে ছিল অস্থির অবস্থা। কিন্তু ২১ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর গণতন্ত্রই জয়লাভ করে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে জরুরি অবস্থা তিনবার জারি করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে, ১৯৭১ সালে এবং ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৫ সালে এমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছিল। তাই ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ইতিহাসের পাতায় বিতর্কিত হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব বলেন, নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই প্রকৃত ইতিহাস জানা দরকার। জরুরি অবস্থার সময়ের ভারতের দিনগুলির সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। জরুরি অবস্থার সময় মানুষের বাক স্বাধীনতা, চলার অধিকার, সংস্কৃতি চর্চার অধিকার ইত্যাদি সবকিছুতেই ছিল তখনকার দেশের শাসক নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ। সরকারের ক্ষমতা তথা সরকারি ক্ষেত্রকে কিভাবে অপব্যবহার করা হয়েছিল ভারতের মানুষ তা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই নবীন প্রজন্মকে সেই ইতিহাস সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন। এতেই মানুষ সংবিধান রক্ষায় এবং নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য বলেন, ১৯৭৫ সালে জারি করা জরুরি অবস্থার এবছর ৫০ বছর পূর্তি। জরুরি অবস্থার দিনগুলি ছিল ভারতীয়দের কাছে অভিশপ্ত সময়। দেশের ক্ষমতাকে দখল করে রাখার জন্য শাসক নেতৃত্বের আস্ফালন ভারতবাসী লক্ষ্য করেছিল। পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভার সাংসদ কৃতী দেবী দেবর্বমণ বলেন, জরুরি অবস্থা ছিল ভারতের ইতিহাসে অন্যতম লজ্জাজনক অধ্যায়। ক্ষমতা দখলের জন্য সংবিধানকে তখন অবমাননা করা হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংবিধান রক্ষায় কাজ করে চলেছেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, বরিষ্ঠ সাংবাদিক স্রোতরঞ্জন খিসা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য্য বলেন, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ছিল দেশের জন্য একটি অন্ধকারময় সময়। ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ শুধুমাত্র ঐ সময়কে স্মরণ করা নয় বরং আমাদের সংবিধানকে পর্যালোচনা করার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করে তোলা, পাশাপাশি সংবিধান সম্পর্কে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার প্রয়াস। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ সকল অতিথিগণ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের বারান্দায় আয়োজিত এই বিষয় সম্পর্কিত এক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ও পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, প্রদর্শনীটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।